Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal News

শালিমার থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল ‘অপারেশন শ্রীনু’, জানাল পুলিশ

রেলশহরে যখন চোরাকারবার সাম্রাজ্যের বাদশাহকে চিরঘুমে শুইয়ে দেওয়া হচ্ছিল, শঙ্কর রাও তখন শালিমারে। খড়্গপুরের ধারেপাশেও তখন ছিল না শ্রীনুর বহু পুরনো এই শত্রু। কিন্তু আসলে শঙ্করের কথাতেই নাকি পুরো ‘অপারেশন’ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল। পুলিশ সূত্রে বৃহস্পতিবার এমনই খবর এল।

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ ১৭:০৫
Share: Save:

রেলশহরে যখন চোরাকারবার সাম্রাজ্যের বাদশাহকে চিরঘুমে শুইয়ে দেওয়া হচ্ছিল, শঙ্কর রাও তখন শালিমারে। খড়্গপুরের ধারেপাশেও তখন ছিল না শ্রীনুর বহু পুরনো এই শত্রু। কিন্তু আসলে শঙ্করের কথাতেই নাকি পুরো ‘অপারেশন’ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল। পুলিশ সূত্রে বৃহস্পতিবার এমনই খবর এল। শঙ্কর রাও-সহ মোট সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ সাংবাদিক সম্মেলন করে জানালেন।

সে দিন শালিমারে বসে ক্রমাগত ফোনে নির্দেশ দিচ্ছিল শঙ্কর। সেখান থেকেই নাকি ঠিক করে দিচ্ছিল, কে গাড়ি নিয়ে আসবে, কারা গাড়িতে উঠবে, বাইকে কারা থাকবে, গাড়িটা কোথায় থামবে, কোথায় বোমা পড়বে, তার পর কে কে গুলি চালাবে। শঙ্কর রাওয়ের নিখুঁত পরিকল্পনায় ‘অপারেশন’ সফলও হয়ে গিয়েছিল। খড়্গপুরের নিউ সেটলমেন্ট এলাকায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে শ্রীনু নায়ডু এবং তার শাগরেদদের শুইয়ে দিয়েছিল খুনিরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। নিজেদের গুলিতেই জখম হয়ে ঘটনাস্থলে পড়ে যায় দুষ্কৃতীদের এক জন। তাকে জেরা করেই আজ শঙ্কর রাওকে খুঁজে নিয়েছে পুলিশ।

ধৃতদের নিয়ে সংবাদিক সম্মেলনে ভারতী ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিক সম্মেলন করে সাত জনের গ্রেফতার হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, শঙ্কর রাওয়ের সঙ্গে শ্রীনু নায়ডুর শত্রুতা দীর্ঘ দিনের। সে-ই খুনের পরিকল্পনার মাথা বলে ভারতী ঘোষ জানিয়েছেন। তবে এই খুনের ঘটনার পিছনে আরও বড় বড় মাথা রয়েছে বলেও তাঁর দাবি। ভারতী ঘোষ জানিয়েছেন, খড়্গপুরে অস্থিরতা তৈরির লক্ষ্যেই শ্রীনু নায়ডুকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পুলিশ সুপারের কথায়, চক্রান্তকারীরা ভেবেছিল যে শ্রীনু খুন হলেই রেলশহর জুড়ে অশান্তি শুরু হবে, বিভিন্ন গ্যাং-এর মধ্যে সংঘর্ষ হবে এবং পরিবেশ অস্থির হয়ে উঠবে। কিন্তু পুলিশ পরিস্থিতির অবনতি হতে দেয়নি এবং দ্রুত সব চক্রান্তকারী পুলিশের জালে পড়বে বলে জেলা পুলিশ সুপার মনে করছেন। তিনি জানিয়েছেন, গত ৮ জানুয়ারি খড়্গপুর শহরেই জন ফ্রান্সিস নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে বসে খুনের ছক তৈরি হয়। শ্রীনুকে খুনের জন্য নিজের শাগরেদদের কাজে লাগালেও, তাদের উপর শঙ্কর পুরোপুরি ভরসা করেনি বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, জামশেদপুর থেকে দু’জন সুপারি কিলারকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল। তারাও ‘অপারেশনে’ অংশ নেয়।

আরও পড়ুন: ছেলেকে খোলা আকাশ দিতে চেয়েছিল খড়্গপুরের ‘রেল মাফিয়া’ শ্রীনু

শঙ্কর রাও-সহ মোট সাত জন ইতিমধ্যেই ধরা পড়লেও আরও অন্তত তিন জনের খোঁজ চলছে। তাদের মধ্যে এক জন খড়্গপুরেরই। বাকি দু’জন জামশেদপুর থেকে আসা সেই দুই সুপারি কিলার। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ধৃতদের মধ্যে নন্দ দাস নামে এক ব্যক্তি রয়েছে, যার সঙ্গে শ্রীনু নায়ডুর পুরনো শক্রতা ছিল। সেই নন্দ দাস একটি নার্সিংহোমে কাজ করত এবং সেই নার্সিংহোমে শঙ্করের পরিজনরা এক বার ভর্তি হয়েছিলেন। সেই সময় থেকেই শঙ্কর রাওয়ের সঙ্গে নন্দর যোগাযোগ। শ্রীনুর উপর ব্যক্তিগত আক্রোশ চরিতার্থ করতে নন্দ শ্রীনুর শত্রু শঙ্করের সঙ্গে হাত মেলায় বলে পুলিশের দাবি। যে গাড়িতে করে বুধবার শ্রীনুর অফিসে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা, সেই গাড়িটি নন্দ দাসই জোগাড় করে এনেছিল বলেও পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে।

ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রশস্ত্র। —নিজস্ব চিত্র।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীনুর অফিসে ঢুকে দুষ্কৃতীরা প্রথমেই বোমা ছুড়েছিল। তাতে গোটা অফিস ধোঁয়ায় ভরে যায়। তার মধ্যেই শ্রীনুদের দিকে গুলিবৃষ্টি শুরু করে দুষ্কৃতীরা। সে সময় নিজেদের দলেরই এক জনের গুলিতে শঙ্কর রাওয়ের এক শাগরেদ জখম হয়ে শ্রীনুর অফিসে পড়ে যায়। তাকে জেরা করেই হামলা সম্পর্কে বিশদ তথ্য মিলেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ সুপার এ দিন কিন্তু ‘রেলমাফিয়া’ শ্রীনু নায়ডুকে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। স্ত্রী পূজা নায়ডু কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে শ্রীনু অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করে দিয়েছিল এবং ব্যবসায় মন দিয়েছিল বলে পুলিশ সুপার মন্তব্য করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Srinu Naidu Murder Khragpur Bharati Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE