Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Death

নদী গিলল বাড়ি, শোকে মৃত্যু প্রৌঢ়ের

গঙ্গার ভাঙনে শমসেরগঞ্জের বেশ কিছু গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার মুখে।

রবিবার সন্ধ্যায় গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে বাড়ির একাংশ। ভাঙা ঘরের পাশে বসে জ্বালানির কাঠ বাঁচানোর চেষ্টা বৃদ্ধা মালতী সিংহের, শমসেরগঞ্জের ধুসরিপাড়ায়। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

রবিবার সন্ধ্যায় গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে বাড়ির একাংশ। ভাঙা ঘরের পাশে বসে জ্বালানির কাঠ বাঁচানোর চেষ্টা বৃদ্ধা মালতী সিংহের, শমসেরগঞ্জের ধুসরিপাড়ায়। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

বিমান হাজরা
শমসেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৩২
Share: Save:

এক সপ্তাহ ধরে উত্তাল গঙ্গা একের পর এক বাড়ি গিলে খাচ্ছে। চার দিন আগে পড়শিদের বাড়ি চোখের সামনে তলিয়ে যেতে দেখেছিলেন। তারপর থেকে একটু একটু করে বাড়ির আসবাবপত্র সরাতে শুরু করেন ধুসরিপাড়ার কিশোরী সিংহ। কিন্তু এত কষ্টে তৈরি বাড়িটা ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না বছর বাহান্নর প্রৌঢ়ের। ঝুঁকি জেনেও সেখানেই থাকছিলেন। রবিবার সন্ধেয় সেই বাড়ি নদীতে তলিয়ে যেতে দেখে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। কিছু ক্ষণ পর মৃত্যু।

গঙ্গার ভাঙনে শমসেরগঞ্জের বেশ কিছু গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার মুখে। ভাঙন রোধে প্রশাসনিক উদ্যোগ না দেখে নদীপাড়ের বাসিন্দারা নিজেরাই বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র সরে যাচ্ছেন। আঁচলে চোখ মুছে কিশোরীর স্ত্রী কমলা সোমবার বললেন, ‘‘তিল তিল করে তৈরি বাড়িটা তলিয়ে যাওয়ার কষ্ট সইতে পারল না মানুষটা। হার্ট অ্যাটাক করল।’’ কমলা জানান, চার দিন আগে তাঁদের কয়েক জন পড়শির বাড়ি ধসে যেতে দেখে নাওয়াখাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন স্বামী। পাশের গ্রাম মঙ্গলপুরে ওই দম্পতির ছেলে থাকেন। বাড়ির আসবাবপত্র সেখানেই সরানো হচ্ছিল। কিন্তু প্রৌঢ় দম্পতি ধুসরিপাড়ার বাড়িতেই থাকছিলেন। রবিবার বিকেলে নদী তাঁদের বাড়ির হাত দশেক দূরে চলে আসে। কমলার কথায়, ‘‘বিকেল থেকে হঠাৎ পাড় ভাঙতে শুরু করল। পাশেই আমার দুই দেওরের বাড়ি। তখন সন্ধে সাতটা হবে। ঘর থেকে শেষ সম্বলটুকু নিয়ে সবে বাড়ির বাইরে পা রেখেছি স্বামী-স্ত্রী। হঠাৎ সামনের ল্যাম্পপোস্টটা দুলে উঠল। একটা ‘ঝপাস’ শব্দ। ফিরে দেখি, গঙ্গায় একসঙ্গে ধসে পড়ল তিনটে বাড়ি। তা দেখে আমার স্বামী ডুকরে কেঁদে উঠলেন, তার পরই মাটিতে ঢলে পড়েন। চোখেমুখে কত জলের ঝাপটা দিলাম। আর উঠল না মানুষটা।’’ জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাঙনে বাড়ি ভেঙে যাওয়ার শোক সহ্য করতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হন ওই প্রৌঢ়। তাতেই মৃত্যু বলে মনে করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Landslide Samserganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE