Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
State news

‘বড় ভাল ছিল ডাক্তার, গোটা পরিবারটা এ ভাবে শেষ হয়ে গেল!’

পুজোর মধ্যেই দেখা হয়েছিল। শারদীয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়া দু’একটা কথাও হয় বিভাসের সঙ্গে। তখনই বলেছিলেন, একাদশীর দিন সপরিবারে সিকিম বেড়াতে যাচ্ছেন।

মৃত চিকিৎসক বিভাস পাঠক। —নিজস্ব চিত্র।

মৃত চিকিৎসক বিভাস পাঠক। —নিজস্ব চিত্র।

অজিত সাহা
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:২০
Share: Save:

পুজোর মধ্যেই দেখা হয়েছিল। শারদীয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়া দু’একটা কথাও হয় বিভাসের সঙ্গে। তখনই বলেছিলেন, একাদশীর দিন সপরিবারে সিকিম বেড়াতে যাচ্ছেন। কিন্তু সেটাই যে ওঁর সঙ্গে শেষ দেখা হয়ে যাবে, কল্পনাতেও ছিল না।

বিভাস পাঠক। অত্যন্ত ভদ্র এবং বিনয়ী ছেলে। পেশায় চিকিৎসক। নদিয়ার একটা সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।এলাকার গরিব রোগীদের যে ভাবে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতেন, ওষুধপত্র দিতেন, তাতে বিস্তীর্ণ একটা অঞ্চলে উনি ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন। সেই মানুষটাই হঠাৎ করে এ ভাবে চলে যাবেন, ভাবতেই পারিনি! একটা পরিবার এ ভাবে শেষ হয়ে গেল!

মঙ্গলবার কাকভোরে খবরটা পেলাম। বিভাসরা যে গাড়িতে ছিল, সেটা পাহাড়ের খাদে গড়িয়ে পড়েছে। আর তাতেই, ওঁর বাবা, মা, দিদি, মামা— সকলেই মারা গিয়েছেন। বিভাস নিজেও। ওই গাড়িতেই বিভাসের এক জামাইবাবু-সহ আরও তিন জন ছিলেন। তাঁরা আপাতত শিলিগুড়ির একটা হাসপাতালে ভর্তি। খবর নিয়ে জেনেছি, তাঁরা আপাতত বিমন্মুক্ত। ওঁর স্ত্রী-বাচ্চারা অন্য গাড়িতে ছিলেন। সেটুকুই যা বাঁচোয়া। খবরটা শুনে, থমকে গিয়েছিলাম। এই তো সে দিন কথা হল! আজ আর মানুষগুলোই নেই।

আরও পড়ুন: পেলিং যাওয়ার পথে খাদে গাড়ি, মৃত একই পরিবারের ৫, শোকের ছায়া মছলন্দপুরে

ছুটে গিয়েছিলাম, ওদের নতুনপল্লির বাড়িতে। সেখানে তখন লোকে লোকারণ্য। হাজারখানেক মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁদের প্রিয় ডাক্তারবাবুর বাড়িতে। কিন্তু, বাড়িতে তো কেউ নেই। তালা মারা। এক আত্মীয়ের কাছে চাবি ছিল বোধহয়। তিনিই খুললেন ঘর। প্রতিবেশীরা কাঁদছেন। পাশের গ্রামগুলি থেকেও মানুষ এসেছেন খবর পেয়ে।

বিভাসের এক ভাই বাসু পাঠকের সঙ্গে গ্রামেরই তিন জন আজ সকালে বিমানে বাগডো়গরা পৌঁছে ওখান থেকে গাড়ি নিয়ে সিকিমের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। বিভাসদের দেহ যাতে সিকিম থেকে গ্রামের বাড়িতে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখছেন। গোটা গ্রাম অপেক্ষা করে আছে, কখন বিভাসরা ফিরবেন!

এত দিন খবরের কাগজে বা টিভিতে এমন সব ঘটনার কথা পড়েছি, শুনেছি। কিন্তু, এ বার নিজের গ্রামেই এমন মর্মান্তিক একটা ঘটনা ঘটে গেল! নিঃস্ব হয়ে গেল একটা গোটা পরিবার। ওঁর স্ত্রী কী নিয়ে বেঁচে থাকবেন! আর সন্তানদের কথা? ভাবতেই পারছি না। এ ভাবে যে কেন সব শেষ হয়ে গেল!

যে মানুষটা সারা জীবন মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে এলেন, তিনি নিজেকে বাঁচানোর কোনও সুযোগই দিলেন না কাউকে!

(লেখক: মছলন্দপুরের বাসিন্দা এবং সিকিমে গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতিবেশী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sikkim Sikkim accident সিকিম Tourist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE