Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জগন্নাথ কি মন্ত্রী হচ্ছেন? জল্পনা তুঙ্গে

আজ, বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে যখন দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রিত্বের শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদী, এক ঝাঁক উজ্জ্বল মুখের ভিড়ে থাকবেন জগন্নাথও।

জগন্নাথ সরকারকে। ফাইল চিত্র

জগন্নাথ সরকারকে। ফাইল চিত্র

সম্রাট চন্দ 
রানাঘাট শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৯ ০৩:০০
Share: Save:

বিশ্বাসীরা বলেন, উপরওয়ালা যখন দেন, ‘ছপ্পর ফাড়কে’! এবং এখন নাকি বিজেপির জগন্নাথ সরকারকে দিচ্ছেন। চাই কী, শেষমেশ মন্ত্রিত্বও নাকি দিয়ে বসতে পারেন!

আজ, বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে যখন দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রিত্বের শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদী, এক ঝাঁক উজ্জ্বল মুখের ভিড়ে থাকবেন জগন্নাথও। যাঁর নাম দু’দিন আগে নদিয়াতেও বেশি লোক জানত না এবং তা সত্ত্বেও যিনি রানাঘাট কেন্দ্র থেকে দু’লাখেরও বেশি ভোটে জিত হাসিল করেছেন। এর পর কী? কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব? হোক না অন্তত প্রতিমন্ত্রীর পদই, তা-ই বা কম কী?

আপাতত তাই দিনরাত রাম-নাম জপছেন জগন্নাথের অনুগামীরা। দলে আর দলের বাইরে তাঁর বিরোধীরা হিসেব কষছে, জগন্নাথের এই হঠাৎ ফুলে-ফেঁপে ওঠায় তাঁদের বাড়া ভাতে কতটা ছাই পড়তে পারে।

তবে বিরোধীরাও বলছেন, গ্রহের যা ফের, তাতে এখন কোনও কিছুই জগন্নাথের মুঠোবন্দি হওয়া আশ্চর্যের নয়। ছিলেন দলের নদিয়া দক্ষিণ জেলা সাংগঠনিক সভাপতি মাত্র, তা-ও দলে বিরোধী গোষ্ঠীর দৌরাত্মে ওষ্ঠাগত। প্রথমে তো তাঁর প্রার্থী হওয়াই হচ্ছিল না। বিজেপির পছন্দের প্রার্থী, তরুণ চিকিৎসক মুকুটমণি অধিকারী আইনি প্যাঁচে আটকে যাওয়ায় শিকে ছেঁড়ে তাঁর। প্রচারে তৃণমূলের চেয়ে পিছিয়ে থেকেও নানা সমীকরণে জিতেছেন বিপুল ব্যবধানে, যা সম্ভবত তিনি নিজেও ভাবতে পারেননি। যদিও তার বড় পূর্বাভাস ছিল তাহে‌রপুরে মোদীর সভায় জনজোয়ার যা প্রধানমন্ত্রীর ফেসবুক পেজেও ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল। রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে এই প্রথম পদ্ম ফুটল। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, জগন্নাথকে পদ ও ক্ষমতা দিলে নদিয়া জুড়ে আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করার ক্ষেত্র পেয়ে যাবে বিজেপি। এবং সেটা তাদের অনেক দিনের লক্ষ্য।

ফুলিয়া বিদ্যামন্দিরের ক্রীড়াশিক্ষক জগন্নাথ সরকারের তাই এখন শিয়রে বৃহস্পতি, অন্তত তেমনটাই ধারণা তাঁর শিবিরের লোকজনের। তাঁর সঙ্গে দলের যোগ অনেক দিনেকর। ১৯৯২ সালে তিনি যোগ দেন আরএসএস-এ। সংগঠনের নদিয়া-মুর্শিদাবাদ বিভাগের কার্যবাহক বা সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন বছর দশেক। পরে আসেন বিজেপি-তে। ২০১৩ সালে বিজেপির অবিভক্ত জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১৭ সালে জেলা কমিটি দু’ভাগে ভাগ করে তাঁকে দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রত্যাশিত ভাবেই, রানাঘাটের প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম আলোচনায় ছিল। বহু টালবাহানার পরে মুকুটমণির নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ‘ললাটলিখন’ খণ্ডাবে কে!

আপাতত জগন্নাথের ‘কপালের জোর’ বিশ্বাস করেই তাই আশায় বুক বাঁধছেন বিজেপি নেতাকর্মীরা। মুখে অন্তত সকলেই তা-ই বলছেন, মনে যা-ই হোক। দলের উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার বলছেন, ‘‘জগন্নাথদা যদি মন্ত্রী হন, তার চেয়ে ভাল কিছু আর হতে পারে না। ওঁকে অনেক দিন ধরে চিনি। খুব ভাল মানুষ।’’ দলে জগন্নাথ-বিরোধী বলে পরিচিত, দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি দিব্যেন্দু ভৌমিক বলছেন, ‘‘আমাদের সাংসদ মোদীজির মন্ত্রীসভায় স্থান পেলে খুশি তো হবই।’’ মুকুটমণি বলেন, ‘‘জগন্নাথদা মন্ত্রী হলে মানুষ উপকৃত হবে।’’ সদ্য বিজেপির ধাঁচে নদিয়া জেলা তৃণমূলকেও উত্তর-দক্ষিণে ভেঙেছেন দলনেত্রী। জগন্নাথ মন্ত্রিত্ব পেলে অন্তত জেলার দক্ষিণে তৃণমূলের বিপদ আরও বাড়বে না? সদ্য দলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতির পদ পাওয়া বিধায়ক শঙ্কর সিংহ প্রায় মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, ‘‘ও সব নিয়ে আমরা ভাবছি না। কোনও প্রভাব পড়বে না।’’

ভাবতে না হলেই ভাল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jagannath Sarkar Narendra Modi Modi Cabinet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE