Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা রক্ষায় ফের বার্তা পার্থর

পড়ুয়াদের অবাস্তব দাবির কাছে নতিস্বীকার না করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের পরামর্শ দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আর প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে ঘেরাও করে রাখাটাও যে দাবি আদায়ের সঠিক পথ নয়, এ দিন স্পষ্ট করে সে কথাও জানিয়েছেন তিনি।

উচ্চশিক্ষা নিয়ে এক আলোচনাচক্রে  যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার শহরে।—নিজস্ব চিত্র।

উচ্চশিক্ষা নিয়ে এক আলোচনাচক্রে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার শহরে।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৩
Share: Save:

পড়ুয়াদের অবাস্তব দাবির কাছে নতিস্বীকার না করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের পরামর্শ দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আর প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে ঘেরাও করে রাখাটাও যে দাবি আদায়ের সঠিক পথ নয়, এ দিন স্পষ্ট করে সে কথাও জানিয়েছেন তিনি।

শনিবার উচ্চশিক্ষায় উৎকর্ষ সংক্রান্ত একটি আলোচনাচক্রে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষাক্ষেত্রে গণতন্ত্র বজায় রাখা যেমন দরকার, শিক্ষকদের সম্মান করাও তেমন জরুরি।’’ বেশ কিছু দিন ধরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের ‘অগণতান্ত্রিক’ আন্দোলন, ঘেরাও রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন পার্থবাবু। রাজ্যপাল তথা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্যও বার বার কড়া ভাষায় পড়ুয়াদের এই ধরনের আচরণের নিন্দা করেছেন। এ দিনও শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘দাবি আদায়ের জন্য কাউকে লাগাতার ঘেরাও করে রাখাটা ঠিক নয়।’’

ঘটনাচক্রে শিক্ষামন্ত্রী যখন এ কথা বলছেন, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার ও কয়েক জন আধিকারিক শুক্রবার রাত থেকে তখনও পর্যন্ত এক দল পড়ুয়ার ঘেরাওয়ের কবলে। সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটেছে। কখনও ক্লাসে হাজিরা যথেষ্ট না থাকলেও পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিতে, কখনও পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগে, কখনও আবার টেস্টে ফেল করলেও পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিতে। ছাত্র-ভর্তির মরসুমে ছাত্র সংসদের দাপট আবার অন্য মাত্রা পায়। অনেক ক্ষেত্রেই পড়ুয়াদের আন্দোলন শিক্ষক নিগ্রহ পর্যন্ত গড়ায়। মাসকয়েক আগেই বড়িশা বিবেকানন্দ কলেজে গিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য সুগত মারজিতকে শারীরিক ভাবেও হেনস্থা হতে হয়েছিল।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন ‘হোক কলবর’-এর বিরোধিতা করে এ দিনের অনুষ্ঠানে আইআইইএসটি-র অধিকর্তা অজয় রায় বলেন, ‘‘ওই স্লোগানটি ‘ফুলিশ’। কলরব না করে অন্য দিকে মন দিলে আরও উন্নতি হতো।’’

তৃণমূল সরকার দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পরে পার্থবাবু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘সুশাসনের’ প্রয়োজনের উপরে জোর দিতে চেয়েছেন। সম্ভবত সেই কারণে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলার প্রশ্নকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে চান। এক প্রবীণ শিক্ষকের কথায়, ‘‘এ রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের পিছনে প্রায় সব সময়েই রাজনৈতিক প্রশ্রয় থাকে। যখন যে দল শাসন ক্ষমতায় থেকেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের ছাত্র সংগঠন দাপট দেখিয়েছে। সেখান থেকে সরে এসে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী যদি শান্তি-শৃঙ্খলাকে গুরুত্ব দিতে চান, তবে রাজ্যের শিক্ষার পক্ষে তা
খুবই মঙ্গলজনক।’’

শৃঙ্খলা যে কেবল ছাত্রছাত্রীদের বিষয় নয়, শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন, এ দিনের অনুষ্ঠানে সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন পার্থবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘ক্লাসে পড়ুয়াদের উপস্থিতি অনেক ক্ষেত্রেই ৭৫ শতাংশ হয় না। কিন্তু শিক্ষকদেরই অনেকে ৭৫ শতাংশ ক্লাস করেন না।’’ কোনওটাই ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন পার্থবাবু। এ দিনের আলোচনায় উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য গবেষণায় বেসরকারি বিনিয়োগের প্রয়োজনের দিকটি তুলে ধরেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। তিনি বলেন, ‘‘গবেষণার ক্ষেত্রে আরও বেশি বেসরকারি পুঁজি বিনিয়োগ দরকার। এর জন্যে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE