Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘এ তো আমারও দেশ, তা হলে বিভাজন কেন’

নয়া এই আইনের প্রতিবাদে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা শান্তি মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন এমন অনেকেই, যাঁরা আদতে কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক নন

একজোট: নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে পথে। সোমবার, ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

একজোট: নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে পথে। সোমবার, ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:৪৯
Share: Save:

মিছিলে পাশাপাশি হাঁটছেন বছর উনিশ এবং একুশের দুই তরুণী— জোয়া আর জেবা। বোরখায় মুখ ঢাকা দুই বোনের এক জনের হাতে ভারতের জাতীয় পতাকা। অপর জনের গলা থেকে ঝুলছে লাল রঙা ব্যানার। তাতে লেখা— মরতেও রাজি। কিন্তু নতুন নাগরিকত্ব আইন মানছি না।

নয়া এই আইনের প্রতিবাদে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা শান্তি মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন এমন অনেকেই, যাঁরা আদতে কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক নন। যেমন, পার্ক সার্কাসের নাসরিন খান। এ দিনের মিছিলে এসেছিলেন দুই মেয়ে জোয়া-জেবাকে সঙ্গে নিয়ে। নাসরিনের কথায়, ‘‘আমি এসেছি এক জন মহিলা এবং এ দেশের এক জন নাগরিক হিসেবে। এ দেশে আমার জন্ম। ছোট থেকে এই দেশকেই নিজের বলে মনে করে সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছি। আর এখন নতুন আইন করে বলা হচ্ছে, আমরা মুসলিম তাই এ দেশের নাগরিক নই?’’

সংবিধান অনুযায়ী ভারত যে এখনও একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে আরও এক বার তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন গৃহবধূ নাসরিন। দৃপ্ত কণ্ঠে জানাচ্ছেন, বিভাজনের রাজনীতি মানতে চান না। নাসরিনের কথায়, ‘‘এ দেশ যেমন শুধু মুসলিমদের নয়, তেমনই শুধু হিন্দুদেরও নয়। সংবিধানে স্পষ্টই বলা হয়েছে সে কথা। এ তো আমারও দেশ। তা হলে এই বিভাজন কেন? যাঁরা সেই সংবিধান না মেনে নতুন আইন করে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বিভাজনের রাজনীতি করতে চান, তাঁদের আমি নেতা বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মানি না।’’

নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তো বটেই, এ রাজ্যের একাধিক জায়গাতেও টায়ার জ্বালিয়ে, ট্রেনে পাথর ছুড়ে গোলমাল করেছেন অনেকে। জাতীয় সড়ক থেকে রেল অবরোধ— চলছে অনেক কিছুই। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা এ

দিনের শান্তি মিছিলে অবশ্য দলীয় সমর্থকদের তুলনায় রাস্তার দু’ধারে বেশি দেখা গিয়েছে সাধারণ মানুষকেই। পুরুষদের পাশাপাশি এই মিছিলে পা মিলিয়েছেন বহু মহিলাও। ঘরের কাজ, রান্না সামলে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ের হাত ধরে এ দিন তাঁরা নেমে এসেছেন রাস্তায়, নিজেদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে।

নাসরিনের মতোই এ দিনের মিছিলে হেঁটেছেন জোড়াসাঁকোর জিনাত পারভিন। দিল্লির জামিয়া মিলিয়া কিংবা আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে পুলিশ ঢুকে কী ভাবে পড়ুয়াদের উপরে লাঠি চালিয়েছে, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে, ভাঙচুর চালিয়েছে হস্টেলে— তার সবটাই দেখেছেন টিভির পর্দায়। সেই ছবি দেখার পরে আর ঘরে বসে থাকতে মন সায় দেয়নি তাঁর। জিনাতের কথায়, ‘‘এমন ছবি দেখার পরে আর কী করে নিজেদের শান্ত রাখব? এই সময়েও যদি রাস্তায় না বেরোই, তা হলে কবে বেরোব?’’

পথে নামার আগে কি কোনও দ্বিধা ছিল? প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই নাসরিন-জিনাতের সমবেত উত্তর, ‘‘দ্বিধার কোনও প্রশ্নই নেই। সংবিধানবিরোধী কাজ তো আর আমরা করছি না।

রাস্তায় নেমে সেই আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করব। এ দেশকে ধর্ম দিয়ে ভাগ করা যাবে না। কিছু দল দুই ধর্মের লোকজনের মধ্যে গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করবে। তাই এ সময়ে আমাদের কাজ শক্ত হয়ে একে অপরের পাশে থাকা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE