Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
উৎসবের আলো কেড়ে হাহাকার

সোনারপুরে বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মৃত ১

সোনারপুর থানা এলাকার গোবিন্দপুরের ওই বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের বাড়ির জানলার কাচ ভেঙে যায়। কানফাটানো আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে গোটা এলাকা ঢেকে যায় কালো ধোঁয়ায়।

সোনারপুরের বাজি কারখানায় আগুন নেভানোর কাজ। —ফাইল চিত্র

সোনারপুরের বাজি কারখানায় আগুন নেভানোর কাজ। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০৭
Share: Save:

মহোৎসবের মুখে অঘটন পিছু ছাড়ছে না বাংলার। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে দমদম-নাগেরবাজারে বিস্ফোরণ এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অগ্নিকাণ্ডের পরে দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই বিস্ফোরণ সোনারপুরের বাজি কারখানায়। প্রাণ গেল ১৯ বছরের এক তরুণের। আহত ১৩।

সোনারপুর থানা এলাকার গোবিন্দপুরের ওই বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের বাড়ির জানলার কাচ ভেঙে যায়। কানফাটানো আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে গোটা এলাকা ঢেকে যায় কালো ধোঁয়ায়। তীব্র কটু গন্ধে ভরে যায় বাতাস। বাজি কারখানা থেকে ভেসে আসে আটকে পড়া শ্রমিকদের আর্তনাদ: ‘বাঁচাও বাঁচাও’। দেখা যায়, বাজির কারখানায় দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। পুকুর থেকে তোলা বালতির জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু হয়। খবর যায় দমকল ও পুলিশে। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে। পরে কয়েক জন আহতকে পাঠানো হয় ন্যাশনাল চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ভর্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান দেবাশিস সর্দার (১৯) নামে এক তরুণ।

পুলিশ জানায়, বিস্ফোরণের পরে ক্ষিপ্ত জনতা কারখানার মালিক তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে চড়াও হয়। বৃদ্ধ তরুণবাবুকে মারধর এবং তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। বারুইপুর ও সোনারপুর থানার পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মারধরে জখম তরুণবাবুকে উদ্ধার করে সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পুলিশকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় জনতা। উত্তেজিত জনতাকে হটাতে পুলিশ লাঠি চালায় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। তদন্তকারীরা জানান, তরুণবাবু মালিক হলেও কারখানা চালান বুবাই ও টুবাই নামে তাঁর দুই ছেলে। ঘটনার পর থেকেই বুবাই-টুবাই পলাতক। তরুণবাবুর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বিস্ফোরণে মৃত দেবাশিস সর্দার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

আগুন লাগল কী ভাবে? পুলিশের সন্দেহ, বাজি তৈরির সময় কোনও ভাবে আগুন ধরে যায়। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে মজুত করা বাজিতে। তার পরেই বিস্ফোরণ। পরে কারখানা থেকে ড্রামভর্তি অতিদাহ্য রাসায়নিক এবং কিছু বাজি উদ্ধার করা হয়।

ধোঁয়া ও আওয়াজে অসুস্থ পড়শিকে সরানো হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

কোনও কোনও শ্রমিক কারখানার পাশের পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাঁদের খোঁজে রাতে আলো লাগিয়ে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দেড় বছর আগেও ওই কারখানায় বিস্ফোরণ হয়েছিল। মাস ছয়েক বন্ধ থাকার পরে কারখানাটি ফের চালু হয়। প্রশ্ন উঠেছে, জনবহুল এলাকায় প্রায় এক বিঘা জমিতে বাজি কারখানা তৈরির অনুমোদন কে বা কারা দিলেন? কী ভাবেই বা দিলেন? বছর দেড়েক আগে বিস্ফোরণের পরে বন্ধ করে দেওয়া কারখানায় আবার কী ভাবে বাজি তৈরি এবং মজুত করা হচ্ছিল? জেলা প্রশাসন বা পুলিশের কাছে এই সব প্রশ্নের সদুত্তর নেই।

আরও পড়ুন: ‘গায়ে আগুন নিয়ে ঝাঁপালাম পুকুরে’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Explosion Factory Fire Cracker Death Injury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE