Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সতর্কতা শিকেয়, সাগরস্নানে নিজস্বী

ভোরে গঙ্গাসাগরের পাঁচটি ঘাটে তখন ঠাসাঠাসি ভিড়। মাইকে ঘোষক সতর্ক করে চলেছেন, ‘‘জোয়ার চলছে। হাতে মোবাইল নিয়ে সমুদ্রে নামবেন না। বিপদ হতে পারে।’’

গঙ্গাসাগর মেলায় সাধুসন্তরা। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

গঙ্গাসাগর মেলায় সাধুসন্তরা। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

মেহবুব কাদের চৌধুরী
সাগরদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫২
Share: Save:

হাজারো হুঁশিয়ারিতেও ধাবমান ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ছবি তোলা কমছে না। এ বার দেখা গেল, সমুদ্রে পুণ্যস্নান করার সময়েও হাতে মোবাইল! লাগাতার প্রচার এবং সতর্কীকরণ সত্ত্বেও সমানে চলছে সেলফি বা নিজস্বী তোলা।

সমুদ্রে গলা পর্যন্ত ডুব দিচ্ছেন এক স্ত্রী। মোবাইলে নিজস্বী তুলছেন স্বামী। পাড় থেকে অনেকটা দূরে সমুদ্রে নেমে যেতেই স্পিডবোটে টহল দেওয়া প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যেরা সতর্ক করার পরে হুঁশ ফিরল তাঁদের। আবার সমুদ্রে কিছুটা নেমেই সপরিবার মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত আট থেকে আশি। মকরসংক্রান্তির পুণ্যলগ্নে মঙ্গলবার সকাল থেকেই গঙ্গাসাগরে সেলফির ছড়াছড়ি। সেলফি তোলার হুড়োহুড়ি।

ভোরে গঙ্গাসাগরের পাঁচটি ঘাটে তখন ঠাসাঠাসি ভিড়। মাইকে ঘোষক সতর্ক করে চলেছেন, ‘‘জোয়ার চলছে। হাতে মোবাইল নিয়ে সমুদ্রে নামবেন না। বিপদ হতে পারে।’’ কিন্তু কে কার কথা শোনে! সমুদ্রতটে কর্তব্যরত এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা পুণ্যার্থীদের বারবার সতর্ক করছি। কিন্তু মানুষ নিজে থেকে সতর্ক না-হলে আমরা কী করব!’’

পুণ্যার্থীরা মা গঙ্গার উদ্দেশে পয়সা ছুড়ে দেন। সেই দু’-পাঁচ-দশ টাকার মুদ্রা কুড়োতে ব্যস্ত খুদে থেকে বয়স্কদের হুড়োহুড়ি। গঙ্গাসাগরের বাসিন্দা কিশোর রমেশ মণ্ডলের বাবা নেই। সংসারে একমাত্র রোজগেরে মা মাছ বিক্রি করেন। রমেশ চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। শীতের সকালে গায়ে পাতলা জামা, হাফপ্যান্ট, খালি পা। হাতে একটা ব্যাগ। দিনের শেষে তার রোজগার ১২০ টাকা। পয়সা নিয়ে কী করবে? রমেশ বলল, ‘‘মাকে দেব।’’ তার বয়সি অনেকেই এই ক’দিন সমুদ্র থেকে পয়সা কুড়িয়ে উপার্জন করে।

গঙ্গাসাগরের কাছাকাছি রুদ্রনগরের বাসু মণ্ডল অন্য সময় মাছ বেচলেও মেলার দিনগুলিতে পুজোর সামগ্রী বিক্রি করেন। মঙ্গলবার সকালে দেখা গেল, বাসুর মতো অন্তত ২০০ জন সমুদ্রপাড়ে ভ্যান টানছেন। ভ্যানে রয়েছে গঙ্গারতির সামগ্রী। বাসু বললেন, ‘‘সারা বছর আমরা এই মেলার দিকে তাকিয়ে থাকি। সাগরপাড়ে গঙ্গাপুজোর সামগ্রী বিক্রি করে পাঁচ দিনে হাজার দশেক টাকা আয় হয়।’’

মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মঙ্গলবার পর্যন্ত মেলায় স্নান করেছেন প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ। অনেকেই কুম্ভমেলা কুম্ভ ছেড়ে গঙ্গাসাগর মেলায় এসেছেন। এটা একটা রেকর্ড।’’ তিনি জানান, চলতি বছরে মেলায়
দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হয়নি। চার জন অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন। মেলায় ৮২ জন নিখোঁজ হন। তাঁদের মধ্যে ৭২ জনের সন্ধান মিলেছে। ১০ জন এখনও নিখোঁজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gangasagar Selfie
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE