Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

নিখরচার ওষুধে জব্বর কোপ

রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে এত দিন নিখরচায় প্রায় ১৯৯০ ধরনের ওষুধ পেতেন সাধারণ মানুষ। সেই তালিকার তিন ভাগের প্রায় দু’ভাগই ছেঁটে ফেলায় এক ধাক্কায় সংখ্যাটা কমে হয়ে গেল ৬৯৬!

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৩
Share: Save:

রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে এত দিন নিখরচায় প্রায় ১৯৯০ ধরনের ওষুধ পেতেন সাধারণ মানুষ। সেই তালিকার তিন ভাগের প্রায় দু’ভাগই ছেঁটে ফেলায় এক ধাক্কায় সংখ্যাটা কমে হয়ে গেল ৬৯৬!

অর্থাৎ নতুন ব্যবস্থায় রোগীরা সরকারি হাসপাতাল থেকে নিখরচায় ১৯৯০-এর বদলে এখন পাবেন মাত্র ৬৯৬ ধরনের ওষুধ। তবে সেখানেও একটা বড় ধরনের ‘কিন্তু’ রয়েছে।

কিন্তুটা হল, এই ৬৯৬ ধরনের ওষুধ সব স্তরের হাসপাতালে মিলবে না। কোন স্তরের হাসপাতালে কোন কোন ওষুধ মিলবে, তার আলাদা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জেলা বা মেডিক্যাল কলেজে বিনামূল্যের এমন অনেক ওষুধ পাওয়া যাবে, যা হয়তো ব্লক হাসপাতাল বা মহকুমা হাসপাতালে মিলবে না। কেউ মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে সেই ওষুধ চাইলে হাসপাতাল সেই ওষুধ কিনেও দিতে পারবে না। হয়রানি বাড়বে রোগী এবং তাঁদের পরিবারের।

এই প্রথম রাজ্যের ওষুধের তালিকাকে দু’ভাগ করা হল। ‘জরুরি’ এবং ‘বিশেষ’। জরুরি তালিকায় ৪৮০ ধরনের ওষুধ আর বিশেষ তালিকায় থাকছে ২১৬ ধরনের ওষুধ। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘জরুরি ওষুধের জন্য দরপত্র প্রকাশিত হয়েছে ৪ জানুয়ারি। বিশেষ ২১৬ ধরনের ওষুধের দরপত্র কিছু দিনের মধ্যেই বেরোবে।’’

এতে রোগী-স্বার্থ বা ২০১২ সালে গৃহীত রাজ্য সরকারের ‘ফ্রি ড্রাগ পলিসি’ বা বিনামূল্যে ওষুধ নীতির মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে না কি?

‘‘একেবারেই না। রোগীরা ওষুধ পাবেন। তবে বিনা পয়সায় ওষুধ বিতরণে একটা সীমারেখা দরকার। এত দিন সেটা না-থাকায় অনেক জায়গায় ওষুধের, বিশেষ করে দামি ওষুধের অপব্যবহার হচ্ছিল। সরকারের অর্থসঙ্কট চলছে। তাই এই অপব্যয় রোখা দরকার,’’ বললেন এক স্বাস্থ্যকর্তা। গত বছর পুজোর ঠিক আগেই সরকারের ‘ফ্রি ড্রাগ নীতি’র বদলের সিদ্ধান্ত নেয় নবান্ন। এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু হাসপাতাল দামি ওষুধই বেশি কিনছে। তাতে সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। অন্য জরুরি ওষুধ কেনা যাচ্ছে না। এতেই রাশ টানা হচ্ছে।

‘জরুরি’ তালিকার সব ওষুধও সব হাসপাতালে মিলবে না বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। ৫৩ ধরনের জরুরি ওষুধ মিলবে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২২৯, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাওয়া যাবে ২৭১ এবং মহকুমা ও স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ৩৯৯ ধরনের জরুরি ওষুধ পাওয়া যাবে। শুধু জেলা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে ৪৮০ ধরনের ওষুধই মিলবে।

আবার ২১৬ ধরনের বিশেষ ওষুধ মিলবে শুধু মেডিক্যাল কলেজ এবং কিছু সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। ওষুধ সরবরাহের সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অর্ডার দেওয়ার পরে বাধ্যতামূলক ভাবে ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচিত সংস্থাকে ট্যাবলেট, ৩০ দিনের মধ্যে ইঞ্জেকশন ও স্যালাইন এবং ৪৫ দিনের মধ্যে সিরাম সরবরাহ করতে হবে, যাতে হাসপাতাল কখনওই ওষুধশূন্য হয়ে না-পড়ে। চিকিৎসক মহলের একটি অংশের আশঙ্কা, এ ভাবে সরবরাহের সময় বেঁধে দেওয়ায় আর্থিক দুর্নীতি হবে। নির্ধারিত সংস্থা নির্দিষ্ট সময়ে ওষুধ দিতে না-পারলে স্থানীয় ভাবে কেনার প্রবণতা বাড়বে। আর তাতেই টাকা লেনদেনের সুযোগ মিলবে।

ক্যানসার, হিমোফিলিয়ার ওষুধ ‘জরুরি’ তালিকায় নেই! রয়েছে ‘বিশেষ’ তালিকায়। অর্থাৎ কেউ ব্লক বা মহকুমা হাসপাতালে ক্যানসারের ওষুধ চাইলে তা পাবেন না। তাঁকে ছুটতে হবে কোনও মেডিক্যাল কলেজ বা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE