হাওড়া স্টেশনে মোদীর শপথগ্রহণে আমন্ত্রিত পরিবারের সদস্যরা।— নিজস্ব চিত্র।
পুরুলিয়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল ত্রিলোচন মাহাত, দুলাল কুমার ও শিশুপাল মাহাতকে। প্রধানমন্ত্রীর সভা থেকে বাসের ছাদে চড়ে ফেরার সময় গাছের ডাল লেগে মৃত্যু হয় কোচবিহারের প্রভাত মণ্ডলের। পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায় স্থানীয় নেতৃত্বের বৈঠক চলাকালীন হামলায় খুন হয়েছিলেন তরুণ বিজেপি কর্মী। কেউ খুন হয়েছিলেন, কারও দলীয় কর্মসূচিতে গিয়ে মৃত্যু— মোট ৫২ জনের পরিবারের সদস্যরা সামনে থেকে দেখবেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় বারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। কিন্তু কার্যত তাঁদের জন্যই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেটা শুনে আশ্চর্য ‘শহিদ’ পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের সিংহভাগেরই বক্তব্য, ‘উনি শহিদদের সম্মান করেন না’।
আমন্ত্রণ আগেই এসেছিল। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকে লোকসভা ভোট পর্যন্ত রাজ্যে যে সমস্ত বিজেপি কর্মী খুন হয়েছেন বা বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের দিল্লিতে মোদীর শপথগ্রহণে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করল বিজেপি। তার সঙ্গে ছিল ২০১৪ সালে বামনগাছিতে খুন হওয়া বিজেপি কর্মী সৌরভ চৌধুরীর এবং পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় নিহত জওয়ান হাওড়ার বাবলু সাঁতরার পরিবারের লোকজনও। মোট ৫২টি পরিবারের ৭০ জন সদস্য।
অনেকেই আগের দিন বুধবার কলকাতায় চলে এসেছিলেন। তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় রাজ্য বিজেপির তরফে। আবার বুধবার বাকিরা পৌঁছনোর পর দুপুর তিনটে নাগাদ নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়া স্টেশনে। সেখানেই মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করেন বিজেপি নেতৃত্ব। খাওয়াদাওয়া সেরে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ রওনা দিল রাজধানী। তাঁদের সঙ্গে গেলেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তুষারকান্তি ঘোষ।
আরও পড়ুন: ‘শহিদ’ পরিবারদের আমন্ত্রণের বিরোধিতায় সিদ্ধান্ত বদল, মোদীর শপথে যাচ্ছেন না মমতা
হাওড়া স্টেশনে সৌরভ চৌধুরীর দাদা সঞ্জীব চৌধুরী।— নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ঠিক ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎই সিদ্ধান্ত বদল। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, তিনি শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। কারণ? ওই অনুষ্ঠানে এই শহিদ পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে। ট্রেনে ওঠার আগেই সংবাদ মাধ্যমের কাছে তাঁরাও মুখ্যমন্ত্রীর না যাওয়ার খবর পান। শোনার পর সবাই কার্যত হতবাক।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির পোলিং এজেন্ট ছিলেন বামনগাছির সৌরভ চৌধুরী। ওই বুথে এগিয়ে ছিল বিজেপি। তার মধ্যেই এলাকায় সমাজবিরোধী কাজকর্মের প্রতিবাদ করায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুন করে বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা ভোটের এই পর্বে না হলেও সেই সৌরভ চৌধুরীর দাদা এবং বাবাও যাচ্ছেন শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানে। মুখ্যমন্ত্রীর না যাওয়ার কথা শুনে সৌরভের দাদা সঞ্জীবের অভিযোগ, ভাই খুন হওয়ার পর এখনও সুবিচার পাননি। নরেন্দ্র মোদী শপথগ্রহণে ডাকায় তাঁদের কৃতজ্ঞতার কথাও জানান সঞ্জীব। আর মুখ্যমন্ত্রীর না যাওয়ার কথা শুনে সঞ্জীবের প্রতিক্রিয়া: ‘‘উনি কখন কী বলেন, নিজেই জানেন না। কিছু দিন আগেই বলেছিলেন, আমার গদির দরকার নেই, গদিকে আমার দরকার। নিজেই গদি থেকে ইস্তফা দিলেন আবার নিজেই বসে রইলেন। ওঁর কথার কোনও মূল্য নেই। কাল বললেন যাবেন, আজ বলছেন শহিদ পরিবারের লোকজন যাচ্ছেন বলে অসুবিধা। ওঁর মুখোশটা খুলে গেল। উনি শহিদদের কতটা অসম্মান করেন। এই জন্যই বাংলার শহিদরা আজও সুবিচার পাননি।’’
আরও পড়ুন: মোদীর শপথ ঘিরে রাইসনা হিলসে সাজ সাজ রব, যাচ্ছেন সনিয়া-রাহুল
কার্যত আকাশ থেকে পড়লেন পুলওয়ামার শহিদ বাবলু সাঁতরার স্ত্রী মিতাও। মেয়ে এবং শাশুড়ির সঙ্গে তিনিও যাচ্ছেন দিল্লি। মুখ্যমন্ত্রী গেলে কি কিছু বলার ছিল? রাজধানী এক্সপ্রেসে ওঠার আগে বললেন, ‘‘আমাকে উনি বলেছিলেন, পরিবারের এক জনকে চাকরি দেবেন। এখনও চাকরি কিন্তু পাইনি। দিল্লিতে দেখা হলে নিশ্চয়ই সেই আবেদন আরও এক বার করতাম।’’
বাকিরা হয়তো নিজেদের কথা সেই ভাবে গুছিয়ে উঠতে পারলেন না। পুরুলিয়া বা কোচবিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা অনেকেই ক্ষোভ-বিষ্ময়ের বহিঃপ্রকাশ ভাষায় বলে বোঝাতে পারলেন না। তবে অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট, তাঁদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী সফর বাতিল করেছেন, এটা মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy