বারাসতে জাতীয় শিশু অধিকার আয়োগের সদস্যরা। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
শিশু পাচার কাণ্ড সামনে আসার পরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে নানা প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না মেলায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা আয়োগ (ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটস)। এ বার শিশু পাচার রুখতে নয়া দাওয়াই দিল তারা।
বুধবার মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দু’টি সুপারিশ করেছে আয়োগ। l কেউ যদি সদ্যোজাতকে নিজের কাছে রাখতে না পারেন, তার জন্য হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিশেষ গোপন জায়গায় শিশুটিকে রাখার ব্যবস্থা করা। l নার্সিংহোমের ধাঁচে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সব চিকিৎসকের নাম ও ফোন নম্বর লিখে রাখা, যাতে কেউ গোপনে গর্ভপাত করাতে চাইলে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সরকারি তত্ত্বাবধানেই গর্ভপাত করানো সম্ভব হবে বলে আয়োগ জানিয়েছে। আয়োগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রূপা কপূর বলেন, ‘‘এটা হলে শিশু পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য কমবে। ওদের প্রতারণাও বন্ধ হবে।’’
উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার নার্সিংহোমের শিশু পাচার কাণ্ড সামনে আসার পরেই বোঝা যায় সেই জাল কতদূর বিস্তৃত। শিশু পাচারের আরও কিছু নার্সিংহোম এবং হোম যে জড়িত, সে তথ্যও সিআইডি-র সামনে আসে। সেই সেই সময়ে উত্তর ২৪ পরগনায় এসে জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কাছে শিশু সুরক্ষা নিয়ে নানা প্রশ্ন করেছিলেন রূপা। তার মধ্যে ছিল মৃত শিশুদের ময়না-তদন্ত কেন হয় না, জেলায় প্রসূতির সংখ্যা জানতে আশা কর্মীদের কেন ব্যবহার করা হয় না, সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় প্রসব ব্যবস্থার প্রচার সে ভাবে নেই কেন ইত্যাদি। উত্তর দিতে গিয়ে কার্যত দিশাহারা হয়ে যায় প্রশাসন। পরে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জমা দেয় আয়োগ।
সেই সময় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরকে কী ভাবে কাজ করতে হবে সেই দিশা দেখিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে সমস্ত রিপোর্ট তৈরি করতে বলে গিয়েছিলেন রূপা। বুধবার ফের দিল্লি থেকে এসে তিনি বারাসতে জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে রূপা বলেন, ‘‘এ ক’দিনে খুব ভাল কাজ হয়েছে।’’
আয়োগের কাছে দেওয়া রিপোর্টে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সুপারিশ মতো জেলার ৫৮টি নার্সিংহোমের লাইসেন্স-সহ সমস্ত কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে। কিছু নার্সিংহোমের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। হাতুড়ে চিকিৎকদের তালিকা করে শিশু পাচার রোধে আয়োগের নির্দেশ তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় জন সচেতনতা শিবির হয়েছে।
শিশু পাচারে তদন্তরত সিআইডি অফিসারদের সঙ্গেও এ দিন কথা বলেন রূপা। তদন্তে সন্তোষও প্রকাশ করেন। রূপা বলেন, ‘‘ভাল তদন্ত করছে সিআইডি। এখনও গোটা রিপোর্ট হাতে পাইনি। ১২ জানুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy