Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রাতে হামলা, নিহত হাওড়ার ত্রাস রামুয়া

রাত পৌনে একটা নাগাদ আচমকাই বেজে উঠেছিল ফ্ল্যাটের কলিং বেল। যা শুনে ধড়মড় করে উঠে বসে মাটিতে শুয়ে থাকা রামমূর্তি দেওয়ার (৪৮) ওরফে রামুয়া।

রামমূর্তি দেওয়ার ওরফে রামুয়া।

রামমূর্তি দেওয়ার ওরফে রামুয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২০
Share: Save:

রাত পৌনে একটা নাগাদ আচমকাই বেজে উঠেছিল ফ্ল্যাটের কলিং বেল। যা শুনে ধড়মড় করে উঠে বসে মাটিতে শুয়ে থাকা রামমূর্তি দেওয়ার (৪৮) ওরফে রামুয়া। ঘুম ভেঙে যায় পাশে শুয়ে থাকা ছেলেরও। অত রাতে কে বা কারা এল, তা দেখতে নীচে নেমে দরজা খুলতেই রামুয়ার ছেলেকে রিভলভারের মুখে দাঁড় করিয়ে উপরে উঠে এসেছিল এক দল দুষ্কৃতী। তারাই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে স্রেফ একটা গুলি চালিয়ে মেরে দিল হাওড়া দাপিয়ে বেড়ানো ওই কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে।

পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার রাতে সোদপুরের অমরাবতী এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। রামুয়ার মাথার ডান দিক দিয়ে গুলি ঢুকে বাঁ দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গেলেও পুলিশ কিংবা প্রতিবেশীদের কিছু না জানিয়ে রামুয়াকে নিয়ে তার পরিবার সোজা চলে গিয়েছিল পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেই সময়ে হাসপাতালে থাকা ঘোলা থানার অফিসারেরা বি‌ষয়টি দেখে খড়দহ থানায় খবর দেন। তখন হাসপাতালে আসেন খড়দহ থানার অফিসারেরা।

পুলিশ জানায়, রামুয়ার স্ত্রী কাজল দেওয়ার প্রথমে কিছুই খোলসা করে বলতে চাননি। পরে চাপ দিয়ে জেরা করতেই জানা যায় নিহতের আসল পরিচয়। সে হাওড়া সিটি পুলিশের খাতায় কুখ্যাত তোলাবাজ ও খুনের আসামি হিসেবে পরিচিত রামুয়া। ১৯৯৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রায় ২০টি মামলা রয়েছে তার নামে। গত সেপ্টেম্বরে তোলাবাজি ও খুনের চেষ্টার মামলায় হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট থানা রামুয়াকে গ্রেফতার করে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সে অমরাবতী এলাকায় স্ত্রীর ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে ‘আত্মগোপন’ করে।

রামুয়ার ছেলে সমীর জানিয়েছেন, তিনতলার ফ্ল্যাটে সেই রাতে বাবার সঙ্গে তিনিও মেঝেতে শুয়েছিলেন। বিশাখাপত্তনমের কলেজে এমবিএ পাঠরত ওই যুবকের দাবি, নীচে নেমে কোল্যাপসিবল গেট খোলার সময়ে তিনি দেখেন, বাইরে জনা ১১ যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদেরই দু’জন মাথায় রি‌ভলভার ঠেকিয়ে তাঁকে নীচে আটকে রাখে। বাকিরা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। সমীর বলেন, ‘‘ওরা বলেছিল, চেঁচালে প্রাণে মেরে দেবে। এর কিছু পরেই গুলির আওয়াজ শুনে উপরে গিয়ে দেখি, বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। বাবাকে ধরতে গেলাম, তার মধ্যেই ওই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।’’ প্রত্যেকেই মোটরবাইকে চেপে এসেছিল বলে জানিয়েছেন সমীর।

স্ত্রী কাজলের দাবি, মুখ ঢাকা আট-ন’জন দুষ্কৃতী ঘরে ঢুকেই রামুয়ার মাথায় রিভলভার চেপে ধরে। এক দুষ্কৃতী কাজলের মাথাতেও রিভলভার ঠেকিয়ে হুমকি দেয়। তিনি বলেন, ‘‘আট বছরের মেয়েকে নিয়ে ভয়ে চুপ করে বসে ছিলাম। তার পরেই ওরা গুলি চালাল। কাউকেই চিনতে পারিনি।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, রামুয়ার স্ত্রী ও ছেলের আরও দাবি, অপরিচিত কেউ এসেছে টের পেয়ে সদ্য কেনা নাইন এমএম রিভলভারে গুলি ভরছিল রামুয়া। তার মধ্যেই দুষ্কৃতীরা উপরে উঠে এসে ওই রিভলভারটি কেড়ে নেয়।

তদন্তকারীরা জেনেছেন, গত জুনে কাজলই অমরাবতী এলাকার ঋষি অরবিন্দ সরণির ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। মালিক সুদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘১১ মাসের চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছিলাম। উনি জানিয়েছিলেন, বিশাখাপত্তনমে স্বামীর ব্যবসা।’’ প্রতিবেশীরাও জানতেন, রামুয়া বড় ব্যবসায়ী। কারও সঙ্গেই সে বেশি কথাবার্তা বলত না। তবে দুই যুবক মাঝেমধ্যে রামুয়ার সঙ্গে দেখা করতে আসত বলে জেনেছে পুলিশ। রামুয়া সকলকে বলত, ছেলে সমীর আইপিএস অফিসার। পুলিশ জেনেছে, আদতে অন্ধ্রের শ্রীকাকুলাম জেলার লোক রামুয়া নব্বইয়ের দশক থেকে হাওড়ার ত্রাস হয়ে উঠেছিল। মূলত চেন্নাই ও অন্ধ্রপ্রদেশে ছিল তার অবাধ গতিবিধি। খড়দহে তার ভাইয়ের বাড়ি। শ্বশুরবাড়ি সোদপুরের নাটাগড় এলাকায়।

এ দিন ওই আবাসনে গিয়ে দেখা যায়, কোল্যাপসিবল গেট ছাড়াও একটি লোহার গেট রয়েছে। সেটি খোলার পরেই কোল্যাপসিবল গেট খুলতে হয়। আর সেই দরজার পাশেই রয়েছে আটটি কলিং বেলের সুইচ। কিন্তু কোনটি কার, তার উল্লেখ নেই। প্রতিবেশীরা দাবি করেছেন, তারা কেউ কিছু টের পাননি। তা থেকেই পুলিশের ধারণা, দুষ্কৃতীদের মধ্যে রামুয়ার পরিচিত কেউ রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Crime Murder Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE