দেবী দর্শন। শুক্রবার রেড রোডের ভাসান-যাত্রায় যোগ দিল ৩৯টি প্রতিমা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, আগামী বছর এই শোভাযাত্রায় প্রতিমার সংখ্যা বেড়ে হবে ৭৫। সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি। দেবী দর্শন। শুক্রবার রেড রোডের ভাসান-যাত্রায় যোগ দিল ৩৯টি প্রতিমা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, আগামী বছর এই শোভাযাত্রায় প্রতিমার সংখ্যা বেড়ে হবে ৭৫। সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।
ক’বছর আগেও বাঙালির দুর্গোৎসব শুরু হতো সপ্তমী থেকে। তিনি রাজ্যে ক্ষমতায় এসে ষষ্ঠীকে জুড়ে দিয়েছিলেন সরকারি ছুটির তালিকায়। বাঙালিও পঞ্চমীর রাত থেকেই নেমে পড়তে শুরু করেছিল প্রতিমা দর্শনে। তাঁর বদান্যতায় এ বছর পঞ্চমীতেও ছুটি পেয়েছে আমজনতা। এবং তৃতীয়া-চতুর্থী থেকেই ঢল নেমেছিল মহানগরের প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে। বাঙালির বেড়ে চলা এই পুজো উদ্যাপনে বাড়তি মাত্রা জুড়ে শুক্রবার রেড রোডে পুজো কার্নিভালের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিয়েছেন, ‘‘পরের বার মহালয়ার আগে থেকে শুরু করে ১০ দিন ধরে পুজো দেখুন!’’
ঘটনা হল, এ বছর মমতার পুজো-পরিক্রমা শুরু হয়েছিল মহালয়ার দু’দিন আগে থেকেই। শ্রীভূমির মণ্ডপে ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে দেবীপক্ষ শুরু হয়নি বলে পুজোর উদ্বোধন করতে রাজি হননি। যদিও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হোক বা না-হোক, মমতা আসার পর থেকেই সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য কার্যত খুলে গিয়েছিল মণ্ডপের দরজা। অন্যান্য বছরও দেবীপক্ষ পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুজো উদ্বোধনে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা ও শহরতলিতে ঘুরে উদ্বোধন করেন দশ হাতে। এ বছরও মহালয়ার দিন তিনি উদ্বোধন করেছেন নয় নয় করে চারটি পুজো।
আগামী বছর মহালয়া ১৯ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার। তার পরের মঙ্গলবার, ২৬ তারিখ ষষ্ঠী। নবান্নের চলতি নিয়ম অনুসারে সে দিন থেকেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের ছুটি হওয়ার কথা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণার পরে আসছে বছর সরকারি অফিসে আরও এক সপ্তাহ আগে থেকেই ছুটি-ছুটি হাওয়া বইতে শুরু করবে কিনা সেই জল্পনা যেমন শুরু হয়েছে, তেমনই এই প্রশ্নও আনাগোনা করছে যে, দেবীপক্ষের বেড়া না মেনে তবে কি মহালয়ার আগে থেকেই পুজো উদ্বোধন শুরু করে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী?
শাস্ত্রজ্ঞরা অবশ্য তাতে তেমন কোনও দোষ দেখছেন না। তাঁদের মতে, দুর্গাপুজোর মোট সাতটি কল্প— কৃষ্ণা নবম্যাদি, প্রতিপদাদি, ষষ্ঠ্যাদি, সপ্তম্যাদি, অষ্টম্যাদি, কেবলাষ্টমী, কেবল নবমী। এ বছর তার প্রথমটি, অর্থাৎ কৃষ্ণা নবম্যাদি কল্পারম্ভ শুরু হয়েছিল মহালয়ার ছ’দিন আগে, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে। পণ্ডিত সতীনাথ পঞ্চতীর্থের কথায়, ‘‘যিনি যে ভাবে চান কোনও একটি কল্প অনুসরণ করতে পারেন।’’ সেই হিসেবে মহালয়ার আগে পুজো উদ্বোধনে এবং প্রতিমা দর্শনে বিধিভঙ্গ হয় না হলেই শাস্ত্রজ্ঞদের অভিমত।
কিন্তু মহালয়ার আগের দু’টি সপ্তাহ অর্থাৎ পিতৃপক্ষটি পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ বা তর্পণের জন্য নির্ধারিত। অধিকাংশ বাঙালি অবশ্য মহালয়ার দিনটিকেই বেছে নেন তর্পণের জন্য। ফলে অনেকেরই ধারণা দিনটি তেমন ‘শুভ’ নয়। অতএব মহালয়া বা তার আগে প্রতিমা দর্শন তাঁদের না-পসন্দ। এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও একমত নন শাস্ত্রবিদরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, মহালয়ায় তর্পণ শুধু পিতৃপুরুষদের উদ্দেশেই সীমাবদ্ধ নয়। শাস্ত্রে সে দিন আত্মীয়-অনাত্মীয়, পরিচিত-অপরিচিত ত্রিভুবনের সকল প্রয়াতকে জলদান করে তৃপ্ত করার কথা বলা আছে। ‘‘তা হলে সেই দিনকে অশুভ বলে ভাবা হবে কেন’’, প্রশ্ন পণ্ডিত সতীনাথ পঞ্চতীর্থের।
সুতরাং মমতার ঘোষণা আর শাস্ত্রজ্ঞদের বিধান মিলে বাঙালি আগামী বছর মহালয়া থেকেই ঠাকুর দেখার সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু তাতে পুলিশের বিপদ কি বাড়বে না? এ বছর তৃতীয়া থেকেই ভিড় সামলাতে হিমসিম খেয়েছে পুলিশ। যানজটের জেরে অচল হয়ে গিয়েছে শহর। সামনের বছর আবার তৃতীয়া শনিবার। ফলে দ্বিতীয়ার সন্ধে থেকেই না মণ্ডপের পথে হাঁটা শুরু করে জনতা! দশ দিন নাগাড়ে ডিউটি করতে গিয়ে পুলিশ কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠবে না তো? এ বছরই শহরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার কবুল করেছেন, তৃতীয়ার রাত থেকে বাড়তি বাহিনী পথে নামালে শেষের দিকে আর সামাল দেওয়া যেত না।
পুলিশের একাংশের আবার বক্তব্য, পুজো দেখার ভিড়টা পাঁচ দিনের বদলে দশ দিনে ছড়িয়ে গেলে আখেরে চাপ কম পড়বে। দর্শনার্থীরাও তুলনায় আরাম করে ঠাকুর দেখতে পারবেন। এ বছরই যে অষ্টমী-নবমীতে শহরে যান চলাচল অনেক মসৃণ হয়ে গিয়েছিল, সেই উদাহরণ তুলে ধরছেন তাঁরা। লালবাজারের কর্তারা অবশ্য এখনই বিষয়টা নিয়ে সরাসরি কিছু বলছেন না। তাঁদের বক্তব্য, সবে তো এ বারের পুজো শেষ হল! দেখাই যাক, কী হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy