Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পোস্তর খোলের গুঁড়ো জলে ফুটিয়ে ‘ডোডো’, পানাগড়েই উড়তা পঞ্জাব

পাচার রোখার অভিযানে একাধিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তাঁরা দেখেছেন এই এলাকার কারবারের সঙ্গে মূলত তিনটি জেলা— পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূমের নাম বার বার যেমন এসেছে। তেমনই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে যে রাজ্যের নাম বার বার জড়িয়েছে, তা হল, পঞ্জাব।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫৮
Share: Save:

অভিযান হয় বার বার। ধরাও পড়ে অনেকে। কিন্তু তার পরেও লাগাম নেই মাদকদ্রব্যের কারবারে। আর সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এলাকাবাসীর দাবি, পানাগড়ের আরও এক নাম এখন দেওয়া যেতে পারে, ‘উড়তা পঞ্জাব’!

কেন এমন তকমা? এলাকাবাসীর মতে, এই এলাকা দিয়ে মূলত গাঁজা ও পোস্তর খোল পাচারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আর সেই পাচার রুখতে সদা সক্রিয় পুলিশ, নারকোটিক্স বিভাগ ও সিআইডি। পাচার রোখার অভিযানে একাধিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তাঁরা দেখেছেন এই এলাকার কারবারের সঙ্গে মূলত তিনটি জেলা— পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূমের নাম বার বার যেমন এসেছে। তেমনই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে যে রাজ্যের নাম বার বার জড়িয়েছে, তা হল, পঞ্জাব।

পঞ্জাব-যোগ ১: গত বৃহস্পতিবারের ঘটনা। পুলিশ জানায়, বর্ধমান থেকে চাল তুলে বীরভূমের দুবরাজপুর ঘুরে চালের বস্তাবোঝাই একটি ট্রাক পানাগড়ের দার্জিলিং মোড়ে জাতীয় সড়কে ওঠে। তখনই সেটিকে আটক করে পুলিশ। সেখান থেকে প্রায় সাড়ে ৭ কুইন্টাল পোস্তর খোলের গুঁড়ো মেলে বলে জানায় আসানসোল ও বর্ধমানের শুল্ক বিভাগ। এর আনুমানিক বাজারদর প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। গ্রেফতার করা হয় পঞ্জাবের পাঠানকোটের বাসিন্দা ট্রাক চালক যশবীর সিংহকে।

পঞ্জাব-যোগ ২: সাম্প্রতিক সময়ের সব থেকে বড় ঘটনাটি সম্ভবত, ২০১৭-র ২০ নভেম্বর রাতের। ওই রাতে পানাগড়ের একটি হোটেলে অভিযান চালায় সিআইডি, পুলিশ ও নারকোটিক্স বিভাগের যৌথ দল। গ্রেফতার করা হয় পঞ্জাবের এক যুবক ও দুই তরুণীকে। আর এক জন মাদকের ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে দোতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে চম্পট দেয়। ধৃতেরা সকলেই পঞ্জাবের অমৃতসরের বাসিন্দা। তাদের কাছ থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তলও মিলেছিল বলে পুলিশ জানায়। পলাতক তরণপ্রীত সিংহ অহলুওয়ালিয়ার খোঁজে পঞ্জাব পুলিশের বিশেষ দল দুর্গাপুরে আসে। তার নামে পঞ্জাবের বিভিন্ন থানায় নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

পঞ্জাব ছাড়াও অন্য রাজ্যের যোগও পাওয়া গিয়েছে। যেমন, গত বছর ৩১ জানুয়ারি। পানাগড়-দুবরাজপুর রাজ্য সড়কে লোহাবোঝাই ট্রাক থেকে উদ্ধার করা হয় দু’কুইন্টাল পোস্তর খোল। সেই সময়ে এক জন বিরুডিহা ও এক জন রাজস্থানের বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে কাঁকসা থানার পুলিশ। গত বছর ১ জুলাই সিআইডি দার্জিলিং মোড় থেকে ৭৪ কেজি গাঁজা-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে চার জন অসমের ও এক জন বর্ধমানের বাসিন্দা। বেশ কয়েক বছর আগে ২১ অগস্ট পানাগড় বাজার থেকে ফের ১৫ বস্তা পোস্তর খোল-সহ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে কাঁকসা থানার পুলিশ।

কিন্তু কেনই বা পঞ্জাবের নাম উঠে আসছে বার বার, কেনই বা পানাগড়কেই পাচারের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পোস্তর খোলের গুঁড়ো জলে ফুটিয়ে ‘ডোডো’ তৈরি করা হয়। তা নেশার পানীয় হিসেবে কাজ করে। দাম কম হওয়ায় নেশার সামগ্রী হিসেবে ‘কদর’ রয়েছে ডোডো-র। পঞ্জাবেও এই পানীয়ের বিশেষ কদর রয়েছে বলে জানা যায়।

এমন ‘কদর’-এরই ফায়দা তুলছে এ রাজ্যের এই ক’টি জেলা। তদন্তকারীরা জানান, বীরভূম, কাঁকসার জঙ্গলমহল, গলসির মানাচরে ও দামোদর লাগোয়া গলসির নানা গ্রামে গোপনে পোস্ত চাষ করা হয়। এই সব ক’টি এলাকার কেন্দ্রস্থলে পানাগড়। তা ছাড়া উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগকারী অন্যতম রাস্তা পানাগড়–দুবরাজপুর রাজ্য সড়ক ও কলকাতা-দিল্লি ২ নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগকারী স্থানও হল পানাগড়ের দার্জিলিং মোড়। এখান থেকে রাজ্যের নানা প্রান্তে তথা ভিন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে সুবিধা হয় পাচারকারীদের। তাই পাচারের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বার বার উঠে আসে পানাগড়ের নাম।

পুলিশ জানায়, অনেক সময়েই দেখা যায় পঞ্জাব-সহ ভিন রাজ্যের নানা প্রান্তের ট্রাক চালকেরা নানা দরকারে এ রাজ্যে আসেন। ফেরার সময় গোপনে পোস্তর খোল সংগ্রহ করে ফিরে যান। আবার পানাগড়ে পাচারকারীদের লুকিয়ে রাখাটাও অনেক সহজ বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা।

পুলিশের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘কড়া নজরদারি রয়েছে। তাই মাদকপাচারকারীরা বার বার ধরা পড়ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE