বাজপায়ীর শেষকৃত্যে দিলীপ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।
কে যাবেন, কে যাবেন না— জল্পনা ছিল বিস্তর। প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ীর স্মরণসভা মহাজাতি সদনে শুরু হতেই জল্পনার অবসান হল। বামেরা ছাড়া, প্রায় সব পক্ষই যোগ দিল রাজ্য বিজেপির বাজপেয়ী স্মরণ অনুষ্ঠানে। আর স্মরণসভার সমাপ্তি ভাষণে রাজ্য বিজেপির সভাপতি বললেন, কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাজপেয়ীর চেয়ে এগিয়ে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
মহাজাতি সদনে আয়োজিত হয়েছিল প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর স্মরণসভা। বুধবারের এই স্মরণসভায় রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তো উপস্থিত ছিলেনই। দলের জাতীয় নেতৃত্বের তরফে ছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং শিব প্রকাশ। ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি, মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়।
বিজেপির তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল স্মরণসভায়। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সিপিএম, কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে। রাজ্য সরকারের তরফে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনা স্মরণসভায় উপস্থিত হয়ে অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। প্রদেশ কংগ্রেসের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও প্রতিনিধি পাঠানো না হলেও কংগ্রেসের অন্তত দু’জন স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন বলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক সচিব নিলয় প্রামাণিক জানান। ছিলেন এনডিএ-র দুই শরিক লোকজনশক্তি পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টির নেতা-নেত্রীরাও। ছিলেন না শুধু বামেরা।
বামেদের এই অনুপস্থিতিকে নিজের ভাষণে কটাক্ষ করেন বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ। শমীক ভট্টাচার্য, মুকুল রায়, কৈলাস বিজবর্গীয়, শিব প্রকাশরাও বাজপেয়ীর রাজনৈতিক জীবনকে স্মৃতিচারণে তুলে ধরেন। দুই রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি এবং তথাগত রায়ও তুলে ধরেন বাজপেয়ীকে নিয়ে নিজেদের স্মৃতির। ২০০২ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী যে রাজধর্ম পালনের পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেই পরামর্শকে বিকৃত অর্থে বা ‘কদর্থে’ তুলে ধরা হয়েছিল বলে তথাগত রায় মন্তব্য করেন। বাজপেয়ী তাঁর অধস্তন তথা অনুজ রাজনীতিককে যদি কোনও সুপরামর্শ দিয়ে থাকেন, তা হলে সে পরামর্শের কদর্থ করার প্রয়োজন কী? প্রশ্ন তোলেন তথাগত। নরেন্দ্র মোদী সে দিনও বাজপেয়ীর পরামর্শ মেনে চলতেন, আজও তাই চলছেন— মত মেঘালয়ের রাজ্যপালের।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের মতামতও তথাগত রায়ের সঙ্গে কিছুটা মিলে গিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চলছেন অটলবিহারী বাজপেয়ীর দেখানো পথেই।’’ তবে তাতেই থামেননি দিলীপ। তিনি বলেছেন, ‘‘কোথাও কোথাও নরেন্দ্র মোদী এগিয়ে গিয়েছেন বাজপেয়ীর থেকেও।’’ কোন কোন ক্ষেত্রে মোদী এগিয়ে গেলেন? দিলীপের ব্যাখ্যা, অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় সীমান্ত পর্যন্ত গিয়ে অভিযান চালিয়েছিল ভারত, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় সীমান্ত পেরিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে।
সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাধ্যমে বাজপেয়ীর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। তবে স্মরণসভা যে পুরোপুরি মসৃণ ছিল, তা নয়। বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার সদস্য তথা কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় নিজের ভাষণে কিছুটা অভিমান প্রকাশ করেন এ দিন। অটলবিহারী বাজপেয়ীর চিতাভষ্ম বিসর্জনের যে কর্মসূচি রাজ্য নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন, সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না বলে সত্যব্রতবাবু এ দিন দাবি করেন। বাজপেয়ীর চিতাভষ্মের একাংশ যে তাঁরই এলাকা কৃষ্ণনগরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সে কথাও বুধবার মহাজাতি সদনে পৌঁছে তিনি জেনেছেন বলে সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় জানান। প্রবীণ নেতার এই অভিমানী মন্তব্যে স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয় মহাজাতি সদনে।
সত্যব্রতবাবু ভাষণ শেষ করার আগেই যে ভাবে মঞ্চের পাশ থেকে তাঁকে ভাষণ শেষ করে দিতে বলা হয়, তা নিয়েও সমালোচনা হয়েছে। একই ভাবে শমীক ভট্টাচার্যকেও ভাষণ চলাকালীনই থেমে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু অসামান্য বাগ্মী শমীকের স্মৃতিচারণ তখন মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে গোটা মহাজাতি সদন। আড়ালে দাঁড়িয়ে যিনি শমীককে থামতে বলেছিলেন, শমীক তাঁকেই পাল্টা থামিয়ে দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy