Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

শেরপা হতে চায় না পেম্বার ছেলে

উদ্বেগ গ্রাস করেছে দার্জিলিঙের এই শেরপা পরিবারটিকে। পরবর্তী প্রজন্ম শেরপার পেশায় আসার উৎসাহ হারিয়েছেন।

পেম্বা শেরপা

পেম্বা শেরপা

শান্তশ্রী মজুমদার
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০৪:০১
Share: Save:

প্রায় ১৮ বছর ধরে পর্বতারোহণের সঙ্গে যুক্ত পেম্বা শেরপার পরিবার। বাড়ির তিন ছেলেই সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গে নিজেদের পরিশ্রমের ছাপ রেখেছেন। একবার নয়, বহুবার। এরই মধ্যে কারাকোরাম পর্বতমালায় পেম্বা নিখোঁজ হয়ে গেলেন। তার পরেই উদ্বেগ গ্রাস করেছে দার্জিলিঙের এই শেরপা পরিবারটিকে। পরবর্তী প্রজন্ম শেরপার পেশায় আসার উৎসাহ হারিয়েছেন।

পাহাড় শিখরের দিকে টান শেরপা পরিবারের ছোট থেকেই। সেখানে ওঠার পথে তাঁদেরই অনেক সময় বয়ে নিয়ে যেতে হয় পর্বতারোহীদের জিনিসপত্র। পথ দেখাতে হয়। তাঁবু ফেলতে হয়। কঠোর পরিশ্রমের কাজটা তাঁদেরই। অভিযাত্রীরা অসুস্থ হলে তাঁকে নামিয়ে আনার দায়িত্বও তাঁদের। তাতে পথের শ্রম অনেক বাড়ে। বিপদের ঝুঁকিও বাড়ে। পাহাড়ের শেরপা পরিবারগুলোর বক্তব্য, যেটুকু পারিশ্রমিক মেলে, তা যথেষ্ট না। তার উপরে এই প্রথম নয়। এর আগেও শেরপাদের অনেকে নিখোঁজ হয়েছেন বা মারা গিয়েছেন।

তাই অক্টোবরে মানাসলু শৃঙ্গের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা পেম্বার ভাই তাশি শেরপার, কিন্ত তিনি এবং তাঁর স্ত্রী দাওয়া কিপা জানালেন, ‘‘দাদার দুর্ঘটনার পর আমরা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। নেপালের ওই শৃঙ্গে যাব কি না, ভাবছি।’’

পেম্বা নিজেও চাননি ছেলে ফুরতেম্বা পাহাড়ে উঠুক। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ফুরতেম্বার কথায়, ‘‘বাবা চাইতেন, আমরা বড় হয়ে অন্য কোনও কাজ করি। পড়াশোনা করে, ছবি এঁকে বড় হই।’’ পেম্বার ছোট ভাই তাশির ছেলেও পেম্বা সিরিংও পর্বতারোহণের দিকে যেতে আগ্রহী নয়। সেজ ভাই মিন্মা শেরপার ছেলে পাসাং রিটা শেরপা ট্রেকিং করলেও শৃঙ্গজয়ের দিকে পা বাড়াবে কি না, তা স্পষ্ট করেনি পরিবার।

তাশি জানাচ্ছেন, শেরপাদের জীবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু তাঁদের কোনও স্বীকৃতি নেই। এর আগে ছন্দা গায়েনের সঙ্গে এভারেস্ট অভিযানে বেরিয়ে প্রাণ হারান দাওয়া উংচুক। তাঁর পরিবারের জন্য সরকারি চাকরি ঘোষণা হয়েছে। তবে পেম্বার পরিবারের সঙ্গে এখনও প্রশাসনের কেউ যোগাযোগ করেননি। পেম্বার স্ত্রী ছকপা শেরপার কথায়, ‘‘আমার তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনা আছে, সংসার কী ভাবে চালাব বুঝতে পারছি না।’’

পায়ে ব্যথা নিয়েও সংসারের জন্য পেম্পা এই অভিযানে গিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের পাশে কেউ না দাঁড়ালে, শেরপাদের অনেক পরিবারই পাহাড় থেকে দূরে সরে যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE