পথে: দিল্লি যাওয়ার প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র
প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে আরএসএসে যোগ দিয়েছিলেন। জরুরি অবস্থায় জেলেও থাকতে হয়েছে মাস তিনেক। পরে জনতা পার্টির হয়ে ভোটেও লড়েন। বাইশ বছর আগে পথ দুর্ঘটনায় মৃত উলুবেড়িয়া গোয়ালবেড়িয়া গ্রামের সেই বিজেপি নেতা অরুণ প্রামাণিকের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানো হল প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে।
আমন্ত্রণ পেয়ে আপ্লুত অরুণবাবুর পরিবার। আবেগে কেঁদে ফেলেন অরুণবাবুর স্ত্রী সন্ধ্যা প্রামাণিক। তাঁর কথায়, ‘‘দলের জন্য অনেক ত্যাগ করেছিলেন। সেই সময় প্রকাশ্যে কেউ আরএসএস করতে পারত না। লুকিয়ে লুকিয়ে উনি সংগঠনের কাজ করেছেন। জরুরি অবস্থায় জেল খেটেছেন। ভেবেছিলাম স্বামীর অবদানের কথা দল ভুলে গিয়েছে। কিন্তু এতদিন পরেও যে তাঁর কথা মনে রেখে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তাতে আমাদের পরিবার গর্বিত।’’ শারীরিক অসুস্থতার জন্য সন্ধ্যা প্রামাণিক অবশ্য দিল্লি যেতে পারছেন না। যাচ্ছেন অরুণবাবুর ছোট ছেলে ও ভাইপো।
পেশায় শিক্ষক অরুণবাবু ১৯৬৮ সালে, ছাত্র অবস্থায় আরএসএসে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময় তিন মাস জেল খাটেন। ১৯৭৭ সালে উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্র থেকে জনতা পার্টির হয়ে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে জিততে পারেননি। ১৯৯৭ সালের ৩ জুলাই উলুবেড়িয়া ৬নং জাতীয় সড়কে এক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর।
চেঙ্গাইল শ্রীবিদ্যানিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন অরুণবাবু। তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মৃত্যুর সময় বড় ছেলে কৌশিক দ্বাদশ শ্রেণিতে, মেয়ে প্রীতিলতা নবম ও ছোট ছেলে কৌস্তভ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী বাগনানে একটি স্কুলে অশিক্ষক কর্মীর চাকরি পান। গোয়ালবেড়িয়ার বাড়ি ছেড়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে উঠে আসেন ফুলেশ্বরে। বছর তিনেক আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন সন্ধ্যা প্রামাণিক। বড় ছেলে এখন প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষক। ছোট ছেলে চাকরির চেষ্টা করছেন। মেয়ের বিয়ে হয়েছে।
বুধবার ফুলেশ্বরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন অরুণবাবুর ছোট ছেলে কৌস্তভ ও ভাইপো শেখর। আর স্বামীর ছবি কোলে বসে আছেন সন্ধ্যাদেবী। কৌস্তভ বলেন, ‘‘দু’দিন আগে বিজেপি নেতা দ্বিজেন অধিকারী বাড়িতে আসেন। পরিবারের দু’জনকে প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য বলেন। অবাক হয়ে গিয়েছিলাম দ্বিজেনবাবুর কথা শুনে। পরে রাজ্য বিজেপি দফতর থেকেও ফোন করা হয়। রাজধানী এক্সপ্রেসের দুটি টিকিটও পাঠানো হয়। কখনও ভাবিনি প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাব।’’
হাওড়া জেলা বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি এবং অরুণবাবুর এক সময়ের সহকর্মী নয়ন সিংহরায় বলেন, ‘‘অরুণ দলের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। দল তাঁর কথা মনে রেখেছে, এটাই বড় কথা। এতে দলের শ্রীবৃদ্ধি হবে।’’ হাওড়া গ্রামীণ জেলা বিজেপির সম্পাদক দ্বিজেন অধিকারী বলেন, ‘‘অতীতে যে নেতারা দলের জন্য কাজ করেছেন, তাঁদের কথা যে নতুন প্রজন্ম ভুলে যায়নি, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy