Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান ভাবনা’ নিয়ে ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী

তাঁর কাছে বিজ্ঞান ছিল সংস্কৃতিরই একটা অঙ্গ। তাই বিজ্ঞানের মাঝে লুকিয়ে থাকা সেই রসকে বারংবার চিনে নিতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর জীবন দর্শনে বার বার প্রতিফলিত হয়েছে বিজ্ঞান মনস্কতা। রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান বিষয়ক নানা চিন্তা ভাবনাকে নিয়েই বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামে শনিবার থেকে শুরু হল ‘রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান ভাবনা’ শীর্ষক এক বিশেষ ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী। এ দিন প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা সাংসদ সুগত বসু। লিখছেন বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য।

চলছে প্রদর্শনী।—নিজস্ব চিত্র।

চলছে প্রদর্শনী।—নিজস্ব চিত্র।

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৫ ২২:২৭
Share: Save:

তাঁর কাছে বিজ্ঞান ছিল সংস্কৃতিরই একটা অঙ্গ। তাই বিজ্ঞানের মাঝে লুকিয়ে থাকা সেই রসকে বারংবার চিনে নিতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর জীবন দর্শনে বার বার প্রতিফলিত হয়েছে বিজ্ঞান মনস্কতা। রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান বিষয়ক নানা চিন্তা ভাবনাকে নিয়েই বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামে শনিবার থেকে শুরু হল ‘রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান ভাবনা’ শীর্ষক এক বিশেষ ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী। এ দিন প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা সাংসদ সুগত বসু।

ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজিয়ামস (এনসিএসএম) আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে ছবি ও পাণ্ডুলিপির প্রতিরূপ, আলোকচিত্র এবং বেশ কিছু প্রদর্শ তুলে ধরা হয়েছে। আছে স্ক্রিনে ভিসুয়্যাল ডিসপ্লে এবং কিয়স্কও। এনসিএসএম কলকাতার কিউরেটর মানস বাগচী বলেন, ‘‘শুধু বৈজ্ঞানিক তথ্য বা ভাবনা নয়, এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে বিজ্ঞান সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের নানা চিন্তা ভাবনা এবং ধারণা।’’

ছেলেবেলায় রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাজীবন কোনও স্কুলের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এই অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই তাঁর জীবনে বিজ্ঞানচেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিল। ডালহৌসি পাহাড়ে তাঁর বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে বালক রবীন্দ্রনাথের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে হাতেখড়ি হয়। শিশু মনে এর গভীর প্রভাব পড়ে। শোনা যায়, বালক রবীন্দ্রনাথের গৃহশিক্ষক সীতানাথ ঘোষ তাঁকে ‘তাপের পরিবহণ’ কিংবা ‘পরিচলনের’ মতো ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হাতেকলমে শিখিয়েছিলেন।

ছেলেবেলায় স্কুলের বাঁধাধরা পড়াশোনা ভাল না লাগলেও শান্তিনিকেতনে তাঁর নিজের স্কুলে তিনি বেশ অন্য ধরনের মজার ক্লাসের প্রচলন করেছিলেন। সেখানে জিনিসের ওজন কিংবা এক জায়গা থেকে আর এক জায়গার দূরত্ব কত তা আন্দাজ করে খাতায় লিখতে হত, তার পরে মেপে দেখতে হত আসল আর আন্দাজে কতটা তফাৎ হল। শান্তিনিকেতনে তাঁর পাঠভবনে ছোটদের বিজ্ঞান শিক্ষা ছিল এমনটাই জীবন্ত।

সে কালে স্কুলগুলিতে প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠক্রমে বিজ্ঞানের পঠন-পাঠন প্রচলিত ছিল না। রবীন্দ্রনাথই শান্তিনিকেতনের স্কুলে প্রাথমিক স্তরে বিজ্ঞান পঠন-পাঠনের প্রচলন করেন। কেননা, বিজ্ঞান ছাড়া শিক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যায় বলে তিনি মনে করতেন। আর মাতৃভাষায় বিজ্ঞান পঠন-পাঠনের প্রচলন হলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন, এমনটাই ছিল তাঁর উপলব্ধি।

তাঁর এই চিন্তাধারা পরবর্তী কালে ‘লোকশিক্ষা গ্রন্থমালা’-র মাধ্যমে প্রকাশ পায়। শুধু তাই নয়, ইংরেজি বহু বৈজ্ঞানিক শব্দের বাংলা পরিভাষা তাঁরই সৃষ্টি।

রবীন্দ্রনাথ জীবনের নানা সময়ে পৃথিবী-বিখ্যাত বহু বৈজ্ঞানিকের সংস্পর্শে এসেছিলেন। যেমন, ১৯৩০-এর জুনে জেনিভায় রবীন্দ্রনাথ এবং এইচ জি ওয়েল্স-এর মধ্যে সাক্ষাৎ হয়। তেমনই আইনস্টাইনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বেশ কয়েক বার দেখা হয়েছিল।

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে জগদীশচন্দ্র বসুর অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একে অপরের কাজকর্ম সম্পর্কে আগ্রহী ও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। জগদীশচন্দ্র তাঁর কাজের নানা বিষয়ে রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখতেন। শোনা যায়, এক বার বিদেশে থাকাকালীন গবেষণার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য জগদীশচন্দ্রের বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন হয়। রবীন্দ্রনাথ সেই সময় ত্রিপুরার রাজার সাহায্য নিয়ে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

অন্য দিকে, রাশিবিজ্ঞানের অপরিহার্যতার কথা মাথায় রেখে রবীন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণায় প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ১৯৩১-এ ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। এমনকী, রাশিবিজ্ঞান শব্দটিও তার সৃষ্টি।

প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ১৮ মে পর্যন্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE