Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইমরান-কাণ্ডে আরও চাপ বাড়াল বিরোধীরা

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ আহমেদ হাসানকে জড়িয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তার জেরে শাসক দলের উপরে আরও চাপ বাড়াতে সক্রিয় হল বিরোধীরা। নাম না করে ওই তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ করেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। ইমরানের মদতেই তিস্তা জল চুক্তিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাধা দিয়েছেন বলেও বিমানবাবুর অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫১
Share: Save:

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ আহমেদ হাসানকে জড়িয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তার জেরে শাসক দলের উপরে আরও চাপ বাড়াতে সক্রিয় হল বিরোধীরা। নাম না করে ওই তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ করেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। ইমরানের মদতেই তিস্তা জল চুক্তিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাধা দিয়েছেন বলেও বিমানবাবুর অভিযোগ।

কেবল বিমানবাবুই নয়, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী একই সুরে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী বাংলাদেশের স্বাভাবিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে ‘সক্রিয়’ ভূমিকা পালন করেছিলেন ইমরান। এমনকী, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে ভোটে না জেতেন, তার জন্য মমতার মাধ্যমে তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করে ইমরান কার্যত খালেদা জিয়ার হাত শক্ত করতে চেয়েছিলেন বলে অধীরের অভিযোগ।

তৃণমূল অবশ্য বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে ফের সংখ্যালঘু ভাবাবেগকেই সামনে আনতে চেয়েছে। অভিযোগ নস্যাৎ করে ইমরানও দাবি করেছেন, “আমার জন্ম জলপাইগুড়ি জেলার মাল থানা এলাকায়। আমি ১০০% ভারতীয়। দেশদ্রোহিতার কোনও কাজ আজ পর্যন্ত করিনি!” তিস্তা জলবণ্টন চুক্তির জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ যখন ঢাকা গিয়েছিলেন, তখন তিনি তৃণমূলের কেউ ছিলেন না— এই তথ্য দিয়ে ইমরান শনিবার বলেন, “আমি শেখ মুজিবর রহমানের মতোই তাঁর কন্যা হাসিনাকেও শ্রদ্ধা করি। আমি কেন তিস্তা জলবণ্টনে বাধা দিতে যাব?”

সারদা-কাণ্ড নিয়ে কাল, সোমবার ‘মহামিছিলে’র ডাক দিয়েছে সিপিএমের চার গণসংগঠন। তার পরেই আবার ২২ সেপ্টেম্বর পথে নামবে বামফ্রন্ট। আলিমুদ্দিনে এ দিন বামফ্রন্ট বৈঠকে এই নিয়ে আলোচনার পরে বিমানবাবু বলেন, “সারদা নামের কামধেনুকে ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষকে পথে বসিয়ে দলের নেতাদের বাঁচাতে এখন তৃণমূল পথে নামছে!” গরিব মানুষের টাকা উদ্ধার এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে মহালয়ার আগের দিন মৌলালির রামলীলা পার্ক থেকে রাসমণি অ্যাভেনিউ পর্যন্ত মিছিল করবে বামফ্রন্ট।

এই সূত্র ধরেই বিমানবাবু বলেন, “এক জন সাংসদ-সাংবাদিকের মাধ্যমে সারদার টাকা বাংলাদেশে গিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।” প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের বাংলাদেশ সফর থেকে শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা। সেই ঘটনা উল্লেখ করে বিমানবাবুর অভিযোগ, “যাওয়ার আগের মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, তিনি যেতে পারবেন না। তৃণমূলের সঙ্গে বিদেশি রাজনীতিকদের বাক্যালাপের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিস্তার জল বা ছিটমহল সমস্যা মিটে গেলে ওই বিদেশি রাজনীতিকদের অসুবিধা হবে। সে কারণেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে আপত্তি তুলে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফর বাতিল করেন!”

দেশি-বিদেশি শক্তির সঙ্গে তৃণমূলের ওই সাংসদ যুক্ত, এই অভিযোগ করেই নাম না করে তাঁকে ‘জনগণের শত্রু’ বলে অভিহিত করেছেন বিমানবাবু। তাঁর অভিযোগ, “১০ হাজার কোটি টাকা এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত। সেই টাকার কিছু অংশ বিদেশে গিয়েছে। যাতে সেই দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করা যায়। যে টুকু প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এই ব্যক্তি দেশবিরোধী, দেশদ্রোহিতার কাজ করেছেন!”

এই আক্রমণের জবাবে সিপিএম এবং বিজেপি-করে পাল্টা আক্রমণ করেছেন তৃণমূল নেতা ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমও। তিনি বলেন, “আজ বিজেপি যে কথা বলে, কাল বিমানবাবুরা তা-ই বলেন! বিমানবাবু সংবাদমাধ্যমে অনেক কিছুই বলতে পারেন। কিন্তু তার প্রমাণ দিতে পারবেন?” নিজেকে এবং ইমরানকে দেশপ্রেমী হিসেবে অভিহিত করে তাঁর প্রশ্ন, “আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে জন্মেছি বলেই কি দেশদ্রোহী আখ্যা জুটছে?” ববির দাবি, ইমরান সিমির সদস্য ছিলেন ১৯৮৪ সালে। তখন সিমি নিষিদ্ধ সংগঠন ছিল না। তাঁর কটাক্ষ, “আরএসএস তিন বার নিষিদ্ধ হয়েছিল। সেই আরএসএসের সদস্য এখন প্রধানমন্ত্রী! তা হলে তাঁকে কেন দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হবে না?”

বিমানবাবুর পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরও অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের ৫৩টি নদীর জল বাংলাদেশে যাচ্ছে। কিন্তু বাধা দেওয়া হয়েছে তিস্তার ক্ষেত্রেই। অধীর বলেন, “মমতা তিস্তা চুক্তি সমর্থন করেনি। ইমরানের মাধ্যমেই বাংলাদেশের কট্টরপন্থী শক্তির সঙ্গে তৃণমূলের যোগ হয়েছিল।” তাঁর সঙ্গেও ইমরানের যোগাযোগ ছিল বলে পুলিশ জানাচ্ছে। অধীরের বক্তব্য, “আমি এই দেশদ্রোহীকে চিনি না! কোনও দিন চেহারাও দেখিনি! যোগাযোগ তো দূরের কথা!”

জামাতে ইসলামির মতো ভারত-বিরোধী সংগঠনের সঙ্গে ইমরানের যোগ নিয়ে তদন্তের আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে চিঠি দিয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তবে তাঁর বক্তব্য, “শুধু তৃণমূল নয়, আমার ধারণা, কেন্দ্রের পূর্বতন কংগ্রেস সরকারের যোগসাজশ ছাড়া ইমরান এত বড় কাণ্ড করতে পারেননি! তাই সেটাও দেখার জন্য রাজনাথজিকে অনুরোধ করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE