এখনও ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হয়নি। তার আগে নির্বাচিত সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছে পঞ্চায়েত দফতর। সেই প্রশিক্ষণে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এলেও এখনও পর্যন্ত অনুপস্থিত বিজেপির সদস্যেরা। ইতিমধ্যে ১০ হাজার নির্বাচিত সদস্যের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। অথচ বিজেপির সদস্যরা যাননি।
নির্বাচিত সদস্যদের প্রশিক্ষণ সরকারের আয়োজিত। তবে কেন নেই বিজেপি? দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘‘ওখানে রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ চলছে!’’ অভিযোগ উড়িয়ে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আমার আমন্ত্রণ রক্ষা করে একদিন দিলীপবাবু এসে দেখুন এখানে উৎকর্ষতা কতটা গভীরে। তাঁকে বলব, এমন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে না জেনে কটুক্তি করবেন না।’’ পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের বক্তব্য, শিবিরে পঞ্চায়েত পরিচালনার জন্য তাত্ত্বিক এবং প্রয়োগ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘পঞ্চায়েতের কাজকর্ম কী ভাবে সহজে করা যায়, তার প্রশিক্ষণই দেওয়া হয়। যা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জানা জরুরি।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, দল ভাঙানোর আশঙ্কা থেকে দলীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ থেকে দূরে রাখছে বিজেপি। তা মানছেন দিলীপবাবুও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠাব না। ভাঙানোর জন্য ডাকছে!’’ এখনও বহু জায়গায় জয়ীদের শংসাপত্র দেওয়া হয়নি। বোর্ড গঠন হয়নি। তার আগে কেন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সেই প্রশ্নও তুলেছেন দিলীপবাবু।
ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে সাড়ে ছ’হাজার আসনে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েক জন দলবদল করে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে যাতে তাঁদেরকে তৃণমূল দলে টানতে না পারে, সে কারণে নির্বাচিতদের প্রতিবেশী রাজ্যেও পাঠিয়ে রেখেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। গত ১৬ জুলাই থেকে সব ক’টি জেলাতেই পঞ্চায়েতের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ৩১ অগস্ট পর্যন্ত চলার কথা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীদের অবশ্য এই প্রশিক্ষণের বাইরে রাখা হয়েছে।
সরকারের আয়োজিত প়ঞ্চায়েতের প্রশিক্ষণকে ‘রাজনৈতিক’ বলে আখ্যা দিয়ে জয়ীদের দূরে রাখলেও রাজ্যের সংসদীয় গণতন্ত্রের রাজনীতিতে বিজেপি’র আগ্রহ কম বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের। বিধানসভায় রাজ্য সভাপতি-সহ বিজেপির তিন জন বিধায়ক রয়েছেন। অথচ তাঁরা প্রশ্নোত্তর, দৃষ্টি আকর্ষণ পর্বে কার্যত অংশ নেন না। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভার অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। এমনকি, প্রশ্নোত্তর-পর্বে ঠিক উত্তর না দেওয়ায় মন্ত্রীদেরও ভর্ৎসনা করেছিলেন তিনি। অথচ বিজেপির অংশগ্রহণ কার্যত নেই। বছর দুয়েকের বেশি হয়ে গেলেও বিধানসভায় ‘অতিরিক্ত’ দু-একটি প্রশ্ন করেছেন নাগরাকাটার বিধায়ক মনোজ টিগ্গা। ঘনিষ্ঠমহলে দিলীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘বাকি বিরোধীরা ইন্ডোরে আছে। আমরা আউটডোরে!’’ যার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন, এ রাজ্যের বিজেপি মাঠে-ময়দানে থাকলেও সংসদীয় রাজনীতিতে কি তাদের আস্থা নেই?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy