বিভিন্ন হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগ-সহ বিচার বিভাগের নানা ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ ইদানীং প্রবল হয়েছে। তার মধ্যেই অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কৌশিক চন্দের দাবি, কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কোনও রকম নেতিবাচক মনোভাব নেই।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে কৌশিকবাবু আরও জানান, ন্যাশনাল জুডিশিয়াল কমিশন নিয়ে শীর্ষ আদালতে যে-মামলা হয়েছিল, তাতে কেন্দ্র হেরে গিয়েছে। কেন্দ্র তার পরে নীতিগত ভাবে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের উপরেই ছেড়ে দিতে চায়। কেন্দ্রের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক নয়। কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের একটি রিপোর্ট আদালতে পেশ করেন কেন্দ্রের কৌঁসুলি। সব মিলিয়ে কেন্দ্রের অবস্থানে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামেরই জয় দেখছে আইন ও বিচার মহল।
গত অগস্টে জনস্বার্থ মামলাটি করেন আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার। মামলার আবেদনে তিনি জানান, কলকাতা হাইকোর্টে ৭২ জন বিচারপতি থাকার কথা। পরিকাঠামো আছে ৫৪ জন বিচারপতি নিয়োগের। কয়েক বছর আগেও ৪৫ জনের বেশি বিচারপতি ছিলেন। প্রায় প্রতি বছরই একাধিক বিচারপতি অবসর নিচ্ছেন। এখন বিচারপতির সংখ্যা ৩৩। চলতি মাসে আরও তিন বিচারপতি অবসর নেবেন। বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে হাইকোর্টকে সক্রিয় হওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে মামলার আবেদনে।
বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত ও বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চে এ দিনের শুনানিতে কৌশিকবাবু জানান, নিয়োগের বিষয়টি বিচার বিভাগের এক্তিয়ারে। এই মামলা হাইকোর্টের গ্রহণ করা উচিত হবে না। কেননা হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে মামলা শুনে কোনও নির্দেশ দিতে হলে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের তরফে সর্বোচ্চ আদালতকেই নির্দেশ দিতে হয়। সেটা বাঞ্ছনীয় নয়।
আদালতের খবর, আইন মন্ত্রকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, হাইকোর্টে সম্প্রতি ছ’জন বিচারপতি নিযুক্ত হয়েছেন। ২০ জন আইনজীবীর নাম সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়ে বলা হয়েছে, তাঁরা বিচারপতি হওয়ার যোগ্য বলে মনে করছে উচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট ওই সুপারিশ বিবেচনা করুক। বিবেচনার প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। কাজেই কেন্দ্র হাত গুটিয়ে বসে নেই।
কলকাতা হাইকোর্টকেও যুক্ত করা হয়েছে এই মামলায়। হাইকোর্টের পক্ষে আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্ত আদালতে জানান, কলকাতা হাইকোর্ট দেশের প্রাচীন হাইকোর্টগুলির অন্যতম এবং তার নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে। বহু বিচারপতি-পদ খালি পড়ে থাকায় বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। ডিভিশন বেঞ্চে লক্ষ্মীবাবুর আবেদন, মামলাটির গ্রহণযোগ্যতা না-থাকলে বিচারপতিরা যেন সেটি শীর্ষ আদালতে পাঠিয়ে দেন। বিচারপতি করগুপ্ত আবেদনকারীকে পরামর্শ দেন, মামলা প্রত্যাহার করে তিনি সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন।
হাইকোর্টের কৌঁসুলি জানান, মামলাটি গ্রহণযোগ্য মনে না-করার কারণ ব্যাখ্যা করে ডিভিশন বেঞ্চই যদি সেটি সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনার জন্য পাঠায়, তা হলে ভাল হয়। তা শুনে বিচারপতি শরাফ বলেন, আবেদনকারীর বক্তব্য, মামলাটি করা হয়েছে জনস্বার্থে। কিন্তু আবেদনকারী পর্যাপ্ত তথ্য দেননি। তাঁর উচিত ছিল যথেষ্ট খেটেখুটে মামলাটি দায়ের করা। তা হলে সুবিধা হত।
মামলাটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে শুনানি হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি। এ দিনই খবর এসেছে, অস্থায়ী থেকে কলকাতা হাইকোর্টের স্থায়ী প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy