Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ধান কেনার প্রক্রিয়া ত্রুটিহীন নয়, ক্ষোভ

রাজ্য সরকার ধান কেনা শুরু করেছে। কিন্তু রাজ্যের সব প্রান্তের চাষির মুখে হাসি কই? প্রশাসনিক নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত হল না ধান কেনার প্রক্রিয়া। কম হলেও এ বারও ফড়েদের দাপট, দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসছে। সরেজমিনে আনন্দবাজার।অভাবী বিক্রি ঠেকাতে সহায়ক মূল্যে ধান কেনে সরকার। এ বারও কিনছে। শিবির করছে। সেখানে চাষিদের ভিড়ও হচ্ছে। তবু বেশ কিছু এলাকায় চাষিদের ক্ষোভ এখনও প্রশমিত হচ্ছে না।

নতুন প্রজাতির ধান চাষের কথা ভাবছে কৃষি খামারগুলি। —ফাইল চিত্র।

নতুন প্রজাতির ধান চাষের কথা ভাবছে কৃষি খামারগুলি। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:২৩
Share: Save:

অভাবী বিক্রি ঠেকাতে সহায়ক মূল্যে ধান কেনে সরকার। এ বারও কিনছে। শিবির করছে। সেখানে চাষিদের ভিড়ও হচ্ছে। তবু বেশ কিছু এলাকায় চাষিদের ক্ষোভ এখনও প্রশমিত হচ্ছে না।

কিসের ক্ষোভ?

ক্ষোভ শিবির নিয়েই। কোথাও অভিযোগ পর্যাপ্ত শিবির না-থাকা, কোথাও শিবিরের দূরত্ব নিয়ে। ফলে, ইচ্ছে থাকলেও অনেক চাষি ধান সরকারকে দেওয়ার বদলে অপেক্ষাকৃত কম দামে খোলা বাজারে বিক্রি করছেন। প্রতিটি ব্লকে অন্তত একটি শিবির করার কথা ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু রাজ্যের ‘শস্যগোলা’ পূর্ব বর্ধমানে ২৩টি ব্লকের মধ্যে এতদিনে মাত্র ১৬টি কিসান মান্ডি থেকে ধান কেনা চলছে। কয়েকটি সমবায় সমিতি অবশ্য ধান কিনছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয় বলে চাষিদের অভিযোগ। ধান বেচতে না-পারায় টাকার অভাবে রবি মরসুমে পেঁয়াজ চাষ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন কালনার কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের চাষি সুবল মালিক।

দিনকয়েক আগে বাড়ি থেকে ৪০ বস্তা ধান মোটরভ্যানে বোঝাই করে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে রামতারকহাটের শিবিরে গিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের জানুবসান গ্রামের ক্ষুদিরাম সাঁতরা। বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে ক্ষুদিরামের বিকেল গড়িয়ে যায়। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘গত বছর বাড়ির কাছেই কাঁকটিয়া বাজারে ধান বিক্রি করেছিলাম। এ বার শিবির সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় ধান বেচতে দিন কাবার হয়ে গেল। ধানের পরিবহণ খরচও অনেক বেশি লেগেছে।’’

এলাকায় শিবির চালু না-হওয়ায় বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ব্লকের নতুনগ্রামের শঙ্কর লোহার কয়েকদিন আগে মাঠ থেকেই ফড়েদের

কাছে কম দামে ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। ঝাড়গ্রামের আমডিহা গ্রামের মাঝারি চাষি ইন্দ্রজিৎ মাহাতোর কথায়, ‘‘কাছাকাছি

সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্র না থাকায় কম দামে ধান বেচতে বাধ্য হয়েছি।” পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়েও ধান কেনায় এখনও তেমন গতি আসেনি বলে অভিযোগ। ফলে, হাতে টাকা না-আসায় পরবর্তী চাষের কাজেও পুরোদমে নামতে পারছেন না চাষি।

চেকের মাধ্যমে সরকার যখন ধান কিনত, তখন অনেক অভিযোগ উঠত। টাকা হাতে পেতে সময়ও লাগত চাষিদের। গত বছর থেকে অবশ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে সেই সব অভিযোগ অনেকটাই কমাতে পেরেছে খাদ্য দফতর। ধান সংগ্রহের জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে এক কিলোগ্রাম ধান কেনা হলেও সেই তথ্য মুহূর্তে জমা পড়ছে খাদ্য দফতরে। দিন ফুরনোর আগে তার টাকাও জমা পড়ছে চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। খাদ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, নতুন ব্যবস্থায় অস্বচ্ছতার কোনও জায়গাই নেই।

চাষিদের অভিযোগ অবশ্য অন্য জায়গায়। অভিযোগ মূলত, প্রকৃত চাষির কাছে সরকারি টাকা না-যাওয়া, ফড়েদের দৌরাত্ম্য এবং শিবিরের স্বল্পতা ও দূরত্ব নিয়ে। এ ছাড়াও ১০০ কেজি ধান বিক্রি করতে কিছুদিন আগে পর্যন্ত অনেক চাষিকে পাঁচ-ছ’কেজি বেশি ধান দিতে হচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। সে ব্যাপারেও হস্তক্ষেপ করেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

ধীরে ধীরে গোটা প্রক্রিয়া ত্রুটিহীন করতে তাঁরা চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে খাদ্য দফতরের কর্তাদের দাবি। কবে তা হবে সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Paddy Crop Agriculture Farming Rice Paddy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE