—প্রতীকী ছবি
আট বছর ধরে চন্দননগর হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজ করছি। যে ওয়ার্ডে গর্ভবতী এবং শিশুদের টিকা দেওয়া হয়, সেখানেই আমার ‘ডিউটি’। সে তো রোজকার কাজ। করোনার ভ্যাকসিন দিতে হবে শুনেই খুব আনন্দ হয়েছিল। যে টিকা বিশ্ব জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে, সেই প্রতিষেধক দেব আমি— ভেবেই ভাল লাগছিল।
কী ভাবে করোনার টিকা দিতে হবে, চিকিৎসক এবং সিনিয়র নার্সেরা শিখিয়ে দিয়েছিলেন। তিন দিন প্রশিক্ষণ হয়েছে। তার পরে টিকাকরণের মহড়াও হল। আমি তৈরিই ছিলাম। ভয়, সঙ্কোচ বা সংশয়ের কোনও ব্যাপারই ছিল না। আজ আমাদের হাসপাতালে শ’খানেক স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হয়। তার মধ্যে আমাদের সুপার স্যার, সুপারিন্টেন্ডেন্ট স্যর, এসিএমওএইচ ম্যাডামও ছিলেন।
আমি ৭৩ জনকে টিকা দিয়েছি। বাকিদের ভ্যাকসিন দিয়েছেন আমার সহকর্মী স্বর্ণলতা রায়। প্রত্যেককে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে সেই কাজ হয়ে গিয়েছে বলে চেঁচিয়ে সহকর্মীদের বলে দিতে হচ্ছিল। সেই অনুযায়ী সহকর্মীরা সাড়া দিচ্ছিলেন। প্রথম দিনের কাজে কোনও অসুবিধাই হয়নি। বরং খুব উৎসাহ এবং আনন্দের সঙ্গে করতে পেরেছি। যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যেও একই ব্যাপার লক্ষ্য করছিলাম। সকলেই আনন্দে ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
এত দিন ধরে সবাই প্রতীক্ষায় ছিলেন, কবে করোনার ভ্যাকসিন আসবে। সেই প্রতীক্ষার অবসান হল। আর প্রথম দিনেই আমি সরাসরি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারলাম।
করোনা যখন এখানে শুরু হল, সেই সময় যে একেবারে ভয় পাইনি, সেটা ভাবা ভুল। তবে, তাতে কাজে কোনও প্রভাব পড়েনি। আমি দমদমের নাগেরবাজারে থাকি। লকডাউনের সময় গাড়িঘোড়ার অসুবিধা ছিল। সেই সময় বাড়ি যাইনি। হাসপাতালের কোয়ার্টারে থেকে কাজ করেছি।
ভ্যাকসিন দিতে হবে শুনে বাড়ির লোকেরা আপত্তি করেননি। বরং উৎসাহই পেয়েছি। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আপত্তি করার কিছু নেইও। এমন একটা জিনিস সবে চালু হল, আর তাতে শরিক হলাম। যেন বিপ্লবের সাক্ষী হওয়া গেল। এটা খাতায় লিখে রাখার মতো একটা দিন। হয়তো আমাদের সহকর্মীদের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে টিকা দেওয়ার দয়িত্ব দেওয়া হবে। আমাকে ফের যে দিন দিতে বলা হবে, আমি তার জন্য তৈরি। আর কারা টিকা নেবেন, স্বাস্থ্য দফতর থেকে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে দিন আমাকে টিকা নিতে বলা হবে, নিশ্চয়ই নেব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy