—প্রতীকী ছবি।
গোটা দেশে সরকারি এবং সরকারি পরিচালিত স্কুলের প্রাথমিক স্তরে পড়ুয়া ভর্তির সংখ্যা কমছে!
কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সর্বশেষ ‘এডুকেশনাল স্ট্যাটিসস্টিক অ্যাট এ গ্লান্স ২০১৮’ রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের সর্বত্রই প্রাথমিকে পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে। পশ্চিমবঙ্গ কিছুটা উন্নতি করলেও বহু রাজ্যের থেকে এখনও পিছিয়ে। শতাংশের হিসেবে প্রথম পাঁচেও নেই। ওই রিপোর্টে ১৯৫০ সাল থেকে ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে পড়ুয়া ভর্তির সংখ্যা দেওয়া রয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে পড়ুয়ার সংখ্যা সামান্য কমেছিল। কিন্তু পরের বছরই সেটা বেড়ে যায়। তবে ২০১২-১৩ থেকে সেই সংখ্যা ক্রমশ কমছে। গত ছ’বছরে একবারও সংখ্যা বাড়েনি। এ রাজ্যে ২০১৪-১৫-র থেকে ২০১৫-১৬তে ভর্তি কিছুটা বেড়েছে।
মন্ত্রকের এক প্রাক্তন কর্তা বলেন, ‘‘গোটা দেশেই সরকারি স্কুলের থেকে বেসরকারি স্কুলে ভর্তির প্রবণতা বেশি। ফলে সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে।’’ তবে কেন্দ্রের স্কুলশিক্ষা বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘বেসরকারি স্কুলগুলির কী মান বা শিক্ষার অধিকার আইন মেনে চলছে কিনা, তার নজরদারি করা নিয়েও আলোচনা চলছে।’’ ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিভাবকেরাও সন্তানদের বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করতে বেশি আগ্রহী।
প্রসঙ্গত, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্তরকে ‘এলিমেন্টারি এডুকেশন’ বা প্রাথমিক শিক্ষা বলা হয়। এই স্তরে পঠনপাঠনকে মজবুত করতে মিড ডে মিল, অবৈতনিক করার মতো নানা পদক্ষেপ করেছে সরকার। কিন্তু তার পরেও এই চিত্রের কারণ কী? প্রতীচী ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদ বলেন, ‘‘গোটা দেশেই প্রাথমিক স্তরে এত বেশি বেসরকারি স্কুল তৈরি হচ্ছে যে সেখানে সরকারি স্কুলগুলি পিছিয়ে পড়ছে। বেসরকারি স্কুলে পড়ানোকে এখন অনেকেই কৌলীন্য বলে মনে করেন। তার জন্য বহু সরকারি স্কুলের বেহাল অবস্থাও কিছুটা দায়ী।’’
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য কেন্দ্রকেই দায়ী করছেন। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র তো শুধু ধর্ম নিয়ে রয়েছে, শিক্ষায় মনই নেই। শিক্ষা খাতে কেন্দ্র বরাদ্দও কমাচ্ছে। মিড ডে মিলেও টাকা কমিয়ে দিয়েছে।’’ বহু রাজ্যের থেকে পিছিয়ে থাকলেও প্রাথমিকে ভর্তির সংখ্যা এ রাজ্যে কিছুটা বেড়েছে। সেই প্রসঙ্গে মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি পড়ুয়াদের বই, খাতা, পোশাক সহ নানা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে।’’
তবে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফে স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছেন অভিভাবকেরা। এটা উদ্বেগজনক।’’ হিন্দু স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত তুষারকান্তি সামন্তের কথায়, ‘‘সরকারের উচিত প্রাথমিক স্তরে পাঠ্যক্রম, বইয়ের গঠন, শিক্ষকদের পড়ানোর পদ্ধতি-সহ সমস্ত কিছু আকর্ষণীয় করে তোলা। পড়ুয়াদের যেন সন্তানতুল্য মনে করেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তার জন্য কর্মশালা করা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy