Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

১৩ ঘণ্টার ব্যর্থ অপেক্ষা, বিনা চিকিত্সায় পিজি থেকে বাড়ি ফিরলেন রোগী

রোগ কি শুধু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের? না কি সংক্রমণ সর্বত্রই?

যন্ত্রণা: এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসার অপেক্ষায় বাদল বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

যন্ত্রণা: এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসার অপেক্ষায় বাদল বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৪
Share: Save:

রোগ কি শুধু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের? না কি সংক্রমণ সর্বত্রই?

বুধবার দিনভর রাজ্যের একমাত্র সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, ছবিটা সেখানেও কিছু আলাদা নয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার’ না থাকায় মুমূর্ষু রোগীকে ফেলে রাখা হয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্সে। মঙ্গলবার সেখানেই ভর্তি হতে গিয়ে চূড়ান্ত হয়রান হয়েছিলেন বছর চল্লিশের মনোরমা কয়াল। এ দিন এসএসকেএমের ইমার্জেন্সিতেও ধরা পড়ল রোগী ভোগান্তির একই রকম ছবি।

মাথার গুরুতর চোট নিয়ে এসএসকেএমের ইমার্জেন্সি বিভাগের বাইরে ধুঁকছিলেন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা, বছর চুরাশির বাদল বন্দ্যোপাধ্যায়। নাকে নল গোঁজা, মাথায় মোটা ব্যান্ডেজ। যন্ত্রণায় এক মুহূর্ত সোজা হয়ে বসতে পারছেন না। দু’পাশে বসে বৃদ্ধকে শক্ত করে ধরে আছেন বড় নাতি অপূর্ব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মেজো ছেলে মৃণাল। বাকিরা ছুটে বেড়াচ্ছেন রোগীর শয্যার ব্যবস্থা করতে। বহু চেষ্টার পরেও অবশ্য শয্যার ব্যবস্থা হয়নি। আজ, বৃহস্পতিবার ফের আসবেন ভেবে বাদলবাবুকে নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে গিয়েছেন আত্মীয়েরা। তার আগে সারা দিন কী ঘটেছিল, শোনা যাক তাঁদের মুখ থেকেই।

বাবুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (বাদলবাবুর বড় ছেলে):

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা। এ দিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। মোট ১৩ ঘণ্টা ঘুরেছি। এই বিল্ডিং, ওই বিল্ডিং করে বেড়িয়েছি। এক জন বুড়ো লোককে নিয়ে আর কত ক্ষণ ছুটব? শেষে হাতে-পায়ে ধরে বলেছি, যেখানে হোক ভর্তি করিয়ে বাবাকে বাঁচান। হাসপাতাল সটান বলে দিল, আপনাদের টিকিটে চিকিৎসক হয় বেডে, অথবা স্ট্রেচারে ভর্তি নিতে লিখে দিয়েছেন। মাটিতে তো নেওয়া যাবে না।

অপূর্ব বন্দ্যোপাধ্যায় (বাদলবাবুর বড় নাতি):

রবিবার দাদু বাথরুমে পড়ে যান। মাথায় গুরুতর চোট লাগে। হাওড়া গ্রামীণ হাসপাতাল রেফার করে দেয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মেডিক্যাল কলেজ বলল, দাদুর রোগের চিকিৎসা একমাত্র বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেসে হবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেখানে নিয়ে আসি। ওই রাতে সিটি স্ক্যান করাতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ ছুটে বেড়াতে হয়েছে। সিটি স্ক্যান করানোর পরে বলা হল, রাত হয়ে গিয়েছে। তাই আর ভর্তি করানো যাবে না। এ দিন সকাল ৯টায় আবার তাই বাঙুর ইনস্টিটিউটের সামনে লাইন দিই। ডাক্তারবাবু দেখে বললেন, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। অস্ত্রোপচার করাতে হবে। দ্রুত এসএসকেএমের ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করার জন্য টিকিটে লিখে দিলেন তিনি।

কিন্তু, ভর্তি করাতে পারলাম কই! অন্তত ৪০ বার ইমার্জেন্সি বিল্ডিং আর নীচের টিকিট কাউন্টারের মধ্যে ছুটে বেড়ালাম। এক সময়ে টিকিটে লিখে দিল, ভর্তি হবে। কিন্তু ইমার্জেন্সির ‘মেল’ ওয়ার্ডের নার্সেরা বলে দিলেন, শয্যা নেই। সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতাল লিখে দিল, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও যদি শয্যা না পাই? সামনেই আমার মাধ্যমিক শুরু। কত দিন এ ভাবে ঘুরতে হবে জানি না।

রঘুনাথ মিশ্র (এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার):

এমন ঘটনা রোজ ঘটছে। প্রতিদিন গড়ে এখানে আট হাজার রোগী আসছেন। শয্যা না থাকলে কী করব?

প্রদীপ মিত্র (স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা):

বারবার ফোন করা হলেও এ দিন তিনি ধরেননি। এসএমএস করলেও উত্তর আসেনি।

শেষ পর্যন্ত এ দিন দুপুরে কলকাতা মেডিক্যালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের তৎপরতায় ভর্তি হতে পেরেছেন মনোরমা কয়াল। তাঁর পরিবারের প্রশ্ন, যাঁরা সুপার পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন না, তাঁদের পরিণতি তা হলে কী হয়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE