এমনিতে দেশি গ্রেনেড, সকেট বোমা, বুলেট, বিস্ফোরক, জাল নোটের উৎস সন্ধান করতে হয় তাঁদের।
কিন্তু এখন কমোড, প্যান, সিস্টার্ন, পাইপ, স্টপ কক, অ্যাঙ্গুলার স্টপ কক, বালি সিমেন্ট কিনে সে সবেরও হিসেব রাখতে হচ্ছে।
সাধারণত তাঁদের নজরদারি জঙ্গি, জাল নোটের কারবারিদের উপরে।
তবে এখন নিয়মিত রাজমিস্ত্রি, কলের মিস্ত্রির কাজের উপরেও কড়া নজর রাখতে হচ্ছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র গোয়েন্দাদের।
আর এ ক্ষেত্রে কলকব্জা, বালি-সিমেন্টের সঙ্গে এ ক্ষেত্রে পিকরিক অ্যাসি়ড, লেড অ্যাজাইডের মতো বিস্ফোরকের সম্পর্ক একেবারেই নেই, তা কিন্তু নয়।
কারণ, বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী দিয়ে সল্টলেকে আইবি ব্লকের এনআইএ অফিসের লকআপগুলোর গা ঘেঁষে তৈরি করা হচ্ছে শৌচকর্ম ও স্নান করার জায়গা। যা এতদিন ছিল না। কিন্তু বন্দিদের জন্য ওই ব্যবস্থা না থাকলে যে বিপদ হতে পারে, সে দিকে প্রথমে কারও খেয়াল হয়নি। হয়তো নজরে পড়তও না, যদি না গত ২৩ অগস্ট চানঘরের কাচ খুলে এক বন্দি পালাতে গিয়ে চার তলা থেকে পড়ে জখম হত! তার পরেই টনক নড়ে এনআইএ-র কর্তাদের। যত শীঘ্র সম্ভব, লকআপ লাগোয়া শৌচাগার তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওই ঘটনার পর থেকে নিজেদের লকআপে এক রাতের জন্যও বন্দিদের রাখতে সাহস পাচ্ছে না এনআইএ। তাদের হেফাজতে যে সব অভিযুক্তকে পাওয়া যাচ্ছে, প্রয়োজনে দিনভর তাঁদের জেরা করা হচ্ছে আইবি ব্লকের অফিসে। রাতে তাঁদের রাখা হচ্ছে বিধাননগর দক্ষিণ থানায়। আইবি ব্লকের ১৬৩ নম্বর ওই চারতলা বাড়ির গোটাটাই জুড়ে থাকা এনআইএ অফিস বিধাননগর দক্ষিণ থানা এলাকার মধ্যে। থানার পুলিশের পাশাপাশি সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-র জওয়ানেরাও পাহারা থাকছেন। যাঁরা সল্টলেকে এনআইএ অফিসের পাহারা দেন। ওই থানার লকআপ গত চার মাসে প্রায় ২০ বার ব্যবহার করেছে এনআইএ।
তবে এনআইএ-র গোয়েন্দাদের একাংশের বক্তব্য, নিজেদের বন্দিকে এই ভাবে চোখের আড়ালে রাখার ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই, যত শীঘ্র সম্ভব, শৌচাগার তৈরির কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।
পুলিশি সূত্রের খবর, বিধাননগর দক্ষিণ থানায় বন্দিদের জন্য লকআপ লাগোয়া শৌচাগার আছে। এনআইএ-র এক শীর্ষকর্তা বুধবার বলেন, ‘‘আমাদের সল্টলেক অফিসে লকআপগুলোর গা ঘেঁষে সুরক্ষিত শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে বন্দিদের জন্য। আগেও লকআপের কাছে শৌচালয় ছিল। কিন্তু সেগুলো সুরক্ষিত ছিল না।’’ ওই অফিসারের কথায়, ‘‘পালাতে গিয়ে বন্দি জখম হওয়ার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে শৌচালয়ের সুরক্ষার বন্দোবস্ত হয়েছে।’’ এনআইএ সূত্রের খবর, নতুন দু’টি শৌচাগারও তৈরি হচ্ছে।
পড়ুন: এনআইএ-র চানঘরে কাচ খুলে পালানোর চেষ্টা, বন্দি হাসপাতালে
লালবাজারের সেন্ট্রাল লকআপ, ভবানী ভবনে পাঁচ তলায় সিআইডি-র লকআপ ও কলকাতার অধিকাংশ থানার লকআপের মধ্যেই কিন্তু শৌচকর্ম ও স্নান করার বন্দোবস্ত। লকআপের ভিতরে একটি ঘেরাটোপ দিয়ে ওই জায়গা আড়াল করে রাখা। জলের কল, বালতি, মগও থাকে বন্দিদের জন্য।
লালবাজারের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী, ফাটকে বন্দিদের এমন ভাবে রাখতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ হিসেবে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধে পেয়ে তাঁরা সুস্থ ভাবে থাকতে পারেন। সেই জন্য এবং নিরাপত্তার কারণে ফাটকের মধ্যেই তাঁদের শৌচকর্ম করা ও স্নানের বন্দোবস্ত রাখা উচিত।’’
তবে এনআইএ-র এক শীর্ষকর্তার যুক্তি, ‘‘লকআপের মধ্যেই শৌচাগার রাখতে হবে, এমনটা বাধ্যতামূলক নয়। বরং, লকআপের মধ্যে কোনও বন্দি ওই ঘেরাটোপের সুযোগ নিয়ে কোনও বিপজ্জনক কিছু ঘটাতে পারে, নিজেরও ক্ষতি করতে পারে। তাই, লকআপ ঘেঁষা সুরক্ষিত শৌচাগার সব চেয়ে নিরাপদ।’’
এনআইএ সূত্রের খবর, দিল্লির জয় সিংহ রোডে এনআইএ সদর দফতরে কোনও লকআপ নেই। এনআইএ-র বন্দিদের রাখা হয় সিবিআইয়ের লকআপে। লোদী রোডের সিজিও কমপ্লেক্সে এনআইএ-র নিজস্ব ভবন তৈরি হলে সেখানে লকআপ থাকবে।
এ বছর জুনের গোড়ায় আইবি ব্লকের চারতলা ভাড়া বাড়িতে সরে আসে এনআইএ। তার আগে সেক্টর ফাইভে সিআরপি-র থার্ড সিগন্যাল ব্যাটেলিয়নের দফতরে তারা অস্থায়ী ভাবে কাজ চালাচ্ছিল। আইবি ব্লকের ওই বাড়িতে উঠে যাওয়ার পর খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় ১৮ জুন ধৃত ডোমকলের নুরুল হক মণ্ডল ওরফে নইম, জাল নোট কারবারের মামলায় ২৩ জুন ধৃত কালিয়াচকের সোনাউল ওরফে মামা, জাল নোটের অন্য একটি মামলায় ধৃত ওড়িশার সুশান্ত সাহুর মতো অভিযুক্তদের সেখানে রাতের পর রাত রাখা হয়েছে। কিন্তু ২৩ অগস্ট ভোরে ওই বাড়ির চারতলার চানঘরের কাচ খুলে পালাতে গিয়ে নীচে পড়ে জখম হয় জাল নোটের মামলাতেই ধৃত, পঞ্জাবের রাজেনকুমার চোপড়া।
ওই বাড়ির একাধিক লকআপে বন্দিদের রাখার সেখানেই ইতি। অক্টোবরে জাল নোট চক্রের চাঁই উত্তম সিংহকে এনআইএ ধানবাদে গ্রেফতার করে। এনআইএ-র হেফাজতে থাকাকালীন উত্তমকে রাতগুলো কাটাতে হয়েছে বিধাননগর দক্ষিণ থানার লকআপে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy