Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বর্ষার ধূপগুড়িতে সব দল এক ছাতায়

শনিবার সকাল থেকে ধূপগুড়ির নানা ওয়ার্ডের নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে নানা দলের বড়-মেজ-ছোট নেতারা পইপই করে চেনাজানা বয়স্কদের সাবধান করেছেন, ‘‘কাকা, বেশি ভিজবেন না। ছাতা নিয়ে যান।’’

ভরা বর্ষায় ধূপগুড়িতে ভোটকর্মীরা। শনিবার। ছবি: রাজকুমার মোদক

ভরা বর্ষায় ধূপগুড়িতে ভোটকর্মীরা। শনিবার। ছবি: রাজকুমার মোদক

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ০৩:১২
Share: Save:

বর্ষায় ছাতা আর শীতে কাঁথা নাকি দিতে নেই কাউকে। ভোটের মুখে টানা বৃষ্টিতে ডুবুডুবু ধূপগুড়িতে অবশ্য এই প্রবাদ একেবারে শিকেয়। বরং মুষলধারায় বিপন্ন ভোটারদের মন জয়ে শেষ বেলায় ছাতাই মোক্ষম হাতিয়ার।

আজ, রবিবার ধূপগুড়ি পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ। তার আগের দিন শহর জুড়ে চলল ছাতা বিলির প্রতিযোগিতা। বিনা পয়সায় এই ছাতা বিলি ঘিরে নালিশও ঠোকা হল নির্বাচন কমিশনে।

শনিবার সকাল থেকে ধূপগুড়ির নানা ওয়ার্ডের নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে নানা দলের বড়-মেজ-ছোট নেতারা পইপই করে চেনাজানা বয়স্কদের সাবধান করেছেন, ‘‘কাকা, বেশি ভিজবেন না। ছাতা নিয়ে যান।’’ আবার কেউ কথা না বলে একেবারে হাতে ছাতা ধরিয়ে দিয়েছেন। কোথাও জোনাল স্তরের নেতা নিজের সুদৃশ্য কাঠের হাতলের ছাতা বিলিয়ে দিয়েছেন। আবার কোথাও জেলা স্তরের নেতা গাড়িতে রাখা গোটা দশেক ছাতা এনে ত্রাণ শিবিরের লোকজনকে দিয়ে নমস্কার করে বলেছেন, ‘‘লাগলে বলবেন, আরও এনে দিয়ে যাব।’’

বিনি পয়সায় আস্ত একটা ছাতা। তাই হুড়োহুড়িও হচ্ছে। তৃণমূলের জেলা স্তরের এক নেতা একান্তে জানালেন, ত্রাণ শিবিরে গিয়ে নিজের ও নিরাপত্তা রক্ষীর ছাতাও বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘দুর্যোগের সময় অত হিসেব কষলে হয় না। সেবার মানসিকতা নিয়ে নিজের যথাসাধ্য উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করতে হয়। সেটাই করা হচ্ছে।’’

এরই মধ্যে বিজেপির উত্তরবঙ্গের অন্যতম পর্যবেক্ষক রথীন বসু ভোটের বাজারে ছাতা ও খাবার বিলি কেন হচ্ছে সেই প্রশ্নে নালিশ ঠুকেছেন নির্বাচন কমিশনে। রথীনবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকারি ত্রাণ শিবিরগুলিকে কেন নিজেদের দলের বলে চালাচ্ছে সেটা কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছি। অকাতরে খাবার ও ছাতা বিলি হচ্ছে সেখানে।’’ কিন্তু, বিজেপি শিবির থেকেও তো ইতিউতি ছাতা মিলছে বলে খবর বাতাসে ভাসছে। রথীনবাবু বলেন, ‘‘আরে আমাদের অত টাকা কই, যে দেদার বিনি পয়সার ছাতা বিলি করব।’’

সিপিএমের নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে হাত বাড়ালেও ছাতা মিলছে বলে খবর। তবে তৃণমূলের মতে গোছা গোছা ছাতা জোগাড় তাঁরা করতে পারেননি বলে এক সিপিএম নেতা একান্তে মেনেছেন। সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্যের অভিযোগ, ‘‘প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতির জন্য খাবার-ছাতা যা বিলি করছে সবই তৃণমূল নিজেদের বলে চালাচ্ছে। আর আমরা নিজেরা চেষ্টা করে বাসিন্দাদের সাহায্য করছি।’’ কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার মনে করেন, ‘‘এমনটাই তো হওয়ার কথা। ভোট কিনতে কত কিছু হয়।’’ তাই রাজনীতির নাম শুনলেই যাঁরা ‘ধুস ছাতা’ বলে উড়িয়ে দেন, পুরভোটের মুখে ধূপগুড়ির ছাতা রাজনীতি ঝেড়ে ফেলতে পারছেন না তাঁরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE