Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জল্পনা উস্কে বাড়তি সময় মমতাকে

মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি সময় দেবেন আধ ঘণ্টা। আর দলের নেতাদের জন্য বরাদ্দ করেছেন মাত্র দশ মিনিট! তাঁর দফতর সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজ্য সফরে যাচ্ছেন তিনি। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বেশি ক্ষণ কথা বলতেই পারেন। এর অন্য অর্থ খোঁজা অর্থহীন। আর রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত তাঁর দলের নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৩০ মিনিট, আমাদের ১০ মিনিট! যাঁরা এই নিয়ে খবরের শিরোনাম করার, তাঁরা তো করবেনই! কিন্তু আমরা তো নৈশভোজ অবধি রাজভবনে থাকব!’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি সময় দেবেন আধ ঘণ্টা। আর দলের নেতাদের জন্য বরাদ্দ করেছেন মাত্র দশ মিনিট!

তাঁর দফতর সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজ্য সফরে যাচ্ছেন তিনি। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বেশি ক্ষণ কথা বলতেই পারেন। এর অন্য অর্থ খোঁজা অর্থহীন। আর রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত তাঁর দলের নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৩০ মিনিট, আমাদের ১০ মিনিট! যাঁরা এই নিয়ে খবরের শিরোনাম করার, তাঁরা তো করবেনই! কিন্তু আমরা তো নৈশভোজ অবধি রাজভবনে থাকব!’’

আজ, শনিবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বার কলকাতার মাটিতে পা দেবেন নরেন্দ্র মোদী। রাত আটটায় রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। ঠিক তার পরের ৪৫ মিনিট বরাদ্দ রয়েছে বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের জন্য। যার মধ্যে ১০ মিনিট পাবেন বিজেপি নেতারা।

সিদ্ধার্থনাথ এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ দু’জনেই জানিয়েছেন, রাজভবনের বৈঠকে খাগড়াগ়়ড় থেকে পিংলার ঘটনা এবং বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁরা জানাবেন। পাশাপাশি, আরএসএসের তরফে বিজেপির সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দিলীপ ঘোষ জানাচ্ছেন, রাজ্যে দলের সাংগঠনিক হালহকিকতও তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত ও বিদায় জানাতেও বিজেপির নেতারা হাজির থাকবেন বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে।

সমঝোতার জল্পনায় জল ঢালতে মুখ্যমন্ত্রীও পিঠেপুলি, আম-দই, সন্দেশের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেবেন রাজ্যের দাবিপত্র। তাতে বলা হবে, দিল্লির সরকার ১১টি কেন্দ্রীয় প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি, ১৪টি প্রকল্প ব্যয়ের সিংহ ভাগই চাপিয়েছে রাজ্যের ঘাড়ে। রাজ্যের সাধারণ মানুষের উন্নয়নের পথে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তাই অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুন। রাজ্যের স্বার্থে ঋণের সুদ ও আসল মেটানোর ক্ষেত্রে তিন বছরের ছাড় দেওয়ার দাবিও থাকছে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া চিঠিতে।

রাজ্যে কুড়ি ঘণ্টা কাটাচ্ছেন মোদী। বার্নপুরে ইস্কো কারখানার আধুনিকীকরণ প্রকল্পের উদ্বোধনের পাশাপাশি কেন্দ্রের বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সূচনাও করবেন প্রধানমন্ত্রী। যাবেন দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির এবং বেলুড় মঠেও। রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখে আসবেন অসুস্থ সন্ন্যাসী স্বামী আত্মস্থানন্দকে। রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব ছাড়া আরও কিছু বিশিষ্ট মানুষেরও তাঁর সঙ্গে দেখা করার কথা।

নবান্নের খবর, প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়ার জন্য অর্থ দফতর থেকে দাবিপত্রের জন্য যে খসড়া বানানো হয়েছিল, তা প্রাথমিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দ হয়নি। পরে তিনি নিজেই এর মুখবন্ধ তৈরি করেন। তাতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘সরকারের মূল কাজ পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষের কথা ভাবা। তাদের স্বার্থে প্রকল্প ঘোষণা করে নীচের তলার মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটানো। কিন্তু কেন্দ্র যে ভাবে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প হয় বাতিল করে দিয়েছে, অথবা বরাদ্দ ছাঁটাই করেছে, তাতে গরিব মানুষের উন্নয়নই ব্যাহত হচ্ছে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার যে সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য কিছু করতে চায়— তা প্রতিফলিত হচ্ছে না।’

দাবিপত্রে বলা হবে, কেন্দ্রীয় কর বৃদ্ধির কথা বলে আসলে দিল্লির সরকার রাজ্যগুলিকে বোকা বানাচ্ছে। রাজ্যের যুক্তি, কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের প্রাপ্য ৩৬% থেকে বাড়িয়ে ৪২% করার দাবি করেছে কেন্দ্র। কিন্তু বাস্তবে ঋণের সুদ-আসল বাবদ যে টাকা কেন্দ্র কেটে নিচ্ছে, তার পর এই বাড়তি টাকার মূল্য নেই। বাম জমানার ৩৪ বছরে যে বিপুল ঋণের বোঝা বর্তমান সরকারের ঘাড়ে চেপেছে, তা নিয়ে সরব হবেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলবেন, গত চার বছরে রাজ্যের নিজস্ব আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ আর সুদ গুণতেই চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি বদলাতে কেন্দ্র যাতে কোনও পন্থা বার করে, সে কথাও প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন মুখ্যমন্ত্রী।

কেন্দ্র বেশ কয়েকটি প্রকল্পে অনুদান কমিয়ে দিয়েছে বলে মমতার সুরেই সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়াও। এই কংগ্রেস বিধায়কের কটাক্ষ, ‘‘ইউপিএ আমলে রাজ্যের ঋণের উপরে সুদ মকুব হচ্ছে না, দিল্লি টাকা কেটে নিয়ে যাচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী তো কংগ্রেস সরকারকে দিবারাত্র বিষোদ্গার করতেন!
এখন প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন। কিন্তু এই আলোচনায় কি কেন্দ্রের টাকা কেটে নেওয়া বন্ধ হবে, নাকি সুদ মকুবের সিদ্ধান্ত আদায় হবে?’’ মানসবাবু বলেন— তা না হলে তো বুঝতে হবে, সবটাই নাটক!
মানস ভুঁইয়ার দাবি, আধুনিকীকরণের পরে ইস্কোর যে কারখানার উদ্বোধন করতে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বার্নপুর যাচ্ছেন, সেই প্রকল্পের মূল কৃতিত্ব আগের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। অথচ রাজ্য এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার নিজেরা কৃতিত্ব নিতে ব্যস্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE