Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
চাঁপদানি

তৃণমূল প্রার্থীর আত্মীয়ের বাড়িতে বোমা ফেটে মৃত্যু

বোমা বাঁধতে গিয়ে তা ফেটে মৃত্যু হল একজনের। গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতলে ভর্তি একই পরিবারের তিন জন। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির চাঁপদানির নুরি লেনে। পুলিশ জানায় মৃতের নাম মহম্মদ পারভেজ (২৫)। তার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

হাসপাতালে আহত মহম্মদ আক্রম। ছবি: তাপস ঘোষ।

হাসপাতালে আহত মহম্মদ আক্রম। ছবি: তাপস ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৬
Share: Save:

বোমা বাঁধতে গিয়ে তা ফেটে মৃত্যু হল একজনের। গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতলে ভর্তি একই পরিবারের তিন জন। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির চাঁপদানির নুরি লেনে। পুলিশ জানায় মৃতের নাম মহম্মদ পারভেজ (২৫)। তার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

জেলার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘‘কী কারণে ওরা ছাদে জড়ো হয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ চাঁপদানি পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নুরি লেনে একটি একতলা বাড়ির ছাদে বসে বোমা তৈরি করছিল মহম্মদ পারভেজ ওরফে ছোটুয়া এবং ওই বাড়ির তিন সদস্য মহম্মদ ওয়াশিম, মহম্মদ জাফির এবং মহম্মদ আক্রম। তিনজনেই সম্পর্কে ভাই। আচমকাই একটি বোমা ফেটে গেলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পারভেজের। গুরুতর জখম হয় তিন ভাই। বোমা ফাটার বিকট আওযাজে বাসিন্দারা ছুটে আসেন। বাড়ির মহিলারা ভয়ে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে যান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। কিন্তু সেখানে বোমা বা বোমা তৈরির কোনও সরঞ্জাম পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বোমা তৈরির ঘটনা চাপা দিতে পুলিশ আসার আগেই সমস্ত জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলা হয়। পুলিশ আহত তিনজনকে চিকিৎসার জন্য চন্দননগর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এলাকার বাসিন্দা ও চাঁপদানি পুরসভার প্রাক্তন উপপ্রধান মহম্মদ নাসিম খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। যে বাড়িতে বোমা ফেটেছে সেটি তাঁর এক আত্মীয়ের। মৃত ব্যক্তি উপপ্রধানের পরিচিত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। এ বার ওই ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন মহম্মদ নাসিম। কিন্তু তিনি নির্দল প্রার্থীর (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) কাছে হেরে যান। বাসিন্দাদের অভিযোগ, হেরে যাওয়ায় এলাকায় সন্ত্রাস করতেই এই বোমা বাঁধা হচ্ছিল। যদিও ওই পরিবারের দাবি, মৃত পারভেজকে তাঁরা চেনেন না। তাঁদের দাবি, ওই রাতে বাড়ির ছাদে পায়ের আওয়াজ পেয়ে তিন ভাই ছাদে উঠে দেখেন জনা চারেক লোক ছাদে ঘোরাঘুরি করছে। তাদের দেখতে পেয়ে তিনজন ছাদ থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায়। বাকি একজনকে ধরতে গেলে সে পড়ে যেতেই বোমা ফাটে। তাতেই তার মৃত্যু হয় এবং বোমার আঘাতে তাঁদের পরিবারের তিনভাই জখম হন।

হাসপাতালে শুয়ে আহত মহম্মদ ওয়াশিম বলেন, ‘‘সকাল থেকেই ভোটের ফল নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আমাদের এলাকার তৃণমূল প্রার্থী নাসিম ভাই ভোটে হেরে যাওয়ার খবর শুনে বাড়িতে ফিরে শুয়ে পড়ি। রাতে ছাদে পায়ের আওয়াজ শুনে উঠে গিয়ে ওদের দেখতে পাই। একজনকে আমরা তিনভাই মিলে ধরতে গেলে সে পালানোর চেষ্টা করতেই নীচে পড়ে যায়। তখনই তার কাছে থাকা বোমা ফেটে যায়।’’

মৃত মহম্মদ পারভেজের মা তামান্না পরভিনের বক্তব্য, ‘‘গতকাল রাতে ছোটুকে ওর কয়েকজন বন্ধু ডেকে নিয়ে যায়। আমি বারণ করলে তারা জানায়, নাসিম ভাই ছোটুকে ডেকে পাঠিয়েছে। ওর কিছু হবে না। কিন্তু কী জন্য ডেকে নিয়ে গেল তা জানায়নি। বুধবার সকালে পাড়ার লোকেদের কাছে জানতে পারলাম ও বোমা ফেটে মারা গিয়েছে। নেতারা ওকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে আমার কোল ফাঁকা করে দিল।’’

মহম্মদ নাসীম বলেন, ‘‘আমার ওই আত্মীয়ের বাড়ির ছাদে কারা কী কারণে জড়ো হয়েছিল জানি না। বোমা ফেটে জখম হওয়ার খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিলাম। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। পুলিশ তদন্ত করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE