Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জেলে বসেই শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বাপি-পল্টুরা

গরাদের ফাঁক দিয়ে ক্যানভাস পাড়ি দিল মার্কিন মুলুকে। নেটবাজারের হাত ধরে, সংশোধনাগারের ফটক পেরিয়ে, ১৮ ইঞ্চি বাই ২৪ ইঞ্চি ক্যানভাস পৌঁছে গিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস। দমদম সেন্ট্রাল জেলের বন্দি পল্টু বিশ্বাসের আঁকা ছবি কিনে নিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের এক বাসিন্দা।

 পল্টু বিশ্বাসের আঁকা ‘আ ম্যারেড লেডি’।

পল্টু বিশ্বাসের আঁকা ‘আ ম্যারেড লেডি’।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০২
Share: Save:

গরাদের ফাঁক দিয়ে ক্যানভাস পাড়ি দিল মার্কিন মুলুকে।

নেটবাজারের হাত ধরে, সংশোধনাগারের ফটক পেরিয়ে, ১৮ ইঞ্চি বাই ২৪ ইঞ্চি ক্যানভাস পৌঁছে গিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস। দমদম সেন্ট্রাল জেলের বন্দি পল্টু বিশ্বাসের আঁকা ছবি কিনে নিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের এক বাসিন্দা। ১০০ ডলার দামে। অ্যাক্রিলিকে আঁকা এই ছবির নাম ‘আ ম্যারেড লেডি’।

ছবির স্রষ্টা পল্টু বিশ্বাস এক সময় কৃষক ছিলেন। পঁয়ষট্টি ছুঁই ছুঁই পল্টু কৃষক খুনের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। উত্তর চব্বিশ পরগনার বাগদার বাসিন্দা পল্টু ২০০৬ সাল থেকে বন্দি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বন্দিদের জন্য আয়োজিত কর্মশালায় সব চেয়ে বয়স্ক তিনি-ই। গত চার বছর ধরে ছবি আঁকা শিখছেন। খোলা চুলে এক মাথা সিঁদুর পরা মহিলার ছবির স্রষ্টা হিসেবে এ-টুকু পরিচিতিই দেওয়া রয়েছে ‘আর্ট মিকাডো’ নামে অনলাইন ছবি-বাজারের ওয়েবসাইটে। সঙ্গে লেখা আছে, পল্টুর জীবনের মন্ত্রই এখন ছবি আঁকা!

এর বেশি পরিচিতির প্রয়োজনও নেই, দাবি করলেন আর্ট মিকাডোর কর্ণধার ঋষি জৈন। ছবিটাই পল্টুর পরিচিতি। নিজের ফেলে আসা জীবন বা পরিবার নয়। জেল সূত্রের খবর, জেলের নথিতেও পরিবার সংক্রান্ত কোনও বিবরণ নেই। ঋষি জানান, সংস্থার ওয়েবসাইটে ‘আ ম্যারেড লেডি’ ছবিটি দেখে যোগাযোগ করেছিলেন এক বিদেশি ক্রেতা। ছবির বিষয় নিয়ে তাঁর কৌতূহল ছিল। স্রষ্টার জীবনের ইতিহাসে নয়। তবে এটাও ঠিক যে, বন্দিদের ছবি কেনার জন্য অনেকেই আগ্রহ দেখিয়েছেন। কারণ ভাল কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে থাকে অনেকেরই। বন্দিদের ছবি বিক্রির টাকা ‘প্রিজনার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ড’-এ জমা হয়। যে টাকা বন্দিদের স্বনির্ভর করে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। সংস্থার দাবি, এই তথ্য জানার পরে বন্দিদের ছবি কেনার উৎসাহ বেড়ে গিয়েছে। মাসে ২৫ থেকে ৩০ জন ছবি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এর মধ্যে সিংহভাগই বন্দিদের আঁকা ছবি সংক্রান্ত খোঁজখবর।

শুধু পল্টু বিশ্বাসই নন। আর্ট মিকাডোর তালিকায় রয়েছেন মানব দাস, নন্দিতা সাহা, বাপি বাড়ুই-এর মতো বন্দি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্তার দাবি, আঁকা শেখার সুযোগ বদলে দিচ্ছে বন্দিদের জীবন। ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা সুখ-দুঃখ বিশ্ববাজারে পৌঁছে যাওয়ার কারণে বন্দিদের উৎসাহও বাড়ছে। যেমন দশ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত ২৯ বছরের বাপি বাড়ুইয়ের স্বপ্ন, নিজেকে শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া ৪০ বছরের মানব দাসের আঁকা ‘ওয়ে আউট’ বা আলিপুর কেন্দ্রীয় মহিলা সংশোধনাগারে বিচারাধীন বন্দি ২২ বছরের নন্দিতা সাহার আঁকা ‘শকুন্তলা’ ছবির মধ্যেও রয়েছে শিল্পী হওয়ার এই ইচ্ছে।

এই ইচ্ছে বাস্তবায়িত করতে চেষ্টা চলেছে গ্যালারি তৈরি করার। আলিপুর সংশোধনাগারের মধ্যেই। যেখানে সাধারণ মানুষ এ সব ছবি দেখার ও কেনার সুযোগ পাবেন। নেটবাজারের বাইরেও একটা বাজার তৈরি করতে চাইছে আর্ট মিকাডোর মতো সংস্থা। রাজ্য সরকারের কাছে এ নিয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে সংস্থা। তবে নিরাপত্তার কারণে এই প্রস্তাব কতটা বিবেচিত হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Prisoners Correctional home art
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE