Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal News

পাঁচ বছরেই শিল্পপতি, বাজারে খাটছে ১৫০০ কোটি, আড়ালে জঙ্গিদের ফান্ড!

পাঁচ বছর আগেও দুর্গাপুর-আসানসোলের শিল্পাঞ্চলে সোনু অগ্রবাল ছিলেন একেবারেই অপরিচিত মুখ। কিন্তু এখন সেই সোনু অগ্রবালই ওই শিল্পাঞ্চলে প্রথম সারির শিল্পপতি। দুর্গাপুর চেম্বার অব কমার্স এবং ইন্ডাস্ট্রির এগ্‌জিকিউটিভ কমিটির সদস্যও।

সোনু অগ্রবাল। —নিজস্ব চিত্র।

সোনু অগ্রবাল। —নিজস্ব চিত্র।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:৫৩
Share: Save:

পাঁচ বছর আগেও দুর্গাপুর-আসানসোলের শিল্পাঞ্চলে সোনু অগ্রবাল ছিলেন একেবারেই অপরিচিত মুখ। কিন্তু এখন সেই সোনু অগ্রবালই ওই শিল্পাঞ্চলে প্রথম সারির শিল্পপতি। দুর্গাপুর চেম্বার অব কমার্স এবং ইন্ডাস্ট্রির এগ্‌জিকিউটিভ কমিটির সদস্যও।

এতদিন বাকি শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীরা সোনুকে ঝাড়খণ্ড সরকারের উপরমহলের খুব ঘনিষ্ঠ হিসাবেই জানতেন। কারণ তিনি যেখানেই যেতেন, তাঁর সঙ্গে থাকত ঝাড়খণ্ড পুলিশের দেওয়া সশস্ত্র দেহরক্ষী। ঝাড়খণ্ড পুলিশ সূত্রে খবর, সরকারি নির্দেশেই তারা সোনুর জন্য ছ’জন দেহরক্ষী নিয়োগ করেছে।গত দু’দিন ধরে সেই সোনুর দুর্গাপুর-বিধাননগরের প্রাসাদোপম বাড়ি, কাঁকসায় জয়শ্রী স্টিলের কারখানায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা(এনআইএ)-র টানা তল্লাশি চলার পর, তাঁর অন্য পরিচয়ও সামনে আসছে।

এনআইএ-র আইজি(সদর) অলোক মিত্তল বলেন,“পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডের ১৫টি জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। তৃতীয় প্রস্তুতি কমিটি (টিপিসি) এবং পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (পিএলএফআই)-র মতো অতি বাম জঙ্গি সংগঠনকে আর্থিক মদত দেওয়ার বেশ কিছু নথি এবং নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে।”এনআইএ-র গোয়েন্দাদের দাবি, ওই একই অভিযোগে সোনুর বাড়িতেও তল্লাশি চালান তাঁরা। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, মূলত ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা সোনু। ধানবাদের চিরকুণ্ডায় তাঁরশ্বশুরবাড়ি। তিনি মূলত ছিলেন কয়লার ট্রান্সপোর্টার। ঝাড়খণ্ডের ছাতরার আম্রপালি এবং মগধ কয়লাখনির সঙ্গে তাঁর ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা।

আরও পড়ুন: দুই তৃণমূল সাংসদ ‘কাটমানি’ চেয়েছিলেন! ম্যাথুর মেল সিবিআইয়ের হাতে

সেই ব্যবসা করতে করতে হঠাৎই তাঁর শিল্পপতি হিসাবে উত্থান কী ভাবে?সেই প্রশ্ন গোয়েন্দাদেরও। দুর্গাপুর চেম্বার অব কমার্সের এক সদস্য বলেন, ‘‘পাঁচ-ছ’বছর আগে একের পর এক লোকসানে চলা পিগ আয়রন কারখানা কিনে নিতে থাকেন সোনু। কিনে নেন জয়শ্রী স্টিলও। মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত শিল্পের জমির মূল ক্রেতা হিসাবেই বর্তমানে দুর্গাপুর-আসানসোলের শিল্পপতি মহলে সোনু পরিচিত। এখন বাজারে কম করে সোনুর ১৫০০ কোটি টাকা খাটছে।’’

দুর্গাপুরের বিধাননগরে সোনু অগ্রবালের প্রাসাদোপম বাড়ি।

গোয়েন্দাদের দাবি, সোনুর বাড়িও রাঁচির বাঁধগোড়ায় বালাজি অ্যাপার্টমেন্টের অফিস এবং তাঁর ম্যানেজার বিষ্ণু অগ্রবালের বাড়ি-অফিসেও দিনভর তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকে কম্পিউটার হার্ড ডিস্ক থেকে শুরু করে ব্যাঙ্কের নথি পাওয়া গিয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, উদ্ধার হওয়া নথি থেকে পিএলএফআই এবং টিপিসি-র সঙ্গে আর্থিক যোগাযোগের স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। সোনু-বিষ্ণু ছাড়াও রাঁচি এবং জামশেদপুরে বিপিন মিশ্র, সুরেশ অগ্রবাল এবং বিনীত কেদিয়ার মতো কয়লা ট্রান্সপোর্টারের অফিস ও বাড়িতে তল্লাশি চলে। গোয়েন্দারা হানা দেন বাঁকুড়ার অঙ্কিত স্টিল প্রাইভেট লিমিটেডের কারখানা, রাঁচির আধুনিক ইস্পাত কোম্পানির অফিস এবং বিজিআর কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজারের বাড়িতেও।

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সিপিআই মাওবাদী সংগঠন ভেঙে তৈরি হয়েছিল টিপিসি এবং পিএলএফআইয়ের মতো সংগঠন। ঝাড়খণ্ডের গুমলা,লাতেহার, ছাতরার মতো জেলায় এদের বাড়বাড়ন্ত। সংগঠনের জন্মের পর থেকেই এরা কুখ্যাত হয়ে ওঠে তোলাবাজির জন্য। খনি এলাকা, ঠিকাদারদের ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা তোলা বা লেভি আদায় করতে থাকে। কিছুদিন আগে, বিন্দু বা বিন্দেশ্বর গঞ্জু নামে কুখ্যাত এক টিপিসি নেতাকে গ্রেফতার করার পর এদের আর্থিক নেটওয়ার্কের হদিশ পায় ঝাড়খণ্ড পুলিশ এবং এনআইএ। সূত্রের খবর, বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা লেভি এবং তোলা আদায় করে ওই দুই সংগঠন। সেই সূত্র ধরেই একের পর এক জেলায় হানা দেওয়া শুরু করেছেন গোয়েন্দারা।

ঝাড়খণ্ডে আর এক শিল্পপতির বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে এনআইএ এবং ঝাড়খণ্ড পুলিশ।

তবে দু’দিন ধরে তল্লাশি চালানোর পর গোয়েন্দাদের সন্দেহ, জঙ্গিরা তাদের বিপুল অর্থ ভাণ্ডার এই ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেই বাজারে খাটাচ্ছে। সাদা করা হচ্ছে লেভির কালো টাকা। নোটবন্দির পর থেকে এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। কেউ আর নগদ টাকা নিজেদের হাতে রাখতে চাইছে না। তারা বিভিন্ন ব্যবসায় সেই টাকা ঢালছে। সামনে রাখছে নিজেদের বিশ্বস্ত ব্যাবসায়ীদের। এনআইএ সূত্রে খবর, তাঁরা সেই টাকার হদিশ পেতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের সাহায্য নেবেন।

আরও পড়ুন: বিক্রি করে দেওয়ার নামে পিস্তল জোগাড় ছাত্রের

অন্যদিকে সিপিআই(মাওবাদী)-এর পূর্বাঞ্চলীয় ব্যুরোর মুখপত্র গোটা ঘটনাক্রম প্রসঙ্গে তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘টিপিসি এবং পিএলএফআইয়ের মতো প্রতিক্রিয়াশীল ক্রিমিনাল গ্যাংগুলির হাত শক্ত করেছে ঝাড়খণ্ড সরকার এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরো। সরকার দিনের পর দিন সিপিআই মাওবাদী সদস্যদের খতম করতে ব্যবহার করেছে এদের। অবাধ তোলাবাজিতে মদত দিয়েছে। এখন প্রকাশ্যে আসছে যে, সিপিআই মাওবাদী সংগঠন তোলাবাজির সঙ্গে যুক্ত নয়।’

যদিও, এনআইএ গোয়েন্দাদের দাবি, সিপিআই মাওবাদীরাও ঠিক একই ভাবে তোলাবাজির টাকা বাজারে লগ্নি করছে। সেই টাকারও হদিশ করতে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে এনআইএ।

ছবি: নিজস্ব চিত্র।

(দুই বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, 'বাংলার' খবর পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Terror Funding NIA Durgapur Maoist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE