Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূল-ত্যাগ নিমাইয়ের

’৮০-র দশকের শেষ দিকে খুন হতে হয়েছিলেন নিমাইয়ের বাবা ক্ষুদিরাম দাস। অভিযোগ ছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে।

নিমাই দাস । নিজস্ব চিত্র

নিমাই দাস । নিজস্ব চিত্র

বাসুদেব ঘোষ
বোলপুর শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৯ ০১:০১
Share: Save:

ভাঙন দেখা দিয়েছে নানুর ও লাভপুরে। তৃণমূলের ঘর ভেঙেছে পাড়ুইয়েও। এক সময় পাড়ুইয়ে তৃণমূলের দাপুটে নেতা নিমাই দাসও মনিরুলদের সঙ্গে বুধবার যোগ দিয়েছেন বিজেপি-তে। পাড়ুইয়ের রাজনীতির অন্যতম মুখ হিসাবে এক সময়ে উঠে এসেছিলেন নিমাই। জেলার রাজনীতিতে তিনি একাধিকবার দল বদল করেছেন। কংগ্রেস দিয়ে শুরু করে তৃণমূলে গিয়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। আবার তৃণমূলে গিয়ে ফের বিজেপি-তে যোগ।

’৮০-র দশকের শেষ দিকে খুন হতে হয়েছিলেন নিমাইয়ের বাবা ক্ষুদিরাম দাস। অভিযোগ ছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে। সেখান থেকেই শুরু হয় নিমাইয়ের প্রতিবাদের রাজনীতি। কংগ্রেস দিয়ে যার শুরু। এর পরে ১৯৯৮ সালে তৃণমূলে যোগদান করেন নিমাই দাস। ২০১১ সালের পর থেকেই নিমাইকে নিয়ে দলের মধ্যেই মনোমালিন্য তৈরি হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে পাড়ুইয়ে বিজেপি দাঁত ফোটাতে শুরু করে। সেই সময় দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলে এক প্রকার কোণঠাসা হয়ে পড়েন নিমাই। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে পরেই পাড়ুইয়ে বিজেপি-র অভূতপূর্ব উত্থান হয়। এলাকা দখলকে ঘিরে শুরু হয় তৃণমূল-বিজেপি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।

সেই সময় তৃণমূলের বহু বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী বিজিপি-তে যোগ দিতে শুরু করেন। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে বিজেপি-র তৎকালীন জেলা সভাপতি, বর্তমানে বীরভূম কেন্দ্রের প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডলের এর হাত ধরে বোলপুর ডাকবাংলো মাঠের একটি জনসভা থেকে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত কসবা অঞ্চলের নিমাই দাস, হৃদয় ঘোষ-সহ ৫০০ জন কর্মী তৃণমূল ছাড়েন। পরে সংগঠন এবং নেতৃত্বের অভাবে বিজেপি-র প্রভাবও কমতে শুরু করে। । মিথ্যা মামলায় বহু বিজেপি কর্মী-সমর্থককে সেই সময় জেলে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিজেপিতে চলে যাওয়া নিমাই দাস, হৃদয় ঘোষ-সহ সেই সব কর্মী ২০১৫ সালের জুলাইয়ে অনুব্রত মণ্ডলের হাত ধরে তৃণমূলে ফিরে আসেন। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে কসবা অঞ্চলের প্রধান নির্বাচিত হন নিমাইয়ের স্ত্রী শঙ্করী দাস। পরে নিমাইয়ের সঙ্গে তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর মনোমালিন্য uয়। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে দল বিরোধী কাজের অভিযোগে শঙ্করী দাসের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়। সেই অনাস্থা ভোটে ১১-০ ভোটে পরাজিত হন শঙ্করী। এর পর থেকে তৃণমূলের কর্মসূচিতে আর সেই ভাবে দেখা যায়নি নিমাইকে।

এ বার লোকসভা ভোটের পরে পরিস্থিতির আমূল বদল ঘটেছে। বিজেপি-র বাড়বাড়ন্তে আবার নিমাইয়ের মতো বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীরা সেখানে নাম লেখানোর জন্য পা বাড়াচ্ছেন বলে সূত্রের খবর। জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ অবশ্য বলেন, ‘‘নিমাই দলের কোনও পদে ছিলেন না। দীর্ঘদিন ধরে দলের থেকে দূরে ছিলেন। ওঁরা বিজেপি-তে যাওয়ায় দলে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’ কেন আবার বিজেপি-তে গেলেন, জবাবে দিল্লি থেকে ফোনে নিমাই বলেন, ‘‘ন্যায়ের পথে লড়াই করেছি। ওই পথেই লড়াই করতে চাই। পাড়ুইয়ের মাটি আবার শক্ত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাব।’’

পাড়ুই আবার তাতবে কিনা, সে প্রশ্ন থেকে গেল সময়ের হাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nimai Das Parui TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE