নরেন্দ্র মোদীর আমদাবাদের সঙ্গে দৌড়ে ফের পিছিয়ে পড়ল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলকাতা।
শিল্প টানার লড়াইয়ে এটা নতুন খবর নয়। তবে এই লড়াইটা বর্ষা নিয়ে! প্রচুর বৃষ্টি পাওয়ায় পূর্ব ভারত বরাবরই সুজলা-সুফলা। কম বৃষ্টির পশ্চিম তুলনায় শুখা। কিন্তু স্বাভবিক সেই নিয়মটা ইদানীং পাল্টে যেতে বসেছে বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তনের দৌলতে।
গত একশো বছরের ক্যালেন্ডার বলছে, মমতার খাসতালুকে বর্ষা ঢুকবে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে, মোদীর রাজ্যে জুনের শেষাশেষি। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, জুনের তৃতীয় সপ্তাহের শেষে বর্ষা এক্সপ্রেস গুজরাতে দুরন্ত গতিতে এগোলেও পশ্চিমবঙ্গে ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু উত্তরবঙ্গের তিন জেলার মধ্যে!
বস্তুত গত ক’বছর ধরেই এমনটা চলছে। গত দশ বছরের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, বৃষ্টির পরিমাণের নিরিখে ছ’বছরই পশ্চিম টেক্কা দিয়েছে পূর্বকে।
এ বার সামগ্রিক ভাবে দেশে ঘাটতি বর্ষার পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন। তাতে বলা হয়েছে, সারা দেশে স্বাভাবিকের ১২% কম বৃষ্টি হবে। উত্তর-পশ্চিমে হবে স্বাভাবিকের ১৫% কম। উত্তর-পূর্বে (পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড যার আওতায়) হবে তুলনায় বেশি, স্বাভাবিকের ১০% কম। কিন্তু
এ বার যে ভাবে আরবসাগরের ঘূর্ণিঝড়ে ভর করে মহারাষ্ট্র-গুজরাতে তড়িঘড়ি বর্ষা ঢুকে পড়ল, তাতে আবহবিদদের একাংশের ধারণা, শেষমেশ হয়তো উত্তর-পশ্চিমে ঘাটতি কিছুটা পুষিয়ে যাবে।
তবে পশ্চিমবঙ্গ-বিহার-ঝাড়খণ্ডের বর্ষা–ভাগ্য নিয়ে চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার ট্রেন এখনই এখনই ১০
দিন ‘লেট।’ কবে সে ঢুকবে, এখনও নিশ্চিত নয়। গত শনিবার ওড়িশা উপকূলে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্ত চটজলদি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় বর্ষা দক্ষিণবঙ্গের সীমান্তে এসে থমকে গিয়েছে। তাকে ঠেলে ঢোকানোর জন্য আর একটা ঘূর্ণাবর্ত দরকার।
ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে অবশ্য একটা নিম্নচাপ-অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে। সেটা আর একটু সক্রিয় হলে শনিবার নাগাদ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা ঢুকে পড়তে পারে বলে বৃহস্পতিবার আলিপুর আশা প্রকাশ করেছে।
পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি-র বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ, গত শতক থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে মৌসুমি বায়ুর জোর কমছে। ‘‘আমরা তথ্যপঞ্জি ঘেঁটে দেখেছি, ১৯০১ সাল থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত উত্তর ভারতের হিমালয় পাদদেশ ও গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বর্ষার বৃষ্টি কমে গিয়েছে।’’— বলছেন এক বিজ্ঞানী।
কারণ কী?
পুণের আবহবিদদের ব্যাখ্যা: ভারতীয় উপমহাদেশের ভূপৃষ্ঠের তুলনায় ভারত মহাসাগরের জলস্তরের উষ্ণতা দ্রুত হারে বাড়ছে। এতে সমুদ্র ও ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতার স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তারই জেরে দিন-কে-দিন দুর্বল হচ্ছে মৌসুমি বায়ু। এক বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘আমরা দেখেছি, বিহার-ছত্তীসগঢ়-ঝাড়খণ্ড ও পূর্ব উত্তরপ্রদেশে গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাত প্রায় ১০%-২০% মার খেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সেটা ৫%-১০%। উত্তরবঙ্গের হিমালয় সংলগ্ন জেলাগুলোয় ভারী বৃষ্টি না-হলে পশ্চিমবঙ্গে ঘাটতির বহর আরও বাড়ত।’’
ভারত মহাসাগরের জলতল ও মূল ভারতীয় ভূখণ্ডের ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ফলেই যাওয়াতেই বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরির প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হচ্ছে কি না, আবহবিদেরা তা-ও খতিয়ে দেখতে চাইছেন। ওই নিম্নচাপের আকালেই ভুগতে হচ্ছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ডকে।
এবং বৃষ্টির ময়দানে ‘শুখা’ গুজরাত পিছনে ফেলছে ‘সুজলা’ বাংলাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy