ব্যারাজে স্নান।
দুর্ঘটনা হলে তবে টনক নড়ে। কিন্তু যেই দুর্ঘটনার স্মৃতি লোকে ভুলে যায়, সরকারি নজরদারিও সরে যায়।
শীতের সময় দেখা যায়, দামোদরের পাড় সংলগ্ন এলাকায় বাড়ে বনভোজনের ধুম। বাইরে থাকা আসা মানুষজন নদীর জলে নেমে স্নানও করছেন। কিন্তু বিপজ্জনক জায়গায় নামতে বারণ করার মতো কেউ নেই। ফলে অবাধে নদীর বিভিন্ন জায়গায় চলছে অবাধে জলে স্নান। এই ছবি শুধু দুর্গাপুর সংলগ্ন দামোদরেই নয়। রণডিহাতেও এক ছবি দেখা যায়।
অথচ, বছরের বিভিন্ন সময়ে দামোদরের জলে নেমে তলিয়ে গিয়েছেন অনেকে। দুর্ঘটনার পরে কিছু দিন দামোদর পাড় সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের তরফে নজরদারিও চালানো হয়। কিন্তু কয়েক দিন পরে তা-ও এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। আবার শুরু হয়ে যায় দামোদরে দাপাদাপি।
ডিসেম্বর শুরু হতেই বনভোজনের মরসুম পড়ে যায়। আর নদীর পাড় তো পিকনিকের এক রকম আদর্শ জায়গা। পিকনিকের পাশাপাশি নদীর জলে স্নান বা জলে নেমে খেলা করা—সবই হয়। আর তাতেই অনেক সময় বিপদ ঘটে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগেই লকগেটের নীচে এক যুবকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। যদিও তাঁর নাম পরিচায় কিছু জানা যায়নি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনলজির ভামসী কৃষ্ণ নামের এক ছাত্র স্নান করতে নেমে দামোদরের লকগেটের নীচে তলিয়ে গিয়ে মারা যায়। কলেজেরই বেশ কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে তিনি দামোদরে ঘুরতে গিয়েছিলেন। গত বছর ওই একই জায়গায় দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি কলেজের চার ছাত্র জলে ডুবে মারা যান।
ঢাকা পড়েছে নিষেধাজ্ঞার বোর্ড।
এই ঘটনাগুলি ছাড়াও প্রায়ই দামোদরের লকগেটের নীচে বিভিন্ন যুবক বা ছাত্রের দেহ উদ্ধার হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বছর চার কলেজ ছাত্রের মৃত্যুর পরে দামোদরের বিভিন্ন জায়গায় মাইকে করে প্রচার চালায় পুলিশ। সেখানে নদীতে নামা বিপজ্জনক বলে ঘোষণাও করা হয়। কিন্তু সে সব কয়েকদিন পরেই বন্ধ হয়ে যায়। কোনও নজরদারি না থাকায় খুব সহজেই নদীতে নেমে স্নান বা খেলা চলছেই।
দামোদর সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, বহু মানুষ পিকনিকের আনন্দে মেতে উঠেছেন। কেউ কেউ নদীর জলে নেমে স্নানও সেরে নিচ্ছেন। তা দেখাশোনার কেউই নেই। লাউদোহা এলাকা থেকে পিকনিক করতে এসেছিলেন বেশ কয়েকজন যুবকের একটি দল। তাঁদের কেউ কেউ জলে নেমেছেন।
এমনই একটি দলের এক সদস্য রক্তিম মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করা হয়, কেন জলে নেমেছেন? তাঁর সহাস্য উত্তর, ‘‘কেউ তো মানা করেনি।’’
স্থানীয় বাসিন্দা জগু দাঁ, বাবন দাঁ-রা জানান, বাইরে থেকে আসা মানুষজন জানেন না কোথাও জল বেশি। তাই সেই জায়গায় গিয়ে তলিয়ে যান অনেকে। লকগেটের নীচের যে অংশে জল পড়ে, সেই জায়গায় বালি সরে গিয়ে অনেকটা গর্ত তৈরি করেছে। জলের উপর থেকে তা বোঝা যায় না। তাঁরা বলেন, ‘‘জলে নেমে স্নান করতে করতে অনেকেই ওই জায়গায় পৌঁছে যান। ফলে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি হয়ে যায়।’’ তাঁদের অভিযোগ, এই চত্বরে কোনও নজরদারির ব্যবস্থা নেই। দামোদর পাড় চত্বরে একটি নিষেধাজ্ঞা বোর্ড লাগানো থাকলেও তা যে কেউ মানেন না, সে নদীর পাড়ে গেলেই বোঝা যায়।
এ বিষয়ে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জানান, সংস্থার বেশি কর্মী না থাকার কারণে নজরদারি সম্ভব হয় না। তবে দুর্গাপুর মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিভিসির সঙ্গে আলোচনা করে নজরদারির ব্যবস্থা করা হবে।
বিকাশ মশানের তোলা ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy