Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘ব্লু হোয়েল’ খেলতে কী করে কাটব হাত’

বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রটি ফোনে কাউকে জিজ্ঞাসা করছিল, ‘হাত কী ভাবে কাটতে হবে’? সে কথা শুনে ফেলেন এক পড়শি। তাঁর থেকে খবর পায় ছাত্রের পরিবার। বছর সতেরোর ওই তরুণের কাকা জানান, খবর পেয়েই ভাইপোর ফোন কেড়ে তাঁরা সাহায্য চান বাঁকুড়া সদর থানার। পুলিশ ছেলেটিকে হাসপাতালে পাঠায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:০১
Share: Save:

ফোনের কথোপকথন কানে গিয়েছিল পড়শির। সেই সুবাদে ‘নীল তিমি’র (ব্লু হোয়েল) খপ্পর থেকে উদ্ধার হল এক স্কুল-ছাত্র। শুক্রবার রাতে বাঁকুড়া শহরের ঘটনা।

বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রটি ফোনে কাউকে জিজ্ঞাসা করছিল, ‘হাত কী ভাবে কাটতে হবে’? সে কথা শুনে ফেলেন এক পড়শি। তাঁর থেকে খবর পায় ছাত্রের পরিবার। বছর সতেরোর ওই তরুণের কাকা জানান, খবর পেয়েই ভাইপোর ফোন কেড়ে তাঁরা সাহায্য চান বাঁকুড়া সদর থানার। পুলিশ ছেলেটিকে হাসপাতালে পাঠায়। জেলার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘ব্লু হোয়েলের মতো গেমের ভয়ঙ্কর প্রভাব সম্পর্কে পড়ুয়াদের সচেতন করতে আমরা ইতিমধ্যেই স্কুল-কলেজে শিবির শুরু করেছি। এখন দেখছি, আরও জোরদার প্রচার চালাতে হবে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলেটির বাবা নেই। মা পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। ছেলেকে মোবাইলটি মা-ই কিনে দেন। সেই মোবাইলে ছেলে এমন একটা খেলা খেলছিল, যার পরিণতি আত্মহত্যাও হতে পারত— এ কথা জেনে ভেঙে পড়েন ওই বিধবা। বলেন, ‘‘বাড়িতে ও সারাক্ষণ ফোন নিয়ে থাকত। খুব কম কথা বলছিল গত মাস দু’-তিন। ফোন নিয়ে বাড়ির কেউ কিছু বললে রেগে যেত। তা যে এই কারণে, তা বুঝিনি।’’ কাকার দাবি, ওই কিশোর কয়েক মাস আগে কথায় কথায় ‘ব্লু হোয়েল’ খেলার ব্যাপারে তাঁকে বলেছিল। বিষয়টি নিয়ে তাঁর কোনও ধারণা ছিল না। ফলে, কোনও সন্দেহ হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘ভাগ্যিস, আমাদের পড়শি ভাইপোর ফোনের কথাবার্তা শুনতে পেয়েছিলেন, না হলে কী হতো!’’

আরও পড়ুন:নীল তিমির আড়ালে জাল পেতে চোর

কাকে ফোন করে হাত কাটার পদ্ধতি জানতে চাইছিল ওই ছাত্রটি? পুলিশ সূত্রের খবর, ‘ব্লু হোয়েল’-এর কিছু সঞ্চালক বা ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’ রয়েছে, যারা সরাসরি খেলুড়েদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। তবে এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। কারণ, ওই ছাত্রের মোবাইল ‘পাসওয়ার্ড’ দিয়ে আটকানো রয়েছে। ছাত্রটি কিছুটা আচ্ছন্নের মতো আচরণ করছে। সে কিছুটা সামলে উঠলে, তার কাছ থেকে ‘পাসওয়ার্ড’ জেনে মোবাইলের ‘কল ডিটেলস’ পরীক্ষা করা হবে।

‘ব্লু হোয়েল’ খেলা নিয়ে সম্প্রতি এ রাজ্যেও শুরু হয়েছে তোলপাড়। দিনকয়েক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক ছাত্রকে ‘ব্লু হোয়েল’ খেলার মাঝপথে উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার হাওড়ার এক স্কুল-ছাত্র ওই খেলায় মেতেছে জানতে পেরে, শুরু হয় ‘কাউন্সেলিং’। শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের একটি স্কুলে ক্লাসে বসে হাতে ‘নীল তিমি’র ছবি আঁকায় একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে জেরা করেছে পুলিশ। তা নিয়ে হইচই হয়েছে।

বাঁকুড়াতেও ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসায় উদ্বিগ্ন জেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামাক্ষ্যা বিশ্বাস যেমন বলেন, ‘‘আমার স্কুলের পড়ুয়াদের এমন মারণ খেলা নিয়ে অবশ্যই সচেতন করব। দরকার হলে ছাত্রদের মোবাইল ফোনও ঘেঁটে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE