Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাংলায় শুধু সিন্ডিকেট, তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রী

মেদিনীপুরের সভা থেকে তৃণমূলকে আক্রমণ মোদীর। ছবি: পিটিআই।

মেদিনীপুরের সভা থেকে তৃণমূলকে আক্রমণ মোদীর। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪০
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটের পরে প্রথম বার এসেছিলেন শান্তিনিকেতনে। সে বার রাজ্য বিজেপি নেতাদের কথা শুনেছিলেন শুধু। এ বার মেদিনীপুরে এসে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ শানালেন নরেন্দ্র মোদী। পঞ্চায়েত ভোটে গণতন্ত্রের হত্যা এবং রাজ্যে শাসক দলের মদতে সিন্ডিকেটরাজ— প্রধানমন্ত্রীর নিশানায় মূলত এই দুই বিষয়ই।

উপলক্ষ ছিল ‘কৃষক কল্যাণ’ সমাবেশ। অতীতের যে কোনও কেন্দ্রীয় সরকারের চেয়ে তাঁর সরকার কৃষকদের কল্যাণে কত পদক্ষেপ করেছে, তার সবিস্তার বিবরণ সোমবার পেশ করেছেন মোদী। কুইন্টাল প্রতি ধান বা পাটে সহায়ক মূল্য কী ভাবে বাড়়ানো হয়েছে, ভবিষ্যতে উৎপাদনের দেড়় গুণ ক্রয়মূল্য করার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথাও বলেছেন। যদিও রাজ্যে রাজ্যে বেড়়ে চলা কৃষক আত্মহত্যা বা কৃষিঋণ মকুবের প্রসঙ্গ মোদীর মুখে শোনা যায়নি। কৃষক প্রসঙ্গ সেরেই মোদী ঢুকে পড়়েন এ রাজ্যের রাজনীতিতে এবং বলেন, ‘‘বাংলার হাল কী, খুব ভাল ভাবে জানি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে গণতন্ত্র রক্তাক্ত হয়েছে। হিংসা, খুন, আতঙ্কের মধ্যেও যাঁরা বিজেপিকে সমর্থন করেছেন, তাঁদের অভিনন্দন জানাই।’’

ভিড়়ে-ঠাসা সমাবেশে মোদীর অভিযোগ, ‘‘বাংলায় একটা হাসপাতাল বা স্কুল করতে, নতুন ব্যবসা শুরু করতে, কারখানা করতে— সব কিছুতেই সিন্ডিকেটের অনুমোদন লাগে! ইট, বালি, পাথর কোথা থেকে কী ভাবে কিনবেন, সব সিন্ডিকেট ঠিক করে দেবে। বড়় শিল্পপতি থেকে ছোট ব্যবসায়ী, কেউ শান্তিতে নেই।’’ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন অবশ্য পত্রপাঠ জবাব দিয়েছেন, বিজেপিই এখন গণধোলাই, ধর্মোন্মাদনা, অত্যাচারের সিন্ডিকেট। তাঁদের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘নানা কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে আপনারা আমাদের হয়রান করতে পারেন কিন্তু কোনও সিন্ডিকেটের সামনে আমরা মাথা নোয়াব না!’’

ঘটনাচক্রে, মোদী যে দিন বাংলায়, সে দিনই সারদা তদন্তে সুপ্রিম কোর্টে মুখ পুড়়েছে সিবিআইয়ের। যা নিয়ে সরব হয়েছে সিপিএম। মোদী অবশ্য সারদা বা নারদ প্রসঙ্গে যাননি এ দিন। শুধু বলেছেন, ‘‘চিটফান্ড থেকে আলুর বন্ড, সবই সিন্ডিকেটের হাতে এখন।’’ আর এ সবের সূত্র ধরেই টেনে এনেছেন, ‘‘বাংলায় কেউ যদি মনে করে, ক্ষমতার মোহে সব কিছু চূর্ণ করে দেবে, তারা দেওয়ালের লিখন পড়়ে নিক! অত্যাচারের শাসন কখনও স্থায়ী হয় না।’’ ত্রিপুরায় বাম জমানার অবসানের কথা মনে করিয়েছেন। সেই সঙ্গেই প্রশ্ন তুলেছেন, এ রাজ্যকে ৩৪ বছরের বাম শাসন থেকে মুক্ত করে পরিবর্তন আনা হয়েছিল কি আরও অত্যাচার দেখার জন্য?

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আক্রমণ করলেও মোদী কিন্তু সরাসরি তৃণমূল বা তৃণমূল নেত্রীর নাম করেননি। শুধু শহর জুড়়ে মুখ্যমন্ত্রীর হোর্ডিং-পোস্টারের কথা এনে কটাক্ষ করেছেন, ‘‘দিদিকে ধন্যবাদ, কাট আউট থেকে তিনিও আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন!তাঁকে ধন্যবাদ!’’ তৃণমূল আবার পাল্টা বলেছে, ২১ জুলাইয়ের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রচার চলছে। বিজেপিই বরং কোথাও কোথাও পোস্টার ছিঁড়়েছে।

জঙ্গলমহলের গোয়ালতোড়় বা শালবনি ঝেঁটিয়ে লোক এসেছিল এ দিন। হাওড়়া গ্রামীণ থেকেই এসেছিল দেড়়শোর বেশি বাস। বিজেপির দাবি, কয়েকটি জেলা মিলিয়ে পাঁচ লক্ষের বেশি জনসমাগম ছিল। পুলিশের হিসেবে, কলেজিয়েট মাঠে লোক ধরে ৮০ হাজার। যদিও দৃশ্যতই মাঠের বাইরেও লোক ছিল। তবে তাঁদের মধ্যে কৃষক কত শতাংশ, সেই হিসেব মেলানো দুষ্কর! তৃণমূলের দাবি, ঝাড়়খণ্ড, ওড়়িশা থেকে লোক এনে সভা ভরিয়ছে বিজেপি। পটনার নম্বরপ্লেট লাগানো গাড়়িও দেখা গিয়েছে। বিজেপির দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহেরা অবশ্য ভিন্ রাজ্য থেকে লোক আনার দাবি উড়়িয়ে দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Syndicate TMC BJP Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE