Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মনে রাখেনি চাঁচল, উদাসীন কলকাতাও

শিবরাম চক্রবর্তীর জন্ম মালদহের চাঁচলে। সেখানেই ছোটবেলা কেটেছে। সেখানে থাকতেও চেয়েছিলেন। পারেননি।

শিবরাম চক্রবর্তী। ছবি: সংগ্রহ।

শিবরাম চক্রবর্তী। ছবি: সংগ্রহ।

বাপি মজুমদার
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৬
Share: Save:

হওয়ার কথা ছিল রাজা। কিন্তু তার বদলে হয়েছিলেন ‘হাসির রাজা’।

শিবরাম চক্রবর্তীর জন্ম মালদহের চাঁচলে। সেখানেই ছোটবেলা কেটেছে। সেখানে থাকতেও চেয়েছিলেন। পারেননি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে চলে এসেছিলেন কলকাতায়। তারপরে কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের মেসবাড়িতেই কাটিয়েছেন সারা জীবন। তাই শিবরামের সঙ্গে কলকাতার অলিগলি জড়িয়ে রয়েছে নানা ভাবে। কিন্তু চাঁচলের কথা জানেনই না অনেকে। বুধবার ১৩ ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিনে চাঁচলের যে সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে তিনি পড়াশোনা করতেন, সেখানে তাঁর আবক্ষ মূর্তিতে মালা দেওয়া হয়। তবে প্রশাসনের তরফে ভূমিপুত্র সাহিত্যিককে সম্মান জানানোর কেন কোনও আয়োজন হল না, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। চাঁচলের মহকুমাশাসক দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট নিয়মের বেড়াজালে থেকে প্রশাসনকে কাজ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসন সম্পূর্ণ সহায়তা করবে।’’

শিবরামের মাসি ছিলেন চাঁচলের জমিদার ঈশ্বরচন্দ্রের স্ত্রী সিদ্ধেশ্বরীদেবী। শিবরামের বাবা শিবপ্রসাদ থাকতেন মুর্শিদাবাদের নিমতিতায়। শিবপ্রসাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় নিঃসন্তান সিদ্ধেশ্বরীদেবী ভগ্নিপতিকে মুর্শিদাবাদের নিমতিতা থেকে চাঁচলে নিয়ে আসেন। শিবরামকে খুব ভালোবাসতেন সিদ্ধেশ্বরীদেবী। তাই নিজেকে জমিদারের উত্তরাধিকারী হিসাবেও হয়তো মনে মনে নিজেকে ভাবতে শুরু করেছিলেন শিবরাম। কিন্তু পরে মেসোমশায় ঈশ্বরচন্দ্র তাঁদেরই আত্মীয় বড়িশার জমিদারবাড়ির শরচ্চন্দ্রকে দত্তক নেন। যিনি পরে চাঁচলের রাজা হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে বিবাদের জেরেই ১৬ বছর বয়সে চাঁচল ছেড়ে কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে ঠাঁই হয় শিবরামের।

চাঁচলে আর না ফিরলেও তাঁর লেখায় ঘুরেফিরে এসেছে চাঁচলের হাট, মাঠ, গ্রন্থাগার সহ নানা এলাকার কথা। রয়েছে তাঁর জন্মস্থান পাহাড়পুরের কথাও।

সিদ্ধ্বেশ্বরী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসরারুল হক জানান, স্কুলের ১২৫ বর্ষপূর্তিতে শিবরামের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এখন পরীক্ষা চলছে। তাই শুধু মালা দেওয়া হল। পরীক্ষার আগে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সাহিত্যিককে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।’’

কিন্তু শিবরাম যে চাঁচলের ভূমিপুত্র তা বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানেন না। সামসি সীতাদেবী গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মধুমিতা পাণ্ডে বলেন, ‘‘কিছু একটা করা খুব জরুরি।’’

প্রশ্ন উঠেছে, শুধু চাঁচল কেন? কলকাতাও কি মনে রেখেছে তাঁর জন্মদিন? সাহিত্যিক শংকর বলেন, ‘‘তিনি শব্দের জাদুকর ছিলেন। মানুষ হিসাবে ছিলেন অসাধারণ। তাঁর কাজের মূল্যায়ন সে ভাবে হয়নি। কিন্তু কে তাঁর জন্মদিন পালন করল, কে করল না— তা দিয়ে ওঁর কাজের মূল্যায়ন করা ভুল হবে। তাঁর সম্পর্কে লেখা বা ছবি ছাপা না হলেও তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। আমরা তাঁর জন্মদিন ভুলে গেলে সেটা আমাদের লজ্জা। ’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE