আর্জির কারণটা আলাদা। তবে তৃণমূল এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরে ওড়িশা সরকারও এ বার বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারি চাইল। শীর্ষ আদালতের দুই সদস্যের বেঞ্চের কাছে আজ ওই আর্জি রেখেছেন ওড়িশা সরকারের প্রতিনিধি।
পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অসম থেকে শুরু করে ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ আর্থিক সংস্থাগুলির প্রতারণার জাল ছড়িয়ে রয়েছে অনেকগুলি রাজ্যে। সে কারণেই পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ঘোর আপত্তি খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গত ৯ মে ওই তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ওড়িশায় সেই তদন্ত একেবারেই ঢিমে তালে চলছে বলে অভিযোগ এনে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে শীর্ষ আদালতে। তারই শুনানি ছিল এ দিন।
ওই বিষয়ে প্রবীণ আইনজীবী তথা শীর্ষ আদালতের বিশেষ পরামর্শদাতা (অ্যামিকাস ক্যুরি) শ্যাম দিওয়ানও বেঞ্চকে জানান, সিবিআইয়ের ৪ জন মাত্র অফিসার ৪৪টি মামলার তদন্ত করছেন ওখানে। কর্মী ও পরিকাঠামোর অভাবে সত্যিই তদন্ত এগোচ্ছে না ওড়িশায়।
ওড়িশা সরকারের আবেদনের সূত্রে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি টি এস ঠাকুর ও বিচারপতি আদর্শকুমার গোয়েলের ডিভিশন বেঞ্চ আজ জানায়, সিবিআইয়ের হাতে যে সব মামলার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে, সেগুলির তদন্ত তাদের করতেই হবে। সিবিআইয়ের তরফে এ দিন সুপ্রিম কোটের্র্ ছিলেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল মনিন্দর সিংহ। আদালত তাঁকে নির্দেশ দিয়েছে, ওড়িশার বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে সিবিআই কতটা কী এগিয়েছে, আদালতকে তা জানাতে হবে।
তদন্তে নজরদারির প্রশ্নে আদালতের বক্তব্য, এর জন্য গত ৯ মে-র নির্দেশে পরিমার্জন প্রয়োজন। তদন্তকারী সংস্থাটি কি সেই আর্জি জানাবে?
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল জানান, সিবিআই তার জন্য তৈরি হচ্ছে। সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার সময়েই শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, ভবিষ্যতে তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারির পথও খোলা থাকছে। তার ভরসাতেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল, মায় রাজ্য সরকারও। সিবিআই সারদা-কাণ্ডে মুকুল রায়কে তলব করার পরেই তাঁর গ্রেফতারির আশঙ্কায় তৃণমূল নেতৃত্ব নালিশ ঠোকেন সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে। তদন্তে শীর্ষ আদালতের নজরদারির আবেদন রাখা হয়। দল ও রাজ্য সরকার, উভয় তরফেই মূলত দু’টি অভিযোগ আনা হয়। এক, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো হচ্ছে সিবিআইকে। বেছে বেছে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের নিশানা করা হচ্ছে। দুই, সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতির কথা আগেই প্রকাশ করে দিচ্ছে।
কিন্তু এ নিয়ে শুনানির ঠিক আগেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহের গ্রেফতারি ঠেকানোর চেষ্টা করার অভিযোগ সামনে আসায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামীকে চটজলদি বরখাস্ত করে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বার্তা দেয়, তদন্তে কোনও হস্তক্ষেপ হচ্ছে না। সিবিআই আর ‘খাঁচায় বন্দি তোতাপাখি’ নয়। এর পরপরই তৃণমূল ও তাদের সরকারের আর্জি সরাসরি খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। কার্যত মুখ পোড়ে মমতার।
এ বার কিন্তু সেই একই আর্জি জানাল ওড়িশার নবীন পট্টনায়কের বিজেডি সরকার। তাদের বক্তব্য, অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত সেখানে যথেষ্ট গতি পাচ্ছে না। আদালত-বান্ধব শাম দিওয়ানও বলছেন একই কথা। এর পাশাপাশি, ৯ মে-র নির্দেশ পরিবর্তনের আর্জি জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে সিবিআই-ও। আদালত জানতে চাইছে তদন্তের হাল-হকিকত।
জল কি তবে নজরদারির দিকেই গড়াচ্ছে? জল্পনা বাড়ছে তৃণমূলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy