মল্লিকা মজুমদার
অঙ্গদানের কথা আগে কখনও শোনেনি মল্লিকা মজুমদারের পরিবারের কেউ। তাই ‘ব্রেন ডেথ’-এর পরে চিকিৎসকেরা অঙ্গদানের অনুরোধ করলে গোড়ায় সায় দেননি মল্লিকার বাবা মানিক মজুমদার। চিকিৎসকেরা বারবার বোঝালে তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাঁর মা মালতীদেবীর অনুমতি চান। অনেকের মধ্যে বেঁচে থাকবে তাঁদের বাড়ির মেয়ে, এই কথা ভেবেই নাতনির অঙ্গদানে অনুমতি দেন ঠাকুমা। তার পরেই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের তোড়জোড় শুরু করেন চিকিৎসকেরা।
শিলিগুড়ির কাছে এনজেপি রেল হাসপাতাল মোড় বাজার এলাকায় অতি সাধারণ টিনের বাড়ি মজুমদারদের। সেখানে বসে শনিবার মালতিদেবী বলেন, ‘‘আমাদের মেয়ে সকলের মায়া কাটিয়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু, এখন সে বেঁচে থাকবে অনেকের মধ্যে। এটাই তো বিরাট ব্যাপার।’’
কলকাতায় ততক্ষণে মল্লিকার অঙ্গে স্বাভাবিক জীবনের পথে তিন জন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে এসএসকেএম এবং অ্যাপোলো হাসপাতালে সফল ভাবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে মল্লিকার অঙ্গ। এসএসকেএমে শুক্রবার রাত দেড়টা নাগাদ দু’টি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচার শুরু হয়।
এসএসকেএমে লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য গ্রহীতা পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তখন অ্যাপোলো হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। চেন্নাইয়ের এক গ্রহীতাকে কলকাতায় আনা হয়। এর পরে ওই বেসরকারি হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার হয়। দুই হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, আপাতত গ্রহীতারা সুস্থ। তবে, হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের জন্য কোনও গ্রহীতা পাওয়া যায়নি। তাই হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পরিকাঠামো থাকলেও তা করা যায়নি। পাশাপাশি মল্লিকার কর্নিয়া এবং ত্বকও সংরক্ষণ করা হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ অগস্ট থেকে মস্তিষ্কের কোষে সমস্যা নিয়ে মল্লিকা এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। প্রায় এক পক্ষকাল সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পরে ১৪ অগস্ট ওই পনেরো বছরের কিশোরীর ‘ব্রেন ডেথ’-এর কথা জানানো হয় পরিবারকে। তার পরে পরিবারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন স্বাস্থ্যভবনের শীর্ষকর্তারা। প্রাথমিক পর্বে রাজি হয়নি পরিবার। তাঁদের মনে হয়েছিল, আরও চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। প্রায় আড়াই দিন কাউন্সেলিংয়ের পর মালতীদেবীই শেষে অনুমতি দেন।
রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা অদিতিকিশোর সরকার বলেন, ‘‘অঙ্গদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বারবার বোঝানোর পরে পরিবার রাজি হয়। এ রাজ্যে এটাই সবচেয়ে কমবয়সির অঙ্গদান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy