Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

বহিরাগতরাই দায়ী, রিপোর্ট উপাচার্যের

শুক্রবার রাতের ঘটনার জন্য বহিরাগতদেরই দায়ী করে আচার্যকে রিপোর্ট দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। শনিবার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল তথা যা়দবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী মন্তব্য করেছিলেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এখন ‘বিশৃঙ্খলার কেন্দ্রে’ পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি যে রিপোর্ট চেয়েছেন, সেটাও জানান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০৩:৫৭
Share: Save:

শুক্রবার রাতের ঘটনার জন্য বহিরাগতদেরই দায়ী করে আচার্যকে রিপোর্ট দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস।

শনিবার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল তথা যা়দবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী মন্তব্য করেছিলেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এখন ‘বিশৃঙ্খলার কেন্দ্রে’ পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি যে রিপোর্ট চেয়েছেন, সেটাও জানান। শনিবার বিকেলেই উপাচার্য তাঁর রিপোর্ট আচার্যকে জমা দেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ‘বিশৃঙ্খলা’র জন্য তিনি মূলত বহিরাগতদেরই দায়ী করেছেন। উপাচার্য নিজে রিপোর্টের ব্যাপারে মুখ খোলেননি। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘আমি কী রিপোর্ট পাঠিয়েছি, সে বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলব না। তবে শুক্রবারের ঘটনার পুরোটাই আমি আচার্যকে জানিয়েছি।’’ যাদবপুরের শিক্ষিকা নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ও রাজ্যপালকে খোলা চিঠি লিখে তাঁর ‘বিশৃঙ্খলা’-মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন।

এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারের মুক্তির দাবিতে পড়ুয়াদের মিছিল থেকে আফজল গুরুর ফাঁসির বিরোধিতা করে স্লোগান উঠেছিল। সে বারেও কোনও কোনও মহল থেকে পড়ুয়াদের গায়ে দেশদ্রোহিতার তকমা লাগানোর চেষ্টা হয়েছিল। আচার্য তখনও রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। ছাত্রদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে কি না, সে কথা জানতেও চেয়েছিলেন। সে বারও সুরঞ্জনবাবু ছাত্রদের পাশে ছিলেন। রিপোর্টে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, এফআইআর করার প্রশ্নই নেই। এ বারও তিনি পড়ুয়াদের পাশে।

তবে তাতে যে যাদবপুরে অশান্তি মিটে গেল, সেটা জোর দিয়ে অনেকেই বলতে পারছেন না। কারণ আজ, সোমবার বিকেল ৪টেয় এবিভিপি গোলপার্ক থেকে যাদবপুর ৮বি পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছে। পুলিশের আশঙ্কা, ওই মিছিল ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করবে। সংগঠনের সভাপতি সুবীর হালদার শনিবার তেমনই হুমকি দিয়েছিলেন। যদিও রবিবার তিনি জানান, সে রকম কোনও পরিকল্পনা তাঁদের নেই। কিন্তু আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তির প্রবেশিকা পরীক্ষা। দূর-দূরান্ত থেকে ছেলেমেয়েদের নিয়ে অভিভাবকেরা সকাল থেকে হাজির হবেন। এবিভিপি-র মিছিল পাছে ক্যাম্পাসে ঢোকে, তা আটকাতে পড়ুয়াদের একটি অংশও ৪ নম্বর গেটের কাছে জড়ো হবেন। দু’পক্ষ মুখোমুখি হলে নতুন করে গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে।

শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ‘বুদ্ধ অন আ ট্রাফিক জ্যাম’ ছবি দেখানোকে ঘিরে পড়ুয়াদের সঙ্গে এবিভিপি-আরএসএস-বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ বাধে। পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীকে কালো পতাকা দেখান পড়ুয়াদের একাংশ। সেই সময়ে আয়োজকদের সঙ্গে পড়ুয়াদের বচসা ও ধস্তাধস্তি হয়। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, আয়োজকদের মধ্যে এবিভিপি এবং আরএসএসের লোকজন ছিলেন। ছবিটি অবশ্য বন্ধ থাকেনি। সেই সঙ্গে ছাত্রদের তরফে ‘মুজফফরনগর বাকি হ্যায়’ নামে একটি ছবিও দেখানো হচ্ছিল। সে সময় যুগ্ম-রেজিস্ট্রার এসে দু’টি ছবিই বন্ধ করতে বলেন। তখন দু’পক্ষে ফের হাতাহাতি শুরু হয়। পড়ুয়াদের অভিযোগ, তখনই বহিরাগত চার জন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রের খবর, বহিরাগতরাই যে ক্যাম্পাসে ঢুকে গোলমাল বাধায়, সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে উপাচার্যের রিপোর্টে। বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মাঠে সিনেমাটি দেখানো হয়েছে, সেটি বাইরের কেউ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করতে পারে না। সেই অনুমতি নেওয়া হয়নি। ফলে ওই দিন মাঠে ছবি প্রদর্শন পুরোপুরি ‘বেআইনি’ ও ‘নিয়ম-বহির্ভূত’ ছিল বলে তাঁর রিপোর্টে উপাচার্য মন্তব্য করেছেন। উপাচার্য হিসেবে তিনি কী ভূমিকা নিয়েছিলেন, সেটা আচার্যকে জানিয়েছেন। ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির কথা জানিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করার কথাও রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন।

‘বুদ্ধ...’ দেখানোর জন্য বুক করা অডিটোরিয়ামে হঠাৎ বুকিং বাতিল করা থেকেই এই পর্বে অশান্তির সূত্রপাত। অডিটোরিয়ামের দায়িত্ব যাদের হাতে, সেই প্রাক্তনী সংসদ শুক্রবার থেকেই মুখে কুলুপ
এঁটেছে। সংসদের সহ-সভাপতি আলো করও বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। উল্টে তাঁরা দাবি করেন, কর্তৃপক্ষকে অন্ধকারে রেখে তাঁরা কোনও সিদ্ধান্ত নেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রের খবর, বহিরাগতদের অবাঞ্ছিত প্রবেশ রোখার ব্যাপারে পন্থা ঠিক করতে প্রাক্তনী সংসদের সঙ্গে বসতে চেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ এই নিয়ে তাঁরা চিঠি পাঠাতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE