রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী তাঁকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন খোলাখুলি। বলেছিলেন, মিঠুদা, অনেক হল। এ বার এ দিকে চলে এলে তিনি সত্যিকার সম্মান পাবেন!
একমুখ দাড়ি, এক গাল হেসে মিঠুদা, মানে দেবপ্রসাদ রায় তখন বলে দেন, কাজী নজরুল ইসলামও শ্যামাসঙ্গীত লিখেছিলেন। তাতে কি তাঁর দোষ হয়েছিল? তা হলে তিনি কংগ্রেসে থেকেই দলের সঙ্গে সিপিএমের জোটের বিরোধিতা করলে সমস্যাটা কোথায়?
রাজ্যসভার আসন মাথায় আছে, তৃণমূলে তাঁর যোগ দেওয়া সময়ের অপেক্ষা— এই সব জল্পনা জমে উঠেছে ঠিকই। কিন্তু কংগ্রেসের সদর দফতরে যোগাযোগসম্পন্ন নেতা হিসেবে পরিচিত দেবপ্রসাদ রায় জানিয়ে দিচ্ছেন, দলত্যাগ নয়। আপাতত কংগ্রেসে থেকেই সিপিএমের সঙ্গে জোটের বিরোধিতার স্বর আরও উঁচু করতে চান তিনি। একদা এক বারের সাংসদ ও দু’বারের বিধায়ক মিঠুবাবুর সাফ কথা, ‘‘আমি মনে করি, আব্দুল মান্নান, শঙ্কর সিংহেরা সিপিএমপন্থী কংগ্রেস নেতা। তা হলে আমি তৃণমূলপন্থী কংগ্রেস নেতা হয়ে থাকতে পারব না কেন?’’
জলপাইগুড়ি থেকে ২০০৬-এ ও তার পরের বার আলিপুরদুয়ার থেকে নির্বাচিত বিধায়ক মিঠুবাবু এ বার বামের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। যেটা প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কেউই করেননি। মানস ভুঁইয়া প্রথমে জোটের বিরোধিতা করলেও পরে ‘দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ শিরোধার্য’ করেন। তৃণমূল সূত্রেরই দাবি, আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে তাদের প্রার্থী সৌরভ চক্রবর্তীর হয়ে ‘মিঠুদা’-র লোকজন এ বার খেটেছেন। আর গত বারের বিধায়ক নিজে তলে তলে সৌরভকে জেতাতেই প্রচার করেছেন।
বিধায়ক হওয়ার পরে সৌরভ ফুলের তোড়া নিয়ে মিঠুবাবুর সঙ্গে দেখা করতে যান। আবেগে আপ্লুত মিঠুবাবু সৌরভের সংবর্ধনা সভাতেও হাজির ছিলেন। আবার কংগ্রেস যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠান বয়কট করেছে, মিঠুবাবু সেখানে দিব্যি উপস্থিত। তাঁর কথায়, ‘‘সুব্রত বক্সী কার্ড দিয়ে আমন্ত্রণ জানান। আমি সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করেছি।’’
দলের মধ্যে থেকে এ হেন আচরণ করে মিঠুবাবু কতটা গুরুত্ব পাবেন, তা নিয়ে অবশ্য কংগ্রেসের অন্দরেই প্রশ্ন আছে। এআইসিসি ও প্রদেশ কংগ্রেসের লাইন মেনে বিধানসভার ভিতরে পরিষদীয় দল তাদের ভূমিকা পালন করবে। বাইরেও প্রতিবাদ-আন্দোলন হবে। বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধে সেই ভূমিকা পালন করতে ইতিমধ্যেই পথে নেমে পড়েছেন স্বয়ং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তার পরেও মিঠুবাবুর ভিন্ন সুর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে কংগ্রেসে। দলে জোটপন্থী নেতাদের মধ্যে অগ্রগণ্য ওমপ্রকাশ মিশ্র যেমন বলছেন, ‘‘সৌরভ চক্রবর্তীর সংবর্ধনায়, মমতার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকার মতো দলের নীতিবিরুদ্ধ কাজ দেবপ্রসাদ রায় করছেন। এ সব দলের বাইরে বেরিয়ে করলেই তো ভাল!’’
তবে ৫৩ বছর ধরে রাজনীতি করা মিঠুবাবুর বক্তব্য, এখন কংগ্রেসকে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে পদক্ষেপ করতে হবে। তৃণমূল, জেডিইউ, আরজেডি-র মতো বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলো কংগ্রেস সম্পর্কে কী ভাবছে, দেখতে হবে। মিঠুর মতে, ফেডারেল ফ্রন্টের নেতৃত্ব দিতে সব চেয়ে উপযুক্ত রাজনীতিকের নাম মমতা! অন্য রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে থেকেও নীতীশ কুমার, লালুপ্রসাদদের মমতার শপথে উপস্থিতিকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসাবে ধরছেন মিঠুবাবু। আপাতত দিল্লি গিয়েছেন এআইসিসি-র নানা নেতার সঙ্গে কথা বলতে। রকমসকম দেখে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, এখন দলে থেকে গেলেও ঝোপ বুঝে কোপ মারবেন ‘হেভিওয়েট’ প্রাক্তন সাংসদ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy