Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দু’মাসের মেয়েকে ছাড়লেন মা

শবর শিশুদের আবাসিক স্কুলের সামনে গাছতলায় পুঁটুলি নামিয়ে রেখে হাঁটা দিয়েছিলেন যুবতী। তা দেখে দুই শবর শিশু স্কুলের শিক্ষককে ঘটনাটি জানায়। তিনি গিয়ে দেখেন, পুঁটুলিতে কয়েক মাসের শিশুকন্যা চোখ পিটপিট করছে। যুবতীকে সেই শিক্ষক ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু মহিলা নিজের শিশুকে ফেরত নেননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুঞ্চা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০৪:২০
Share: Save:

শবর শিশুদের আবাসিক স্কুলের সামনে গাছতলায় পুঁটুলি নামিয়ে রেখে হাঁটা দিয়েছিলেন যুবতী। তা দেখে দুই শবর শিশু স্কুলের শিক্ষককে ঘটনাটি জানায়। তিনি গিয়ে দেখেন, পুঁটুলিতে কয়েক মাসের শিশুকন্যা চোখ পিটপিট করছে। যুবতীকে সেই শিক্ষক ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু মহিলা নিজের শিশুকে ফেরত নেননি।

পুরুলিয়ার পুঞ্চায় মঙ্গলবার সেই শিশুর ঠাঁই হয়েছে পুলিশকর্মী অরূপ মুখোপাধ্যায়ের শবর শিশুদের নিয়ে গড়া আবাসিক স্কুলে। অরূপবাবু জানান, বছর কুড়ির ওই মহিলা তাঁকে জানান, তিনি জনজাতির। বছর দেড়েক আগে এক মেলায় তাঁর সঙ্গে বাঁকুড়ার এক অন্য সম্প্রদায়ের যুবকের পরিচয় ও পরে ঘনিষ্ঠতা হয়। মাসখানেক পরে মন্দিরে তাঁরা বিয়ে করেন। দুই পরিবার বিয়ে মানেনি। দম্পতি বরাবাজারের এক গ্রামে সংসার পাতেন।

ট্রাক্টর চালিয়ে সংসার চালাতেন ওই যুবক। যুবতী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। অরূপবাবু বলেন, ‘‘মেয়েটি জানান, হঠাৎ তাঁকে ছেড়ে স্বামী চলে যান। তাঁর খোঁজ নেই। বাপের বাড়ি সন্তান নষ্ট করে মেয়েকে ফিরতে বলে। মেয়েটি রাজি হননি। মাস দু’য়েক আগে সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু ভবিষ্যতের দুর্ভাবনা পেয়ে বসে তরুণীকে।’’ অরূপবাবুর দাবি, যুবতী বলেন, তিনি বাপের বাড়িতে ফিরতে চান। কিন্তু স্বামী জনজাতির না হওয়ায়, ওই শিশুকে ছেড়ে আসার শর্ত দেন বাপের বাড়ির লোকেরা। তাই তিনি সন্তানকে ছেড়ে যেতে চান।

এমন ‘শর্ত’ কেন? যোগাযোগ করা যায়নি মহিলার বাপের বাড়ির সঙ্গে। মহিলার সঙ্গেও কথা বলা যায়নি। তবে সাঁওতালদের সর্বভারতীয় সামাজিক সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক রতনলাল হাঁসদার দাবি, ‘‘আমাদের সমাজ ওই শিশুকে মানবে না। কারণ, তার বাবা ভিন্‌ জাতের। ওই মেয়েটি শিশুকে ত্যাগ করে সমাজের বিধান রক্ষা করেছেন।’’ তবে ওই সংগঠনের সর্বভারতীয় প্রধান (দিশম পারগানা) নিত্যানন্দ হেমব্রম বলেন, ‘‘মেয়েটি যদি দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে চান, তা হলে সঙ্গে সন্তান থাকলে অসুবিধা হতে পারে। শিশুটি যদি শবরদের স্কুলে থাকে, আমাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে আর্থিক সহায়তা করা হবে। শিশুটির বাবাকেও এ ব্যাপারে চাপ দেওয়া দরকার।’’

পুরুলিয়ার জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘ওই শিশুর জন্যে কী ব্যবস্থা করা যায় দেখছি।’’ জেলা শিশু ও নারী সুরক্ষা আধিকারিক শিশির মাহাতো জানান, মেয়েটিকে ‘চাইল্ড লাইন’ হোমে রাখার ব্যবস্থা করতে পারে। সে ব্যাপারে কথা বলা হবে। শিশুটিকে আপন করে নিয়েছে স্কুলের খুদে আবাসিকেরা। কেউ ডাকছে ‘ভূমি’, কেউ বলছে ‘ভাগ্যশ্রী’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mother Daughter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE