Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নষ্ট হচ্ছে রক্ত, তবু সামান্যই পাচ্ছেন রোগী

ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত মজুত রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। প্রতি দিন অজস্র মানুষ সেই রক্ত নিতে ভিড়ও করছেন। তা সত্ত্বেও রোগীর চাহিদা মতো রক্ত ও রক্তের উপাদান দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ! রোগীর ৬ ইউনিট রক্ত বা উপাদান দরকার হলে ব্লাড ব্যাঙ্ক দিচ্ছে এক বা দুই ইউনিট।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৮ ০২:১৩
Share: Save:

ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত মজুত রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। প্রতি দিন অজস্র মানুষ সেই রক্ত নিতে ভিড়ও করছেন। তা সত্ত্বেও রোগীর চাহিদা মতো রক্ত ও রক্তের উপাদান দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ! রোগীর ৬ ইউনিট রক্ত বা উপাদান দরকার হলে ব্লাড ব্যাঙ্ক দিচ্ছে এক বা দুই ইউনিট। কর্মীরা মৌখিক ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন এর বেশি মিলবে না, সঞ্চয় কম! নিট ফল হিসাবে জমা থাকতে থাকতে সেই রক্ত ও উপাদানের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

কর্মসংস্কৃতি তলানিতে এসে ঠেকায় রাজ্যের প্রধান এবং পূর্বাঞ্চলের ‘মডেল’ হিসাবে পরিচিত মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে এই ‘অভাবনীয়’ কাণ্ড মাসের পর মাস হয়ে চলেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। দফতরের রক্ত নিরাপত্তা বিভাগের এক কর্তার কথায়, ‘‘মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কের একটি গোষ্ঠী প্রথমে রক্তদান শিবিরের অনুমতি দিতেই চাইত না। আমরা কড়া হতেই এখন শিবির করছে কিন্তু শিবিরে পাওয়া রক্তের বাধ্যতামূলক সব ক’টি পরীক্ষা করে তা রক্ত নিতে আসা লোকজনকে দিতে যেটুকু পরিশ্রম করতে হয় সেটা করতেও তারা নারাজ। ফলে রক্ত জমে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’

যেমন, কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের নথি অনুযায়ী, এসএসকেএমে ভর্তি ছিলেন ইলিয়াস শেখ নামে এক রোগী। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর বাড়ির লোক ৬ ইউনিট হোল ব্লাড নিতে এসেছিলেন। তাঁদের দেওয়া হয় মাত্র ৩ ইউনিট। ওই দিনই এনআরএসে ভর্তি আসিদা বিবি-র আত্মীয়রা ৫ ইউনিট হোল ব্লাড নিতে আসেন। তাঁকে দেওয়া হয় মাত্র ১ ইউনিট। ৩ মার্চ এসএসকেএমে ভর্তি তপন দত্তের জন্য ৬ ইউনিট এ-পজিটিভ রক্ত নিতে এসেছিলেন বাড়ির লোক। তাঁদের দেওয়া হয়েছে মাত্র ২ ইউনিট। ২০ ফেব্রুয়ারি এনআরএসে ভর্তি বিশ্বজিৎ দাসের জন্য ৪ ইউনিট হেল ব্লাড নিতে এসেছিলেন আত্মীয়েরা। দেওয়া হয় ১ ইউনিট। এই রকম অজস্র উদাহরণ রয়েছে। অথচ, ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ মার্চের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে ১০৬৫ ইউনিট হোল ব্লাড মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা যখন দেখতে পাচ্ছেন যে, বিপুল পরিমাণ হোল ব্লাড নষ্ট হতে বসেছে তখন সেগুলি দেওয়া হয়নি কেন? কেন ছয় বা পাঁচ ইউনিটের জায়গায় ১ বা ২ ইউনিট রক্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে? এর কোনও উত্তর দিতে পারেননি কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা কুমারেশ হালদার ও রক্ত পৃথকীকরণ ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান ধ্রুব মণ্ডল। ব্লাড ব্যাঙ্কের নথি অনুযায়ী, শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে ৫১২ জন রক্ত নিতে এসেছিলেন। সাধারণত ব্লাড ব্যাঙ্কে এক-এক জন গড়ে ৩-৪ ইউনিট রক্ত নিতে আসেন সেই চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যেককে দিলে ওই দেড় মাসে কোনও হোল ব্লাড-ই মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কথা নয়।

রাজ্যের ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির দায়িত্বে থাকা কর্তা সুরেন্দ্র গুপ্তা জানান, রক্ত বেশি হলে তা অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা। সেটাও কেন করা হয়নি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মার্চ মাসে ওই ব্লাড ব্যাঙ্কে এখন পর্যন্ত ৯১ ইউনিট ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ২৮৯ ইউনিট প্লাজমাও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হয়েছে। প্লাজমা সংরক্ষিত রাখা যায় এক বছর। তা ছাড়া, ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে একটি বেসরকারি সংস্থা নিয়মিত প্লাজমা কিনে নেয়। তা সত্ত্বেও কী করে এত প্লাজমা মেয়াদ উত্তীর্ণ হল তা খতিয়ে দেখছে স্বাস্থ্য দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE