Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
পুরভোট

আক্রান্তদের পাশে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বার্তা ডোনাদের

কোনও সর্বভারতীয় দলের একের পর এক জেলা দফতরে প্রবল বিক্ষোভ চলছে প্রার্থী নিয়ে! রাজ্যের শাসক দলের কেউ কেউ আবার টিকিট না পেয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে নির্দল দাঁড়িয়ে পড়ছেন। এমন উত্তপ্ত পুরভোটের বাজারে সিপিএমে আপাতত শান্তিকল্যাণ! প্রার্থী নিয়ে প্রবল কাজিয়ার বাজারে তারা বরং সন্তর্পণে অন্য এক বার্তা দিতে সচেষ্ট। কঠিন লড়াইয়ের ময়দানে এ বার সিপিএমের প্রার্থী তালিকায় গুচ্ছ গুচ্ছ নতুন মুখ। নবাগতদের ভিড়েও এ বার পুরভোটে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন আন্দোলন করতে গিয়ে ‘আক্রান্তে’রা।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫৫
Share: Save:

কোনও সর্বভারতীয় দলের একের পর এক জেলা দফতরে প্রবল বিক্ষোভ চলছে প্রার্থী নিয়ে! রাজ্যের শাসক দলের কেউ কেউ আবার টিকিট না পেয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে নির্দল দাঁড়িয়ে পড়ছেন। এমন উত্তপ্ত পুরভোটের বাজারে সিপিএমে আপাতত শান্তিকল্যাণ! প্রার্থী নিয়ে প্রবল কাজিয়ার বাজারে তারা বরং সন্তর্পণে অন্য এক বার্তা দিতে সচেষ্ট।

কঠিন লড়াইয়ের ময়দানে এ বার সিপিএমের প্রার্থী তালিকায় গুচ্ছ গুচ্ছ নতুন মুখ। নবাগতদের ভিড়েও এ বার পুরভোটে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন আন্দোলন করতে গিয়ে ‘আক্রান্তে’রা। গত কয়েক বছরে নানা প্রশ্নে নিজের এলাকায় বা রাজ্য স্তরে পথে নামতে গিয়ে যাঁরা শাসক দল বা পুলিশ-প্রশাসনের ‘আক্রোশের শিকার’ বলে অভিযোগ, সেই সব তরুণ-তরুণীদের এ বার পুরভোটের টিকিট দিয়েছে সিপিএম। তৃণমূল জমানায় বিরোধী সিপিএমের আন্দোলন দারুণ দানা বেঁধেছে, এমন নয়। তবু তার মধ্যেও যাঁরা রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় দেখিয়েছেন, পুুরভোটে প্রার্থী করা তাঁদের সেই ভূমিকার ‘স্বীকৃতি’। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “কমিউনিস্ট পার্টি আন্দোলনের উপরেই গড়ে ওঠে। প্রতিবাদী আন্দোলনে যাঁরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের আমরা আরও দায়িত্ব দিতে চাই। এটা সেই লক্ষ্যেই একটা ছোট পদক্ষেপ।” আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের পাশে নেতারা দাঁড়াচ্ছেন না বলে সিপিএমের অন্দরেই সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সেই রকম ‘আক্রান্ত’ কিছু মুখকে সামনে এনে সেই পাশে থাকার বার্তাও দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে দলেরই একটি সূত্রের ব্যাখ্যা।

এই বার্তা দেওয়ার প্রয়াসে সব চেয়ে এগিয়ে অবশ্যই গৌতম দেবের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। কিন্তু তাঁর বার্তা নিয়ে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্ব ২৪টি পুরসভার প্রার্থী তালিকায় তরুণ রক্ত আমদানি করেছেন দেদার। এবং তার মধ্যেই জায়গা দেওয়া হয়েছে ‘আক্রান্ত, বঞ্চনার শিকার’ বেশ কিছু মুখকে। গোটা জেলায় মোট যত প্রার্থী সিপিএমের, তার মধ্যে বহু মুখ এ বার বয়সে তিরিশেরও নীচে! এবং এর মধ্যেও আবার অগ্রণী কলকাতার উপকণ্ঠে কামারহাটি পুরসভা। সেখানে সিপিএমের প্রতীকে ভোটে লড়তে নেমেছেন ডোনা গুপ্ত, স্নিগ্ধা মৈত্র, ঋতুপর্ণা মিত্র, কোয়েল চক্রবর্তীর মতো তরুণীরা। সাম্প্রতিক কালে সরকার-বিরোধী আন্দোলন এবং প্রতিরোধ করতে গিয়ে যাঁদের রাজরোষের মুখে পড়তে হয়েছে।

ডোনা যেমন। কামারহাটি পুরসভা গত বার ছিল বামেদের হাতেই। তৃণমূল মাঝপথে বোর্ড দখল নেওয়ার পরে যিনি চেয়ারম্যান হয়েছেন, তাঁর বাড়ির ওয়ার্ডেই প্রার্থী হয়েছেন ২৩ বছরের এই স্নাতকোত্তর ছাত্রী। তাঁর নাম নজরে পড়েছিল গত বছর সেপ্টেম্বরে চৌরঙ্গি বিধানসভা উপনির্বাচনের দিন, যখন শাসক দলের ‘গুন্ডা বাহিনী’র হাতে মার খেয়ে গুরুতর আহত ডোনাকে নিয়ে যেতে হয়েছিল এনআরএস হাসপাতালে। দেখতে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। এখন টিকিট পেয়ে ওয়ার্ডের স্থানীয় সমস্যা নিয়েই প্রচারে নেমেছেন ডোনা। সেই সঙ্গেই বলছেন, “এই সরকারের আমলে কর্মসংস্থান নেই। শিক্ষাক্ষেত্রে সার্বিক নৈরাজ্য। আর প্রতিবাদ করতে গেলেই হেনস্থা। এলাকায় বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি যখন, মানুষ আমাদের প্রতিবাদের কথাই বলছেন।” ডোনাদের কাউকেই অবশ্য আগে বলা হয়নি প্রার্থী হওয়ার কথা। নাম ঘোষণার দিন তাঁরা জেনেছেন। ডোনার কথায়, “রাস্তার ধারে পচা পুকুর দেখে অনেকে নাকে চাপা দিয়ে জায়গাটা পেরিয়ে যান। কিন্তু পুকুরে না নামলে তো সেটাকে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়! নির্বাচনী দায়িত্ব পেয়ে সেই কাজটাই করতে চাই।”

স্কুল সার্ভিস কমিশনের চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে প্রশাসনের হেনস্থা সইতে হয়েছে স্নিগ্ধাকে। তিনি বলছেন, “এই সরকার বহু মানুষকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করেছে। আমিও তাঁদের এক জন। আমি তার প্রতিবাদ করতে সিপিএমের হয়ে প্রার্থী হয়েছি।” তাঁর মতে, এসএসসি-র আন্দোলন অবশ্যই অরাজনৈতিক। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে পুরভোটের লড়াইয়ে সিপিএমের পতাকা বেছে নিয়েছেন। স্নিগ্ধার মতো ছেলেমেয়েরা ছড়িয়ে আছেন বনগাঁ থেকে নৈহাটি, কাঁচরাপাড়া থেকে কলকাতাতেও। তাঁদের কেউ ডিওয়াইএফআই বা এসএফআই করেন, কেউ আবার প্রথাগত ভাবে সংগঠন করেন না।

তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা অবশ্য কটাক্ষ করছেন, “ওদের দলে এখন দাঁড়ানোর মতো লোক নেই! তাই নতুন ছেলেমেয়েদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে!” সিপিএম নেতৃত্ব তাতে আমল না দিয়ে বোঝাচ্ছেন, একটি নির্দিষ্ট বার্তাই এই উদ্যোগের নেপথ্যে আছে। দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং প্রাক্তন বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “প্রতিবাদী আন্দোলনে আক্রান্ত হয়েও তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা যে সাহস দেখিয়েছে, আমরা চাই সেই সাহস নিয়েই ওরা আরও এগিয়ে যাক!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE