সহাবস্থান। শনিবার বার্নপুরের রাস্তায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
পূর্বনির্ধারিত বৈঠক হল। এবং সেই বৈঠকে প্রত্যাশিত ভাবেই রাজ্যের ঘাড় থেকে ঋণের বোঝা নামানো এবং আর্থিক পাওনা আদায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে দরবার করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যের এই সব দাবিদাওয়ার কথা মন দিয়েই শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী। এবং তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে মোটের উপর খুশি মুখ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন তিনি। বৈঠকের পরে মমতা নিজে বলেন, ‘‘রাজস্ব আদায় ও সামাজিক ক্ষেত্রে আমাদের কাজের প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’’
সন্ধ্যায় নজরুল মঞ্চে দু’জনের দেখা হলেও বৈঠক হয় রাতে, রাজভবনে। সেখানে প্রথমে কেন্দ্রের দু’জন অফিসার ছিলেন। পরে অবশ্য তাঁরা চলে যান। এবং একান্তে বৈঠক করেন মোদী ও মমতা।
মোদী ক্ষমতায় আসার পর প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধং দেহি মনোভাব নিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু সম্প্রতি সেই মনোভাব ঝেড়ে ফেলে রাজ্যের দাবি আদায়ে দিল্লির কাছে দরবার শুরু করেছেন তিনি। শনিবারও তার অন্যথা হয়নি। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মুখোমুখি বসে বৈঠক করার তৎপরতাকে বিধানসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিরোধীরা। পুরভোটের আগেও দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন মমতা। তার পরে সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তে কিছুটা ঢিলেমি এসেছে বলে বিরোধীরা অভিযোগও করেছে। যদিও কেন্দ্রের বক্তব্য, সিবিআই তদন্ত তার মতোই এগোচ্ছে। এর সঙ্গে প্রশাসনিক আদানপ্রদানের কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপি নেতৃত্বও জানিয়ে দেন, রাজ্যে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঢিলেমির কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এ দিনের বৈঠক ঘিরেও বিজেপি-তৃণমূল সমঝোতা নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু করেছেন বিরোধীরা।
সেই সমঝোতা জল্পনাকে অবশ্য তৃণমূলের তরফে আমল দেওয়া হচ্ছে না। তৃণমূল নেতৃত্বের স্পষ্ট বক্তব্য, এ দিন রাতে রাজভবনে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সাত পাতার একটি দাবিপত্র তুলে দিয়েছেন মমতা। এত দিন তিনি দাবি করতেন, তিন বছরের জন্য সুদ-আসল নেওয়া স্থগিত রাখুক কেন্দ্র। সেখান থেকে সরে এসে এ দিন তা সম্পূর্ণ মকুবের দাবি করলেন মমতা। ২০১১ সালের মে মাসে তৃণমূল যখন ক্ষমতার আসে রাজ্যের ঘাড়ে তখন ২ লক্ষ কোটি টাকার ঋণের বোঝা। গত চার বছরে ঋণ ও সুদ বাবদ রাজ্যের কাছ থেকে ১ লক্ষ ২ হাজার কোটিরও বেশি টাকা কেন্দ্র কেটে নিয়েছে।
ক্ষমতায় এসে উত্তরাধিকার সূত্রে এই ঋণের বোঝা পেয়েছেন মমতা। সেটা কি মোদী এক কথায় মকুব করে দিতে পারেন? বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য, অর্থনৈতিক ভাবে তা করা সম্ভব নয়। কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া কটাক্ষের সুরে বলেছেন, ‘‘সুদ-ঋণ মকুব নিয়ে যে দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, তা কেন্দ্র মানে কি না, জানার অপেক্ষায় রইলাম!’’
রাজ্যের যে ১১টি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র, সেগুলি চালুরও দাবি তুলেছেন মমতা। রাতে রাজভবনে বৈঠকের আগে মোদী-মমতার এ দিন প্রথম সাক্ষাৎ হয় নজরুল মঞ্চে। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দু’জনে একই মঞ্চে বসে ছিলেন। নবান্ন সূত্রে বলা হয়েছে, নজরুল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী একান্তে কোনও আলোচনা হয়নি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও বলেন, ‘‘অনুষ্ঠান শুরুর কথা ছিল সন্ধ্যা ৬টায়। প্রধানমন্ত্রী সাড়ে পাঁচটা নাগাদ নজরুল মঞ্চে পৌঁছে ওঁর জন্য নির্ধারিত ঘরে ঢুকে গিয়েছিলেন। অন্য একটি ঘরে আমার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।’’ তাঁর কথা অনুযায়ী, সে ঘরে অন্য আরও অনেকে ছিলেন।
বিরোধীরা অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম টুইটারে লেখেন, ‘‘চুনাও সে পহলে কসাই কহেঙ্গে/ অব জো তুমকো পসন্দ হো ওহি বাত কহেঙ্গে/ তুম দিন কো অগর রাত কহো তো রাত কহেঙ্গে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy