Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

রথযাত্রায় কার্যত মাছি তাড়াল ‘মিনি চিৎপুর’

ছোট্ট ঘরের কোণে রাখা টেবিল। তার উপরে কিছু কাগজপত্র। নায়েকদের বসার জন্য গোটা কয়েক চেয়ার। দেওয়ালে টাঙানো পোস্টার। সেই ঘরে বসে পুরনো দিনের কথা শোনাচ্ছিলেন ‘শিল্পী নিকেতন’ যাত্রাসংস্থার মালিক মৃণালকান্তি গুহ।

নিজের গদিঘরে একাই বসে থাকেন মৃণালকান্তি গুহ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজের গদিঘরে একাই বসে থাকেন মৃণালকান্তি গুহ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০১:৪৮
Share: Save:

ছোট্ট ঘরের কোণে রাখা টেবিল। তার উপরে কিছু কাগজপত্র। নায়েকদের বসার জন্য গোটা কয়েক চেয়ার। দেওয়ালে টাঙানো পোস্টার। সেই ঘরে বসে পুরনো দিনের কথা শোনাচ্ছিলেন ‘শিল্পী নিকেতন’ যাত্রাসংস্থার মালিক মৃণালকান্তি গুহ। ‘‘কী আনন্দেই না কেটেছে সেই সব দিন। মফস্‌সলের এই অফিস থেকে কত যাত্রা বুকিং হয়েছে। রথের দিন নায়েকদের ভিড়ে উপচে পড়ত ঘর। ভিড় সামলাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হত। এখন যাত্রায় অভিনয় করার লোকই মেলে না। বুকিং তো দূর।’’— খেদ ঝরে তাঁর গলা থেকে।

একটু থেমে বলেন, ‘‘যাত্রা করে এখন ক’টাকা আর মেলে। উল্টে বেড়ে গিয়েছে খরচ। তাই এখন আর কেউ এ পথ মাড়াচ্ছেন না। ভালবাসি তাই টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। জানি না কতদিন সম্ভব হবে।’’ শুধু মৃণালবাবু নন, সুদিন যাওয়ায় এমন খেদোক্তি শোনা গেল অনেকেরই গলায়।

এক সময় শিয়ালদহ-রানাঘট শাখার চাকদহ রেলস্টেশনে কমবেশি ১৫টি গদিঘর ছিল। অধিকাংশেরই নিজস্ব যাত্রাদল ছিল। সে সব গদিঘরে স্থানীয়, কলকাতা বা জেলার বিভিন্ন যাত্রাদলের বুকিং হত। স্টেশন ছাড়াও আশপাশ এলাকায় ছিল বেশ কয়েকটি যাত্রাদল ও তাদের বুকিং অফিস। সব মিলিয়ে ৪০টির মতো যাত্রাদল ছিল। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নায়েকরা এখানে আসতেন যাত্রা বুকিং করতে। রথের আগের রাত থেকেই বুকিং ঘর ভরে যেত। নায়েকদের মধ্যে শুরু হত ঠান্ডা লড়াই। সকলেই চাইতেন সবার আগে তাঁদের যাত্রাপালা বুকিং করতে। পরদিন সকাল থেকে শুরু হত বুকিংয়ের পালা। অফিস বা যাত্রা ঘরগুলো ফুল দিয়ে সাজানো হত। সন্ধ্যায় বসত যন্ত্রসঙ্গীতের আসর। নায়েক ছাড়াও, অভিনেতা, বাদ্যশিল্পী, হেয়ার ড্রেসার, মেক-আপ ম্যান, নৃত্য শিল্পী, বিভিন্ন ক্লাব কর্তাদের ভিড়ে উপচে পড়ত গদিঘর।

সে সব অতীত। বুকিং অফিসের সংখ্যা কমতে কমতে একটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর যাত্রার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন চাকদহ রঞ্জনপল্লির বাসিন্দা মদন দাস। যাত্রায় কখনও যুবক কখনও বা বৃদ্ধের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। আক্ষেপের সুর তাঁর গলাতেও। মদনবাবু বলেন, রুচিও। আগে লোকে যাত্রা দেখে মনের খোরাক মেটাতেন। এখন ঘরে বসে টিভিতেই সেই স্বাদ মিটছে। তাই যাত্রা দেখতে কেউ আর তেমন যাচ্ছেন না। এমনকী, যাত্রার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এখন অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন।’’

কল্যাণী মহকুমার তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক সূর্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাত্রাকে বাঁচাতে রাজ্য সরকারের তরফে এক যাত্রা অ্যাকাডেমি গড়া হয়েছে। নানা জায়গায় যাত্রা উৎসব করা হয়। বিভিন্ন দলকে সেখানে অভিনয়ের সুযোগ করে দেওয়া হয়। প্রবীণ অভিনেতাদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE