লক্ষ্য ছিল প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। কিন্তু তার জন্য দুই যুযুধান দলের দুই শীর্ষ নেতা এমন অস্ত্র প্রয়োগ করে বসলেন, যা আসলে ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এল নিজেদের দিকেই! তৃণমূলের পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও বিজেপি-র দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে শুক্রবার অস্বস্তি তৈরি হল তাঁদের নিজ নিজ শিবিরেই।
বিজেপি-র মঞ্চ থেকে মুকুল রায় তাঁর পুরনো দলকে নিশানা করার পরে জবাব দেওয়ার জন্য তৃণমূল ভবনে বসেছিলেন মহাসচিব পার্থবাবু। সেখানেই মুকুলকে বিঁধে তাঁর মন্তব্য, ‘‘জনপ্রতিনিধি কেনাবেচা থেকে শুরু করে নানা নোংরা কাজ করেছেন, দলকে না জানিয়ে চৌর্যবৃত্তি করতেন। অনেক জনপ্রতিনিধিদের এটা পাইয়ে দেব, ওটা পাইয়ে দেব বলে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর মুখে এ সব কথা মানায় না!’’
পার্থবাবুর এমন মন্তব্য শুনেই বিরোধী বাম ও কংগ্রেস নেতারা বলছেন, তৃণমূল যে বিরোধীদের দল ভাঙিয়েছে, মহাসচিবই তা কবুল করে নিলেন! প্রশ্ন উঠছে, মুকুল ওই কাজ করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে। তখন তা হলে পার্থবাবুরা কিছু বলেননি কেন? তা ছাড়া, সংগঠনের রাশ মুকুলের হাত থেকে চলে যাওয়ার পরে স্বয়ং পার্থবাবু এবং যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেও তৃণমূল ভবনে জনপ্রতিনিধিদের দলবদল ঘটেছে। তা হলে সেই বদলও কি কেনাবেচা? নাকি স্বেচ্ছায়?
তৃণমূল ভবনে পার্থবাবু অবশ্য প্রশ্নোত্তরের অবকাশ দেননি। তবে সাধারণ ভাবে তাঁর দাবি, মুকুল দলকে না জানিয়েই অনেক অনৈতিক কাজ করতেন। মহাসচিবের মন্তব্য, ‘‘এখন তৃণমূলকে লিমিটেড কোম্পানি বলছেন। দু’মাস আগেও সেই কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন।’’ তাঁর দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সহকর্মীদের বিশ্বাস করেন আর তার সুযোগ মুকুল নিয়েছেন।
বিজেপি শিবিরে আবার বিড়ম্বনা বাড়িয়েছেন খোদ রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে এ দিন দলের সভায় তিনি বলেন, ‘‘এখনও যাঁরা তৃণমূলের পানাপুকুরে আছেন, তাঁদের বলছি পবিত্র গঙ্গায় আসুন। দরজা খোলা। ওই চোর নেতা-মন্ত্রীদের পিছনে আর চামচাগিরি করবেন না। পরে নাকে খৎ দিয়ে আসতে হবে। ভুবনেশ্বর, পটনার টিকিট কাটার আগে এ দিকে চলে আসুন!’’ যা শুনে বিরোধীদের প্রশ্ন, তার মানে কি বিজেপি-তে যোগ দিলে কেলেঙ্কারি থেকে বাঁচার রাস্তা করে দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন দিলীপবাবু? যে ভাবে ‘ছা়ড়’ পাচ্ছেন মুকুল?
দিলীপবাবু দল ভাঙানোর প্রসঙ্গও তুলেছেন এ দিন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘উনি (মমতা) বলছেন, বিজেপি দল ভাঙাচ্ছে। আপনার অর্ধেক বিধায়ক, পঞ্চায়েত সদস্য, পুরসভার কাউন্সিলর সব কোথা থেকে এল? পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়ে বা কিনে এনেছেন। যাকে দিয়ে করিয়েছিলেন, সেই মুকুল রায় এখন আমাদের দলে! এর পরে আমরা যে জেলায় যাব, তৃণমূলকে শুইয়ে দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy