Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কিছু কিন্তু দেখেননি, সে হুমকির দিন শেষ

ডেঙ্গিতে কাহিল দেগঙ্গায় রাস্তায় ছড়ানো ব্লিচিং পাউডার খুঁটে খাচ্ছিল মুরগি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪০
Share: Save:

ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল নন্দীগ্রামে। ধর্ষিতার সঙ্গে দেখা করতে বাধা পেতে হয়েছিল নাগরিক আন্দোলনের কর্মীদের। পরের দিনই শাসক দলের স্থানীয় কর্মীদের নাম কেন জড়ানো হল, সেই প্রশ্ন তুলে খালের ও’পারে খেজুরিতে ধর্ষিতার স্বামীকে বেধড়ক মারধর করা হল। তার পরে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে গেলেন ধর্ষিতার স্বামীই! মারধরের ঘটনা যখন ঘটছে, সেই সময়েই ভিডিও তুলে নিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক জন। আর তা থেকেই জানাজানি হয়ে গিয়েছে ঘটনা চাপা দেওয়ার ওই বেপরোয়া চেষ্টা!

ডেঙ্গিতে কাহিল দেগঙ্গায় রাস্তায় ছড়ানো ব্লিচিং পাউডার খুঁটে খাচ্ছিল মুরগি। ছবি উঠে যাওয়ার পরে গ্রামবাসীদের সোরগোলে ধরা পড়ে গেল ব্লিচিং পাউডারের কেলেঙ্কারি! কয়েক দিনের মধ্যেই পদযাত্রার ফাঁকে ভাটপাড়া পুরসভার সামনে গরুকে ব্লিচিং পাউ়়ডার চেটে খেতে দেখে ছবি তুলে রাখলেন বাম গণসংগঠনের কর্মীরা। ছবি হাতে আসার পরেই এলাকায় সমাবেশ থেকে বাম নেতারা প্রশ্ন তুললেন, ডেঙ্গি মোকাবিলার নামে এ কেমন ব্লিচিং পাউ়ডার?

উদাহরণগুলো টাটকা। কিন্তু বিরল নয়। স্মার্টফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে কাজ এ বার সহজ হয়ে যাচ্ছে বিরোধীদের! অস্বস্তি বাড়ছে শাসকের! ঘটনা ঘটলে ‘আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি’ বলে শাসকের হাত ধুয়ে ফেলার দিন শেষ! নন্দীগ্রামের মতো জায়গায় যেখানে শাসকের দাপটে আর কারও পা রাখার জমি নেই, সেখান থেকেও বেরিয়ে আসছে অন্যায়ের ছবি। দ্রুত সরব হতে পারছেন বিরোধীরা। যে সোশ্যাল মিডিয়া শুরুতে ছিল বিবৃতি দেওয়ার নয়া মাধ্যম, সেটাই এখন আন্দোলন গড়ে তোলার অতি কার্যকরী অস্ত্র।

জাতীয় স্তরে সব দলই এখন সোশ্যাল মিডিয়াকে নিয়ে গিয়েছে আন্দোলনের স্তরে। কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর নব্য টুইটার-সক্রিয়তা যার হাতে গরম দৃষ্টান্ত। কয়েক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গুজরাতের দহেজে গিয়ে রো-রো ফেরি পরিষেবা চালুর ঘোষণা করা মাত্রই কংগ্রেস এবং সিপিএম পাঁচ বছর আগের সেই ভিডিও ক্লিপিং বাজারে ছেড়ে দিয়েছে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মোদী তখনও একই ঘোষণা করছেন! তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, সিপিএমের মহম্মদ সেলিম বা কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী মেনে নিচ্ছেন, সোশ্যাল মিডিয়া এখন আর খাটো করে দেখার জায়গায় নেই।

তবে এর মধ্যেই বিরোধী নেতাদের একাংশের আশঙ্কা, স্মার্টফোনে সহজে কাজ হাসিল হয়ে যাচ্ছে বলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সঙ্গে মেশার পুরনো প্রবণতা হারিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় বারো মাস না থাকার ফলে ভোটের দিন গুন্ডাবাহিনীর দাপটের সময়ে বিরোধীদের দেখা মিলছে না বুথ কামড়ে লড়াইয়ে। বিমান বসুর মতো প্রবীণ নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ইন্টারনেট কাজের জিনিস ঠিকই। কিন্তু পরিশ্রমের বিকল্প রাজনীতিতে আজও নেই।

পরঞ্জয় গুহঠাকুরতার মতো কেউ কেউ আবার মনে করাচ্ছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার এই দাপটের যুগে ‘ফেক’ ছবি বিশ্বাসযোগ্য করে দেওয়াও সহজ! অস্ত্রের ব্যবহার তাই হওয়া উচিত সতর্কতা রেখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE