Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আবার! বিষ-জল খেতে বাধ্য হচ্ছে বলাগড়

বেশ কয়েক বছর স্বস্তিতে ছিলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু ফের বলাগড়ের ভূগর্ভস্থ জলে ফিরে এল আর্সেনিক-বিষ।

নিরুপায়: লাল রঙে চিহ্নিত বলাগড়ের মহীপালপুর পঞ্চায়েতে আর্সেনিক-যুক্ত নলকূপ। তবু জলপান চলছেই। ছবি: সুশান্ত সরকার

নিরুপায়: লাল রঙে চিহ্নিত বলাগড়ের মহীপালপুর পঞ্চায়েতে আর্সেনিক-যুক্ত নলকূপ। তবু জলপান চলছেই। ছবি: সুশান্ত সরকার

প্রকাশ পাল ও সুশান্ত সরকার
বলাগড় শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৮ ০২:৩৬
Share: Save:

বেশ কয়েক বছর স্বস্তিতে ছিলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু ফের বলাগড়ের ভূগর্ভস্থ জলে ফিরে এল আর্সেনিক-বিষ।

সম্প্রতি জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ব্লকের নলকূপগুলির জল পরীক্ষা করে আর্সেনিকের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে। ওই দফতর জানায়, শ্রীপুর-বলাগড়, মহীপালপুর, সোমরা-১ ও ২, চরকৃষ্ণবাটী এবং জিরাট পঞ্চায়েতের শ’খানেক নলকূপের জলে আর্সেনিক মিশে রয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশে ওই নলকূপগুলি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের তরফে। সেগুলিতে লাল রং করে ‘বিপদ সঙ্কেত’ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর পরেও কিছু জায়গায় গ্রামবাসীরা বিষ-জলই খাচ্ছেন।

মহীপালপুর পঞ্চায়েতের সরগড়িয়া গ্রামের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সামনে এমনই একটি লাল রঙের নলকূপের জল ব্যবহার করছেন গ্রামবাসী। তাঁদের মধ্যে গৌর মাঝি, তপতী মাঝিরা বলেন, ‘‘আমরা নিরুপায়। গ্রামে তিনটি মাত্র নলকূপ। একটা বন্ধ থাকলে চলে?’’ উপপ্রধান সৌরভ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই পঞ্চায়েতে ২৬৭টি নলকূপের সাতটিতে আর্সেনিক মিলেছে। সেগুলি ব্যবহার না-করতে গ্রামবাসীদের সতর্ক করা হয়েছে।’’ বিডিও সমিত সরকার বলেন, ‘‘ব্লকের ছ’টি পঞ্চায়েতের একশোর বেশি নলকূপের জলে আর্সেনিক মিলেছে। জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।’’ জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানা‌ন, গ্রামে সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে। ওই সব জায়গায় নতুন নলকূপ বসানোর পরিকল্পনা আছে। পাইপলাইনের মাধ্যমেও পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।

বলাগড় ছাড়াও হুগলি জেলার ১৮টি ব্লকের মধ্যে অন্তত ১০টির (গোঘাট, ধনেখালি, পান্ডুয়া, হরিপাল, খানাকুল-১, খানাকুল-২ ইত্যাদি) বেশ কিছু এলাকার ভূগর্ভস্থ জলে যে আর্সেনিক লুকিয়ে রয়েছে, বেশ কয়েক বছর আগে তার প্রমাণ পেয়েছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। সংশ্লিষ্ট নলকূপগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই দফতর জানিয়েছে, নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে জল পরীক্ষা চলছিলই। এতদিন অন্যত্র আর্সেনিক না-মিললেও বলাগড়ে ফের তা ফিরে আসায় তারা চিন্তিত।

কেন বলাগড়ে ফিরল আর্সেনিক? আর্সেনিক দূষণ নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, অতিরিক্ত জল তুলে ফে‌ললে ভূগর্ভে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তখন সেই জায়গায় অক্সিজেন ঢোকে। এর ফলে, খনিজ দ্রব্য থেকে আর্সেনাইট বা আর্সেনেট উপাদান পৃথক হয়ে জলে মেশে। এই দুই উপাদানেই আর্সেনিক থাকে।

গ্রামীণ এলাকায় ওই দফতর জল পরীক্ষা করলেও পুরসভাগুলি এ ব্যাপারে কতটা সচেতন, সে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, ভূগর্ভস্থ জ‌ল যে নিয়মিত পরীক্ষা হয় না, বিভিন্ন পুর-কর্তৃপক্ষ তা মানছেন। তাঁরা জানান, পুরসভার নিজস্ব ল্যাবরেটরি বা অন্য পরিকাঠামো নেই। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক আধিকারিক জানান, পুরসভা যোগাযোগ করলে সাহায্য করা হবে। কিন্তু করে কে?

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arsenic Water Balagarh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE