Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Local News

ভর্তি দুর্নীতি: সব দায় ঝেড়ে ফেললেন জয়া, সিলমোহর দিলেন পার্থ

তৃণমূল ভবনে বৈঠক শেষে জয়া বলেন, ‘‘সংগঠনের কোনও কর্মীর নাম যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়ায়, তা হলে তাঁকে নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ আর ভাববে না।’’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলেজে কলেজে তোলাবাজির ঘটনায়, বহিরাগতরাই প্রধান দোষী। কোনও মতেই দল তাদের সমর্থন করবে না।’’

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও টিএমসিপি রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও টিএমসিপি রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮ ১৯:২২
Share: Save:

ভর্তি দুর্নীতির সব দায় ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সংগঠনের কর্মীরা কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন, তোলাবাজি চালিয়েছে বহিরাগত এবং প্রাক্তনীরা— বললেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী জয়া দত্ত। সাংবাদিক বৈঠক করে সেই তত্ত্বে সিলমোহর দিয়ে দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মধ্য কলকাতার চারটি কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট এ দিন ভেঙে দিয়েছেন জয়া। আর পার্থ জানিয়েছেন, দুর্নীতি রুখতে নিয়ম বদলে ফেলেছে উচ্চশিক্ষা দফতর। এ বার থেকে অনলাইনেই ভর্তি হওয়া যাবে কলেজে, কাউন্সেলিং বা ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন নেই।

মধ্য কলকাতার কলেজগুলির তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতাদের নিয়ে সোমবার বৈঠক করেছিলেন জয়া দত্ত। মঙ্গলবার তিনি বৈঠকে বসেন দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল ছাত্র পরিষদকে নিয়ে। তৃণমূল ভবনে বৈঠক শেষে জয়া বলেন, ‘‘সংগঠনের কোনও কর্মীর নাম যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়ায়, তা হলে তাঁকে নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ আর ভাববে না।’’ যাঁদের নামে ইতিমধ্যেই তোলাবাজি বা পড়ুয়াদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের কি বহিষ্কার করা হচ্ছে সংগঠন থেকে? জয়া দত্ত স্পষ্ট করে এ বিষয়ে কিছু জানাননি। শুধু বলেছেন, ‘‘প্রশাসন পদক্ষেপ করছে।’’ দুর্নীতি রুখতে সাংগঠনিক স্তরে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? জয়া বলেন, ‘‘সংগঠনের কেউ এতে জড়িত নন। কলেজে ভর্তি হতে ইচ্ছুক পড়ুয়াদের কাছ থেকে যাঁরা টাকা তুলছেন, তাঁরা সকলেই বহিরাগত বা প্রাক্তনী। এঁরা সবাই রং বদলানো পাখি। যখন যারা ক্ষমতায় থাকে, এঁরা তখন তার সঙ্গে জুড়ে যান।’’

যে সব কলেজ পড়ুয়া তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা কেউ দুর্নীতিতে যুক্ত নন বলে জয়া এক দিকে দাবি করেছেন। অন্য দিকে, ভর্তি দুর্নীতির প্রেক্ষিতেই গুরুদাস কলেজ, সিটি কলেজ, আনন্দমোহন কলেজ এবং বিদ্যাসাগর কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ইউনিট তিনি ভেঙে দিয়েছেন। সংগঠনের কেউ যদি দুর্নীতিতে জড়িত না-ই থাকেন, তা হলে কেন চারটি কলেজে সংগঠনের ইউনিট ভেঙে দেওয়া হল? জয়ার জবাব, ‘‘ভর্তির সময়ে বহিরাগত তোলাবাজরা যাতে কলেজে ভিড় করতে বা টাকা তুলতে না পারেন, তা দেখাও তো কলেজ ইউনিটগুলিরই কর্তব্য। ওই চারটি কলেজে আমাদের কর্মীরা এই দুর্নীতি ঠেকাতে পারেননি। দায় তাঁদেরই নিতে হবে। তাই ইউনিট ভেঙে দিয়েছি।’’

সাংবাদিক বৈঠকে জয়া দত্ত। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: অনলাইন ভর্তি তো কী? টাকা কেমন ভাবে তুলতে হয় ‘দাদা’রা জানেন...

শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠেও এ দিন একই সুর শোনা গিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘কলেজে কলেজে তোলাবাজির ঘটনায়, বহিরাগতরাই প্রধান দোষী। কোনও মতেই দল তাদের সমর্থন করবে না।’’

পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং জয়া দত্ত যে দিন দাবি করছেন যে, ভর্তি সংক্রান্ত দুর্নীতিতে বহিরাগতরা যুক্ত, সে দিনই কিন্তু ভর্তির জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগে মধ্য কলকাতা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে শেখ জসিমুদ্দিন নামে এক পড়ুয়াকে। মধ্য কলকাতা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সুরেন্দ্রনাথ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া জসিমুদ্দিন হাওড়ার পাঁচলা এলাকার বাসিন্দা এক ছাত্রীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন।

আরও পড়ুন: ভর্তি-প্রক্রিয়া দেখতে আচমকা আশুতোষ কলেজে মুখ্যমন্ত্রী

ভর্তি দুর্নীতির জেরে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অবিলম্বে কিছু বদল আনা হচ্ছে বলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘মেধার ভিত্তিতে প্রতিটা কলেজেই তালিকা তৈরি হোক আমরা চাই। কোথায় কত আসন রয়েছে, তা প্রত্যেক কলেজেই জানানো হবে। পড়ুয়ারা ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেবেন। অনেক সময় অভিযোগ ওঠে যে লিস্ট ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। এ বার থেকে মেধা তালিকার লিস্ট অনলাইনেও দিয়ে দেওয়া হবে। যাদের নাম মেধা তালিকায় উঠবে, প্রত্যেকেই কলেজে ভর্তি হয়ে যাবে।’’ এত দিন নিয়ম ছিল, ভর্তি হওয়ার সময়ে পড়ুয়াকে সশরীরে কলেজে হাজির হতে হবে এবং তাঁর যাবতীয় নথিপত্র খতিয়ে দেখার পরে তাঁকে ভর্তি নেওয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছেন, ওই প্রক্রিয়া আর চলবে না। কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য পড়ুয়াকে আর সশরীরে হাজির হতে হবে না। অনলাইনে সকলে ভর্তি হয়ে যাবেন। পরে সার্টিফিকেট এবং নথিপত্র ভেরিফিকেশন হবে। যদি কেউ ভুয়ো সার্টিফিকেট দিয়ে ভর্তি হয়ে যান, পরে তাঁর ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে বলে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন।

কাউন্সেলিং-এর নামে দুর্নীতি চলছে বলেও এ দিন ইঙ্গিত দিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাই কাউন্সেলিং ব্যবস্থাও বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন তিনি। পার্থবাবু বলেছেন, ‘‘কাউন্সেলিং-এর নামে ২০০ জনের নাম ছাপিয়ে দেওয়া, এ সব আর চলবে না। বহু কলেজে ঘুরেই দেখেছি এই ধরনের পদ্ধতি এখনও চালু আছে। পরের বছর থেকে আরও কিছু পরিবর্তন আসবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার মেধার ভিত্তিতেই ছাত্র ভর্তির পক্ষে। সারা রাজ্যে কলেজে প্রায় সাড়ে চার লাখ সিট রয়েছে। সিট ফাঁকা থাকলে সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ভর্তি নিতে হবে।’’

তবে কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ভর্তি চালু করার কথা উচ্চ শিক্ষা দফতর ভাবছে না বলে পার্থ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এখানে কেন্দ্রীয় অনলাইনের সুযোগ নেই। আবারও বলছি, গ্রামে অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা প্রযুক্তিগত ভাবে পিছিয়ে, কিন্তু তাঁদের নম্বর ভাল। সব কিছু চালু করতে গেলে একটা পরিকাঠামোর প্রয়োজন হয়। সেগুলো আগে গড়ে তুলতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE